করোনাভাইরাস: কোয়ারেন্টিন ও মিথ্যা রটনা নিয়ে সতর্ক করল সরকার
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বিশ্বজুড়ে মহামারীর আকার পাওয়া নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কোয়ারেন্টিনের শর্ত মেনে চলার পাশাপাশি মিথ্যা তথ্য দেওয়া বা গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে সরকার। এ ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের মধ্যে কেউ ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন’ ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ওই আইনে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে বা নির্দেশনা না মানলে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকার শাস্তির বিধান রয়েছে।
বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশ ফেরত কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিত ১৪ দিনের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনের শর্ত ঠিকভাবে পালন করছেন না। অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সকলকে বর্ণিত আইন অনুযায়ী এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাচ্ছে। ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে।
ডিসেম্বরের শেষে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়াতে শুরু করা নভেল করোনাভাইরাস এখন ছড়িয়ে পড়েছে ১১৮টি দেশ ও অঞ্চলে। বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় সোয়া লাখে, মৃতের সংখ্যাও ৪ হাজার ৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নভেল করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে ‘মহামারী’ বলার পর বৃহস্পতিবার ‘জনস্বার্থে আইনের প্রয়োগ বিষয়ে এই ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণকে একটি ‘বৈশ্বিক প্রাদুর্ভাব’ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের চলমান প্রস্তুতি এর সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। জনসাধারণের আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নাই।
তবু পরিবর্তনশীল বিশ্ব ও জাতীয় পরিস্থিতির আলোকে সর্বোচ্চ সতর্কতার অংশ হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’-এর কতিপয় ধারা প্রয়োগ করার প্রয়োজন হতে পারে।
ওই আইনে বলা হয়েছে- ধারা-১(চ): বাসগৃহ, অন্যান্য গৃহ, ক্লিনিক, হাসপাতাল এবং রোগ নির্ণয় কেন্দ্র বা কোনো স্থাপনায় সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সেবা দিলে বা কোনো জায়গাকে রোগ সংক্রমণের আধার হিসাবে বিবেচনা করা হলে ওই স্থান বা স্থাপনার বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ধারা-১(জ): সংক্রামক রোগের তথ্য রয়েছে এমন কোনো ব্যক্তির কাছে ওই রোগের বিষয়ে তথ্য চাইতে পারবে অধিদপ্তর।
ধারা-১(ট): সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট হাসপাতাল, অস্থায়ী হাসপাতাল, স্থাপনা বা গৃহে অন্তরীণ (কোয়ারেন্টিন) বা আলাদাভাবে (আইসোলেশন) রাখতে পারবে।
ধারা-১(ত): সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে উড়োজাহাজ, জাহাজ, জলযান, বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহন দেশে আগমন, নির্গমণ বা দেশের অভ্যন্তরে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল নিষিদ্ধ করতে পারবে।
অন্য ধারাগুলোতে বলা হয়েছে- ধারা-১০: সংক্রামক রোগের তথ্য প্রদান (১) যদি কোনো চিকিৎসক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির চিকিৎসার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন এবং ওই রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী ব্যক্তি, কোনো বাসা, প্রাঙ্গণ বা এলাকায় সংক্রামক রোগের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবহিত হন, তা হলে তিনি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জনকে অবহিত করবেন। (২) যদি কোনো বোর্ডিং, আবাসিক হোটেল বা অস্থায়ী বাসস্থানের মালিক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তির যুক্তিসঙ্গত কারণে ধারণা হয় যে, ওই স্থানে বসবাসকারী কোনো ব্যক্তি সংক্রামক রোগে আংক্রান্ত হয়েছেন, তাহলে তিনি অবিলম্বে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন এবং জেলা প্রশাসককে অবহিত করবেন।
ধারা-১১: সংক্রমিত এলাকা ঘোষণা ও প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ- (২) মহাপরিচালক বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর কাছে যদি প্রতীয়মান হয় যে, যথাযথভাবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো সংক্রামক রোগ সীমিত বা নির্মূল করা সম্ভব নয়, তাহলে তিনি সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে বা সংক্রমিত স্থানে অন্য কোনো ব্যক্তির প্রবেশ নিষিদ্ধ, সীমিত বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
ধারা-১৪: রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে আলাদা রাখা (আইসোলেশন)- যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর এমন ধারণা করার কারণ থাকে যে, কোনো সংক্রমিত ব্যক্তিকে আলাদা করা না হলে তার মাধ্যমে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারেন, তাহলে ওই ব্যক্তিকেৃ সাময়িকভাবে অন্য কোনো জায়গায় স্থানান্তর বা বিচ্ছিন্ন করা যাবে।
ধারা-১৮: যানবাহন জীবাণুমুক্ত করার আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা- ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর যদি এমন বিশ্বাস করার যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকে যে, কোনো যানবাহনে সংক্রামক জীবাণুর উপস্থিতি রয়েছে, তাহলে তিনি ওই যানবাহন জীবাণুমুক্ত করতে গাড়ির মালিক বা সত্ত¡াধিকারী বা তত্ত¡াবধায়ককে নির্দেশ দিতে পারবেন।
ধারা-২০: মৃতদেহের সৎকার- (১) যদি কোন ব্যক্তি সংক্রামক রোগে মারা যান বা সংক্রামক রোগে মারা গেছেন বলে সন্দেহ হয়, তাহলে ওই ব্যক্তির মৃতদেহ ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর নির্দেশনা অনুযায়ী দাফন বা সৎকার করা যাবে।
ধারা-২৫: দায়িত্ব পালনে বাধা, নির্দেশ পালনে অসম্মতির অপরাধ ও দЖ (১) যদি কোনো ব্যক্তি (ক) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে তার ওপর অর্পিত কোনো দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধা দেন বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন, এবং (খ) সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের উদ্দেশ্যে মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কোনো নির্দেশ পালনে অসম্মতি জানান, তাহলে তা হবে দÐনীয় অপরাধ। সেজন্য তিনি সর্বোচ্চ তিন মাসের কারাদÐ বা সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদÐ অথবা উভয় দÐে দÐিত হবেন।
ধারা-২৬: মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেওয়ার দÐ- (১) যদি কেউ সংক্রামক রোগ সম্পর্কে ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেন, তাহলে তা হবে একটি অপরাধ। সেক্ষেত্রে তার সর্বোচ্চ ২ মাসের কারাদÐ, বা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদÐ, অথবা উভয় দÐে দÐিত হবেন।