করোনাভাইরাস: আক্রান্তদের একজন সুস্থ হয়ে ফিরেছেন বাড়ি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
এক সপ্তাহ আগে দেশে যে তিনজনকে নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল, সুস্থ হয়ে ওঠায় তাদের মধ্যে একজন বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। শুক্রবার মহাখালীতে আইইডিসিআরের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, তিনজনের মধ্যে দুজনের পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। অর্থাৎ, তাদের শরীরে এখন করোনাভাইরাস নেই। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি পরীক্ষায় তাদের রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছে। পরপর দুবার তাদের পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। পরপর দুবার নেগেটিভ এলে তাদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া যায়। সে অনুযায়ী একজনকে ছুটি দেওয়া হয়েছে এবং তিনি বাড়ি চলে গেছেন।
আরেকজনের পারিবারিক কিছু বিষয় আছে। সেই বাড়ির আরও কিছু মানুষ কোয়ারেন্টিনে আছেন। পরিবারের আরও একজন হাসপাতালে আছেন। তাদের অনুরোধে তাদেরকে হাসপাতালে রেখেছি। আর তৃতীয় একজনের শরীরে এখনও ভাইরাসের সংক্রমণ রয়ে গেছে। পরীক্ষায় এখন তার রিপোর্ট নেগেটিভ আসেনি বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক।
অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশে নতুন করে আর কারও মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। আইইডিসিআর সব প্রস্তুতিই নিয়ে রেখেছে। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে মোট আটজনকে ‘আইসোলেশনে’ রাখা হয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৪ জনের নমুনা তারা পরীক্ষা করেছেন। সব মিলিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে মোট ১৮৭ জনের। তবে ওই তিনজন বাদে নতুন করে কারও শরীরে নভেল করোনাভাইরাসের উপস্থিতি মেলেনি।
নভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে ফেরা মানুষকে বাড়িতে অবস্থান করার জন্য আহ্বান জানালেও অনেকে তা মানছেন না বলে জানান আইইডিসিআরের পরিচালক। তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে সংক্রামক রোগ আইনে সরকার ‘কিছুটা শক্ত পদক্ষেপও’ নিতে পারে।
আমরা চেষ্টা করেছিলাম আমাদের দিক থেকে যাতে কোনো ধরনের আতঙ্ক না ছড়ায়, বিদেশ ফেরতরা যেন সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন না হন। কিন্তু এখন আমরা খেয়াল করছি সরকারের এই সহানুভূতিশীল পদক্ষেপকে সঠিকভাবে ব্যবহার করছেন না। এজন্য সংক্রামক ব্যাধি আইনে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আছে। কিন্তু আমরা সেই আইন প্রয়োগ করতে চাই না। সবাই মিলে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে চাই।
এর আগে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশ ফেরত কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশিত ১৪ দিনের স্বেচ্ছা কোয়ারেন্টাইনের শর্ত ঠিকভাবে পালন করছেন না।
অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সকলকে বর্ণিত আইন অনুযায়ী এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাচ্ছে। ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে।
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইনে সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে সরকারি দায়িত্ব পালনে বাধা দিলে বা নির্দেশনা না মানলে সর্বোচ্চ তিন মাসের জেল ও ৫০ হাজার টাকার শাস্তির বিধান রয়েছে। আর মিথ্যা বা ভুল তথ্য দিলে সর্বোচ্চ ২ মাসের কারাদÐ বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদÐ হতে পারে।
বিদেশফেরত কারও মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া গেলে আইইডিসিআরে সরাসরি না গিয়ে হটলাইনে যোগাযোগের আহ্বান জানান মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, এভাবে যাতায়াতের কারণে রোগটি অন্যের শরীরে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। হটলাইনে ফোন করলে আইইডিসিআরের কর্মীরা বাড়ি গিয়ে নমুনা নিয়ে আসবেন। কারণ আপনাদের কারও মধ্যে যদি সত্যিই এ ভাইরাসের উপস্থিতি থাকে তাহলে সেটা কিন্তু এখানে আসা অন্য আরেকজনের শরীরে সংক্রমিত হতে পারে। শুধুমাত্র আইইডিসিআরে আসা লোকজন আক্রান্ত হবে এমন না। আপনারা যে গণপরিবহন ব্যবহার করেন, আপনাদের সাথে যিনি আসেন, প্রত্যেকেরই ঝুঁকি তৈরি হয়।
দেশের বাইরে সিঙ্গাপুরে পাঁচজন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইতালিতে এর আগে দুজনের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাস ধরা পড়েছিল। তাদের মধ্যে সিঙ্গাপুরের চারজন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। একজনের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন, তার অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
বিশ্বজুড়ে মহামারীর আকার পাওয়া নভেল করোনাভাইরাস গত আড়াই মাসে ছড়িয়েছে বিশ্বের ১১৮টি দেশ ও অঞ্চলে। এ ভাইরাসের প্রভাবে ফ্লুর মত উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে, সেই কভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়েছে বিশ্বের সোয়া লাখের বেশি মানুষ, মৃতের সংখ্যা ৪৬০০ ছাড়িয়ে গেছে।
কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে আইইডিসিআর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বর্ধন জং রানাসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।