এফআর টাওয়ারে অব্যবস্থাপনার চিত্র এলো গণশুনানিতে
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
চারদিন আগে বনানীর এফআর টাওয়ারের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ভবনটির অষ্টম তলার স্পেক্ট্রা এসএন নামের একটি বায়িং হাউস থেকে হয়েছিল বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি।
গতকাল রোববার এক গণশুনানিতে ওই ভবনের বিভিন্ন তলায় থাকা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটির প্রধান মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান এ কথা জানালেও স্পেক্ট্রা বায়িং বলছে ভিন্ন কথা।
প্রতিষ্ঠানটির সহকারী ব্যবস্থাপক মো. কফিল উদ্দিনের দাবি, তাদের ফ্লোরে আগুন লাগেনি। তারা ওপর থেকে আগুনের ফুলকি পড়তে দেখেছেন। রোববার এফআর টাওয়ারের অদূরে সাফুরা টাওয়ারে বনানী থানা পুলিশের কন্ট্রোল রুমে গণশুনানিতে এফআর টাওয়ারের বিভিন্ন তলায় কর্মরত ২৪ জন তাদের বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানান অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান।
গত বৃহস্পতিবার বনানীর ২৩ তলা ওই ভবনে আগুন লেগে চারটি তলা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়; এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ২৬। আহত হয়েছেন অর্ধ শতাধিক মানুষ। ২৩ তলা ভবনটির সপ্তম ও অষ্টম তলাতেই প্রথম আগুন দেখা যায়। পরে তা আরও কয়েক তলায় ছড়ায়।
গণশুনানিতে পাওয়া তথ্যের বরাতে ফয়জুর রহমান বলেন, তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আমরা জানতে পেরেছি, ভবনের অষ্টম তলায় স্পেক্ট্রা এসএন নামে একটি বায়িং হাউজের অফিস থেকে আগুনের সূত্রপাত। তারা বলেছেন, শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত।
অগ্নিকাণ্ডের পর ভবনটির বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার তথ্য বেরিয়ে আসছে। অনেকগুলো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যালয় থাকলেও সেখানে অগ্নি নির্বাপনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ উঠেছে। যতটুকু ছিল, তাও কার্যকর ছিল না বলে ফায়ার সার্ভিসের ভাষ্য।
আগুন লাগার পর এফআর টাওয়ারে থাকা অনেকেই সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার চেষ্টা করেন। কেউ বা ছুটে যান উপরের দিকে। ভবনটির ১৩ তলার ডার্ড নামের একটি পোশাক কারখানার কর্মী শফিকুল বলেছিলেন, নিরাপত্তাকর্মীরা বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে তিনি সিঁড়ি দিয়ে প্রথমে সাত তলায় যান। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখেন নামার মত অবস্থা নেই। পরে তিনি উপরে উঠে যান।
আর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ভাষ্য ছিল, অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনটির ইমার্জেন্সি গেইট বন্ধ ছিল। এছাড়া বিল্ডিংয়ের সিঁড়িও ছিল সরু। রোববার গণশুনানিতেও নানা অব্যবস্থাপনার তথ্য উঠে আসে।
অতিরিক্ত সচিব ফয়জুর রহমান বলেন, তারা (শুনানিতে আসা কর্মীরা) অনেকে এক্সিট ডোরের কথা জানত না। এক্সিট ডোরের কোনো দিকনির্দেশনাও ছিল না। তাই তারা এটা ব্যবহার করতে পারেননি। ভবনে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা থাকলেও নিরাপত্তা কর্মীরা তা ব্যবহার করতে পারেননি।
তবে অষ্টম তলা থেকে আগুন লাগেনি বলে দাবি করেছেন স্পেক্ট্রা এসএন বায়িং হাউসের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. কফিল উদ্দিন। তিনি বলেন, আমাদের ফ্লোরে আগুন লাগেনি। আমরা দেখেছি ওপর থেকে আগুনের ফুলকি পড়ছে। পরে আমরা দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসি।
কফিল উদ্দিন বলেন, ওই সময় তাদের প্রতিষ্ঠানে তিনি কর্মী ময়নুদ্দীনকে নিয়ে কাজ করছিলেন। ঢাকার হেড অফিসে কাজ করেন ১৭ জন। বাকি ১৫ জন অফিসের কাজে বাইরে ছিলেন। তাদের কারখানা স¤প্রতি নীলক্ষেত থেকে সাভারের হেমায়েতপুরে স্থানান্তরিত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক নিয়াজ আহমেদ জানিয়েছেন, তারা অষ্টম তলায় কোনো মৃতদেহ পাননি। নবম ও দশম তলার সিঁড়িতে মৃতদেহ পেয়েছেন। রোববার বেলা ১২টার মধ্যে ভবন নির্মাতা রূপায়ন গ্র“পের নকশাটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা দেয়নি।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গ্রেপ্তার এফআর টাওয়ারের দুই মালিকের একজন তাসভীর উল ইসলামের প্রতিষ্ঠান ২১ তলার কাশেম ইন্ডাস্ট্রিজের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ইবনে হোসেন মো. সালাউদ্দীন জানিয়েছেন, পুলিশ তাদের কার্যালয়ে যেতে না দেওয়ায় তারা গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সরিয়ে আনতে পারছেন না।
আমাদের এমপ্লয়িদের বেতন পরিশোধ করব, চেক রয়ে গেছে ভেতরে, সার্ভার রয়ে গেছে, দলিল রয়ে গেছে। পুলিশের সহযোগিতায় আমরা সেসব বের করে আনতে চাই। তাহলে বিকল্প উপায়ে ঢাকার বাইরের কারখানা আমরা সচল করতে পারব।
তিনি জানান, গত শুক্রবার অল্প সময়ের জন্য কার্যালয়ে যেতে পারলেও শনিবার থেকে তারা তা পারছেন না। এ সময় আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাসভীরের সঙ্গে ভবনটির আরেক মালিক প্রকৌশলী এস এম এইচ আই ফারুককেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।