October 6, 2024
জাতীয়

আমি নানার সঙ্গে নাস্তা করতে ভালোবাসতাম : জয়

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বঙ্গবন্ধুর নাতি সজীব ওয়াজেদ জয় তার নানার সঙ্গে উষ্ণতা ও স্নেহের কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে নাস্তা করতে ভালোবাসতেন এবং তিনি যেভাবে যা খেতেন তাই খেতে জিদ ধরতেন।

সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো ভিত্তিক রাজনৈতিক সংবাদ এবং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক ‘রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স’-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে জয় লিখেছেন- ‘আমি আমার নানার সঙ্গে নাস্তা করতে ভালোবাসতাম। তিনি যেভাবে যা খেতেন তাই খেতে জিদ করতাম।’ জয় লিখেছেন-এ বছর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। তিনি বলেন, ‘তাঁর কন্যা (আমার মা) এবং আমি গোটা জাতির সঙ্গে তা উদযাপন করছি। আমার নানা শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু অথবা ‘ফ্রেন্ড অব বেঙ্গল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। সেই বছরই তার জন্ম। তিনি বলেন, জনসেবা হল তাদের পরিবারের পেশা। তার নানা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি এবং তার মা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

জয় জানান, দু’জনেই ওই পদে নির্বাচিত হয়েছেন। বাংলাদেশ একটি গর্বিত ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্র, যেমনটি তার নানা কল্পনা করেছিলেন এবং এর ফলস্বরূপ এটি এশিয়ায় দেশটি এক দুর্দান্ত সাফল্যের দৃষ্টান্ত।

তিনি বলেন, ‘আমার বয়স যখন ৪ বছর তখন আমার নানার প্রত্যাশা প্রায় ধ্বংস করে দেয়া হয়। সে সময় আমার মা, বাবা, বোন এবং খালাসহ আমরা জার্মানিতে ছিলাম। সেনা কর্মকর্তারা আমার নানার বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাঁকে এবং তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করে। এরপর একটি বর্বর সামরিক জান্তা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে।’

জয় বলেন, ১৯৮১ সাল পর্যন্ত তার মা ও তাকে তাদের মাতৃভূমিতে ফেরার অনুমতি দেয়া হয়নি। ত্যাগ স্বীকার করাই ছিল আমাদের জীবন। আমার নানার জীবনের ১৪ বছর জেলে কেটেছে রাজনৈতিক বন্দী হিসেবে। একবার জেল থেকে ছাড়া পেয়ে তিনি যখন বাড়িতে এলেন তার বড় ছেলেটি তাকে চিনতেই পারেনি,’ তিনি বলেন।

জয় বলেন, ‘আমার মাকেও কোন অপরাধ না করা স্বত্তে¡ও বেশ কয়েকবার কারাবরণ করতে হয়েছে। তিনি যখন বিরোধীদলীয় নেত্রী ২০০৪ সালে রাজধানী ঢাকার একটি রাজনৈতিক সমাবেশে তার ওপর গ্রেনেড হামলা হয়েছিল এবং তিনি অল্পের জন্য রক্ষা পান। এর বেশ কয়েক বছর পর, দেশের একটি আদালত রায় দিয়েছে যে, এই হামলার মূলহোতা ছিলেন তারেক রহমান, যিনি সেই সামরিক জান্তার পুত্র যাকে তার নানা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্যে দায়ী করা হয়ে থাকে।

জয় বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি প্রায়শই রক্তাক্ত এবং সামরিক হস্তক্ষেপে বিঘিœত হয়েছে। বাংলাদেশের জন্ম লগ্নে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান এবং এর সহযোগীরা এখানে গণহত্যা করে ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করে।

পরে, তার নানা এবং তার মায়ের নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ এবং সামরিক জান্তার স্ত্রী ও পুত্রের নেতৃত্বাধীন সহিংস এবং পাকিস্তান সমর্থিত বিরোধীরা সরকার নিয়ন্ত্রণ করে।

তিনি বলেন, ‘তবে, বছরের পর বছর নির্বাসন, সংগ্রাম ও নির্যাতনের পরে আমার মা ১৯৯৬ সালে প্রথম প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।’

জয় বলেন, ২০০৯ সাল থেকে তিনি পরপর দু’বার নির্বাচিত হয়ে সরকার পরিচালনা করেন। তিনি বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন প্রধানমন্ত্রী এবং বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মহিলা।

তিনি বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের স্বাধীনভাবে করা সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের গত বছর সমর্থনের হার ছিল বিস্ময়কর ভাবে ৮৩ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহনকারীদের তিন চতুর্থাংশ বলেন, তারা মনে করেন, দেশ সঠিক পথে চলেছে।

জয় জানান, তাঁর নানা এটি দেখলে গর্বিত হতেন, তবে, পুরোপুরি অবাক হতেন না।

তিনি বলেন, ‘আমার মা, আমার নানার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ এবং লিঙ্গগত সাম্যতা ফ্যাশনেবল হয়ে ওঠার অনেক আগেই তিনি এটি বিশ্বাস করতেন।’

তিনি বলেন, তাদের সম্মিলিত নীতিমালার ফলস্বরূপ বাংলাদেশি নারীরা ক্রমবর্ধমান হারে সুশিক্ষিত হচ্ছে, প্রায়শই তাদের পরিবারের জন্য আয়রোজগার করছে এবং রেকর্ড সংখ্যক পদে নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব পালন করছে আর এসবই সমাজের আমূল পরিবর্তনের অংশ, যা শিগগিরই একটি স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে একটি উন্নয়নশীল দেশ ঘোষণা করায় জাতিসংঘকে উদ্বুদ্ধ করেছে ।

জয় বলেন, ২০০৯ সালে মায়ের দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু থেকে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি ১৮৮ শতাংশ বেড়েছে।

গত বছর, বাংলাদেশ রেকর্ড পরিমান উচ্চ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমকি ৮ শতাংশ, যা ২০১৮ সালে তুলনায় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। দেশের সর্বস্তরের প্রতিটি মানুষ এ থেকে উপকৃত হয়েছে।

জয় বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ১৫.৮ মিলিয়ন মানুষের দারিদ্র্য থেকে দূর করা হয়েছে। ফলে, এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৩১.৫ শতাংশ থেকে ২১.৮ শতাংশে নেমে এসেছে এবং মাথাপিছু আয় প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। তিনি বলেন, এইচএসবিসি ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে যে, ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে বাংলাদেশ হবে ২৬ তম বৃহত্তম অর্থনীতি।

প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, আমার নানা বাদে প্রায় কেউই যা ভাবেননি বাংলাদেশ প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়ে তা সম্ভব করেছে। গত কয়েক দশক ধরে গণতন্ত্র একটি অসম্ভব স্বপ্ন মনে হতো।

তিনি বলেন, হেনরি কিসিঞ্জার এমনকি বাংলাদেশকে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে, আমার নানার বিশাল হৃদয় ছিল এবং প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত তাঁর বন্ধু, বিশ্বাসী অনুসারী আশাবাদী লোকজনে আমাদের বাড়ি ভর্তি হয়ে থাকতো। আমাদের সরকারি এবং ব্যক্তিগত জীবন ছিল পরস্পর জড়াজড়ি করে। দেশটি আমাদের পরিবারে পরিণত হয়েছিল এবং একটি সুখী পরিবারের উত্তরাধিকারের জন্য আমি একে ধন্যবাদ জানাই।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *