December 9, 2024
জাতীয়

আপত্তির মধ্যেই হলে গেল ব্যালট বাক্স

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
ভোট কারচুপির শঙ্কা থেকে ডাকসু নির্বাচনের সকালে কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট ও বাক্স পাঠানোর দাবি উঠলেও আগের দিনই হলগুলোতে সেগুলো পাঠিয়ে দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে রোববার বিকালেই সিনেট ভবন থেকে হলগুলোতে ব্যালট বাক্স পাঠানো শুরু হয়।
এর কয়েক ঘণ্টা আগেই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন দাবি নিয়ে রেজিস্ট্রার ভবনে যান প্রগতিশীল ছাত্রঐক্যসহ কয়েকটি প্যানেলের প্রার্থীরা। স্টিলের ব্যালট বাক্স নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করার পাশাপাশি সকালে কেন্দ্রগুলোতে ব্যালট বাক্স পাঠানোর দাবি জানান ভিপি প্রার্থী লিটন নন্দী।
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট প্রগতশীল ছাত্রঐক্যের সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন বলেন, “রাতের আঁধারে হলগুলোতে ব্যালট বাক্স পাঠানো যাবে না। সকালে গণমাধ্যম ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে ব্যালট বাক্স উন্মুক্ত করে দেখিয়ে তা স্থাপন করতে হবে।”
গত ৩০ ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে বাক্স ভরা হয় বলে বিএনপি জোটের অভিযোগের মধ্যে ডাকসু নির্বাচনে স্বচ্ছতার জন্য এই দাবি তুলেছিলেন তিনি।
তবে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক আবদুল বাছির বলছেন, সকালে প্রার্থীদের সামনে ব্যালট বাক্স খুলে দেখানো হবে এবং তারপর সিলগালা করা হবে।
ব্যালট বাক্স ছাড়াও সব কেন্দ্রে প্রার্থীদের এজেন্ট না থাকা, ভোট গ্রহণের সময় ‘স্বল্পতা’ এবং অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান ছাত্রলীগ বাদে অন্য সব প্যানেলের প্রার্থীরা।
ভোট গ্রহণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগের দিনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাতে পারেনি বলে অভিযোগ করেন তারা।
২৮ বছর পর সোমবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) এবং ১৮টি হল সংসদের নির্বাচন।
ডাকসু ও হল সংসদে মোট ৭৩৮ জন প্রার্থীর মধ্যে প্রত্যেক ভোটারকে ৩৮ জনকে বাছাই করতে হবে। চূড়ান্ত তালিকায় এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৪৩ হাজার ২৫৫ জন।
সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৮টি হলের কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হবে। ভোট ঘিরে রোববার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৪ ঘণ্টার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
‘নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ‘প্রার্থী ও প্যানেলকে জেতাতে’ ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী।
তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের কোনো ব্যাপারেই নির্বাচন কমিশনের কোনো আপত্তি নেই। তারা একে অপরের সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করছে বলেই আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে ধরা দিচ্ছে।”
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ভিপি প্রার্থী লিটন বলেন, “রোববার সকাল ৮টায় প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি, ক্ষমতাসীনরা এখনও বিভিন্ন ক্লাস রুমে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।
“সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের পোস্টার সরিয়ে সেখানে ছাত্রলীগের পোস্টার টাঙিয়েছে। গতকাল (সোমবার) রাতে ১০টির বেশি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। স্টিলের ব্যালট বাক্স নিয়ে আরেকটি সংশয় তৈরি হয়েছে।”
সংবাদিকদের ওপর কড়াকড়ি উঠিয়ে সব ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি প্রচারের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
লিটন বলেন, “প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট রাখতে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সকাল ৭টা থেকে প্রতিটি রুটে ন্যূনতম ১০টি করে বাস দিতে হবে।”
নির্বাচন নিয়ে লিটনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ছাত্রলীগের এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, “প্রশাসন যেভাবে ভালো মনে করবে সেভাবেই ভোট গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কিছুই বলার নেই।”
ছাত্রদলের ’বহিরাগতদের উপস্থিতি’ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার একটা কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম বলেন, “আচরণবিধি লংঘন করে ছাত্রদল মহানগর থেকে সশস্ত্র ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে এনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা ডাকসু নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে দণ্ডিত খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং পলাতক আসামি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উপজীব্য করেছে।”
ছাত্রদলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় শেষ মুহূর্তেও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ডাকসুতে সংগঠনের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বলেন, “এখন পর্যন্ত একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত প্রকাশ করার পরও ভোট গণনার সময় ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফলাফল বদলে দেওয়া হতে পারে। এমন খবর আমরা শুনতে পাচ্ছি।
“ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কেন্দ্রের ভেতরে জটলা সৃষ্টি করে রাখতে পরে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে ভোট দিতে না পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। আরেকটি পরিকল্পনা হচ্ছে- বাইরে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ দেখিয়েও গণনার সময় ফল পাল্টে দেবে।”
নিজেদের আশঙ্কার কথা জানিয়ে রোববার নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন স্বাধীকার স্বতন্ত্র পরিষদের ভিপি প্রার্থী আসিফুর রহমান।
তিনি বলেন, “ভোট গ্রহণের সময় ৪ ঘণ্টা না বাড়ালে নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হবে না। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স স্থাপন করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো গুজব না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
বিভিন্ন সংগঠনের প্রার্থীরা সংশয়ের কথা জানালেও এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হতে প্রার্থী ও ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক আবদুল বাছির বলেন, “ওএমআর ফর্মে ভোট নেওয়া, ব্যালট ভাঁজ না করা এবং স্টিলের বাক্সে ভোট নেওয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি। সকালে প্রার্থীদের সামনে ব্যালট বাক্স খুলে দেখানো হবে এবং তারপর সিলগালা করা হবে।”
ভোট গণনার সময়েও প্রার্থীরা থাকতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ডাকসুতে ২২৯ জন প্রার্থীর জন্য যদি একজন করেও এজেন্ট দেওয়া হয়, তাহলে ভোটকেন্দ্রের অবস্থা ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। সে কারণে প্রার্থীরা ভোটিং শুরু ও গণনার সময় থাকার সুযোগ পাবে।”
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পরিবহনের ব্যবস্থা যথাযথ থাকবে বলে আশ্বাস দিয়ে এই রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষার্থীদের আনার জন্য সকালে সবগুলো বাসই নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে যাবে, অন্যান্য দিন যেসব জায়গায় যায়। এভাবে ট্রিপ চলতে থাকবে।”
এদিকে সকাল ৮টা থেকে মাত্র ছয় ঘণ্টায় ৪৩ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারবেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে আসছে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য সব সংগঠন।
এর বিপরীতে শিক্ষার্থীদের অনুপাতে বুথ রাখার আশ্বাস বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দিলেও মোট কতটি বুথ হচ্ছে সেই সংখ্যা ভোটের আগের দিনও জানাতে পারেনি তারা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *