October 7, 2024
আন্তর্জাতিক

অশান্ত উত্তর প্রদেশ, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৯

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) বিরুদ্ধে অশান্ত উত্তর প্রদেশে কেবল শুক্রবারের প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও সংঘর্ষেই ৯ জন নিহত হয়েছে বলে ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় এ রাজ্যটির পুলিশ নিশ্চিত করেছে। উত্তর প্রদেশ ছাড়াও শুক্রবার ভারতের বিভিন্ন জায়গায় বিতর্কিত এ আইনটির বিরুদ্ধে তুমুল বিক্ষোভ হয়েছে। দিল্লিতে পুলিশের অনুমতির তোয়াক্কা না করেই হাজার হাজার মানুষ জামা মসজিদ থেকে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। দিল্লি গেইটের কাছে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষও হয়েছে।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত এলাকায় ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছে। অসংখ্য এলাকায় দেয়া হয়েছে কারফিউ। বিক্ষুব্ধ অঞ্চলগুলোর মধ্যে উত্তরপ্রদেশই সংশোধিত এ নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বেশি সরব; রাজধানীর কাছের এ রাজ্যটিতে গত কয়েকদিনের সিএএবিরোধী আন্দোলনে মৃতের সংখ্যা ১১-তে পৌঁছেছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।

নিহতদের একজনও পুলিশের গুলিতে মারা পড়েনি বলে দাবি করেছেন উত্তর প্রদেশের পুলিশের মহাপরিচালক ওপি সিং। আমরা একটি গুলিও ছুড়িনি, বলেছেন তিনি। যদি কোনো গুলি হয়ও, তা এসেছে বিক্ষোভকারীদের দিক থেকে, দাবি অন্য এক পুলিশ কর্মকর্তার।

বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে পুলিশের অর্ধশতাধিক সদস্য আহত হয়েছে বলেও ভাষ্য কর্মকর্তাদের। এনডিটিভি জানায়, শুক্রবার জুমার নামাজের পরপরই উত্তরপ্রদেশের ১৩টি জেলায় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনবিরোধী তুমুল বিক্ষোভ শুরু হয়। আন্দোলনকারীরা তাদের কণ্ঠ রোধে কেন্দ্রীয় সরকারের নানান দমনমূলক পদক্ষেপেরও তীব্র প্রতিবাদ জানান। বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেল ও পাথর ছোড়ার পাল্টায় পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে নির্যাতিত অমুসলিমদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই মূলত নাগরিকত্ব আইনটি সংশোধন করা হয়েছে। সমালোচকদের ভাষ্য, এ আইন ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের বুকে আঘাত। সংখ্যালঘু মুসলমানদের আরও কোণঠাসা করতে বিজেপি ‘হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা’ বাস্তবায়নই এ আইনের লক্ষ্য, বলছেন তারা।

নতুন আইনে নাগরিকত্ব সংক্রান্ত নথির জটিলতা অনেককেই রাষ্ট্রহীন করতে পারে বলেও আশঙ্কা অনেকের। উদ্বেগ দূর করতে বৃহস্পতিবার ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের নতুন এক ব্যাখ্যা দিয়েছে বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।

ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে যারা ভারতে জন্মেছেন, তারা সকলেই ভারতের নাগরিক। এছাড়া ১ জুলাই ১৯৮৭ সাল থেকে ৩ ডিসেম্বর ২০০৪-এর মধ্যে যারা জন্ম নিয়েছেন এবং যাদের বাবা-মায়ের মধ্যে কোনও একজন ভারতের নাগরিক, তিনিও ভারতীয়। পাশাপাশি ৩ ডিসেম্বর ২০০৪ সালের পরে যারা জন্মেছেন এবং যাদের বাবা-মা দু’জনেই ভারতের নাগরিক কিংবা একজন ভারতীয় নাগরিক এবং অন্য জন সেই সময়ে ‘অবৈধ অনুপ্রবেশকারী’ নন, তারাও ভারতের নাগরিক হিসেবেই গণ্য হবেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাখ্যা নিয়েও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন অনেকে। তাদের ভাষ্য. ১৯৮৭ সালের ১ জুলাইয়ের আগে জন্মের নথি বাধ্যতামূলক ছিল না; নথি না থাকলে তারা এখন কী দেখাবেন?

তাছাড়া, ২০০৪ সালের ৩ ডিসেম্বরের পরে জন্মানো কেউ যদি বাবা বা মায়ের মধ্যে কোনও এক জনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে না পারেন, তা হলে তার নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। কিন্তু তিনি যেহেতু ভারতে জন্মেছেন, তাই অ-মুসলিম হলেও নিজেকে শরণার্থী হিসেবে দাবি করে নয়া নাগরিকত্ব আইনের সুবিধা নিতে পারবেন না। দেশজুড়ে চলমান বিক্ষোভ-প্রতিবাদ দমনে এ ধরনের ‘নতুন নতুন ব্যাখ্যা’ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা বিরোধীদের।

 

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *