April 16, 2024
আঞ্চলিক

অতিবৃষ্টিতে দাকোপের তরমুজ চাষিরা পথে বসেছে

 

মোঃ রুহুল আমীন, দাকোপ

অতি বর্ষনের ফলে শষ্য ভান্ডার খ্যাত দাকোপের তরমুজ চাষীদের মাথায় হাত। ঝড়ো হাওয়ার সাথে এক নাগাড়ের শিলা বৃষ্টিতে চারা গাছ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। অধিকাংশ চাষিরা বিভিন্ন এনজিও এবং মহাজনী সুদে করা বিনিয়োগ হারিয়ে এখন পথে বসার উপক্রম। সুদ মওকুপসহ নতুন করে পুঁজি ও সার বীজ সহায়তার প্রত্যাশায় সরকারের সহযোগীতা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ চাষিরা।

খুলনার উপকুলিয় উপজেলা দাকোপের ৫ টি ইউনিয়ন তরমুজ ভুট্রা সূর্যমূখী উচতে ভেন্ডি মিষ্টি কুমড়া মিষ্টি আলু কাচা মরিচ ঝিঙে চাষের প্রসিদ্ধ হওয়ায় অঞ্চলটি শষ্য ভান্ডারের খ্যাতি অর্জন করেছে। এখানকার তরমুজ সুস্বাদু এবং ব্যাপকহারে চাষাবাদের কারনে দেশে এবং দেশের বাইরে দাকোপের তরমুজের ব্যাপক চাহিদা। এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রেখে চলেছে তরমুজের চাষাবাদ। প্রতিবারের ন্যায় এবার সেখানে শতভাগ জমিতে তরমুজসহ অন্যান্য ফলনের চাষাবাদ করা হয়। স্বাভাবিক নিয়মে ফেব্রæয়ারীর প্রথম সপ্তাহে চাষাবাদ শুরু করে মে মাসের মধ্যে উৎপাদিত ফসল বিক্রির আশা করা হচ্ছিল। চারাগাছ গুলো কেবল মাথা উচু করে উঠার মুখে গত ফেব্রæয়ারীর শেষ সপ্তাহে শুরু হওয়া প্রায় ১০ দিন ব্যাপী লাগাতার শীলাবৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে শতভাগ গাছের চারা পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ ঘটনায় চাষি পরিবারের মাথায় হাত। একদিকে সারা বছরের জীবন জীবিকার পথ রুদ্ধ, অন্যদিকে সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা এবং মহাজোনের কাছ থেকে চড়া সুদে নেওয়া পুঁজির অর্থ ফেরত দেওয়ার দুঃশ্চিন্তায় তারা।

সরেজমিন উপজেলা দাকোপ ও কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের ধোপাদী পশ্চিমপাড়াসহ কয়েকটি এলাকার চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায় তাঁদের অসহায়ত্বের অবস্থা। ধোপাদী গ্রামের নিরঞ্জন মন্ডল ১৪ বিঘা, নরোত্তম বিশ্বাস ২০ বিঘা, দক্ষিন দাকোপের সন্তোষ মন্ডল ১০ বিঘা, ছিটেবুনিয়ার রনজিত মন্ডল ১২ বিঘা জমিতে তরমুজসহ উল্লেখিত ফসলের চাষাবাদ করেছেন। তারা জানায়, এ পর্যন্ত বিঘা প্রতি ১০/১২ হাজার টাকা করে খরচ হয়ে গেছে। যা মোট খরচের ৭৫% ভাগ। জানা যায় অধিকাংশ চাষিরা সরকারী বেসরকারী ব্যাংকসহ এনজিও এসডিএফ, ব্র্যাক, হীড বাংলাদেশ, বিআরডিবি, একটি বাড়ী একটি খামার এবং মহাজোনের কাছ চড়া সুদে পুঁজি নিয়ে এই চাষাবাদ করেছে। অনেকে আবার বিঘা প্রতি ৩ হাজার টাকায় জমি হারিতে নিয়ে চাষাবাদ করেছে। অসময়ের অতি বৃষ্টিতে চারাগাছ নষ্ট হওয়ায় তাদের দুঃশ্চিন্তার অন্ত নেই। একদিকে সারা বছরের জীবন জীবিকা অনিশ্চিত অন্যদিকে সুদসহ সেই অর্থ ফেরত দেওয়ার আতংকে আছে তারা। জানা য্ায় এনজিও গুলো হাজারে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৫০ টাকা হারে সুদ আদায় করে থাকে। অপরদিকে মহাজোনেরা ৪ মাসের চুক্তিতে হাজারে ৪ শ’ টাকা হারে সুদে ঋন দিয়েছেন। উৎপাদনের এই বিপর্যয়ের মুখে কিভাবে সেই ঋন পরিশোধ করবেন সেই আতংকে দিশেহারা কৃষক পরিবার গুলো। দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান জানায়, ৫ টি ইউনিয়নে এবার ৮৫৭ হেক্টর জমি তরমুজ চাষের আওতায় আসে। যার মধ্যে অতিবর্ষনে ৭০০ হেক্টর জমির ফসল একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে। এ ছাড়া ভুট্রা তিল সূর্যমূখী ও অন্যান্য সব্জি অনুরুপভাবে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে একানকার চাষিরা অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুক্ষিন। টাকার হিসেবে এ পর্যন্ত বিনিয়োগ ক্ষতির পরিমান ২ কোটি ৩৫ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা বলে তিনি দাবী করেছেন। এ ছাড়াও উপজেলার কামারখোলা তিলডাঙ্গা ও পানখালী ইউনিয়নে প্রায় ২৫০ হেক্টর জমির তরমুজসহ অন্যান্য সব্জি জাতীয় চারা গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। কৃষি কর্মকর্তা ক্ষয়ক্ষতির পরিমান উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধর্তন মহলে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, এখন বিশেষ প্রনোদনার মাধ্যমে চাষিদের সহায়তা করার পাশাপাশি এই সময়ে ভুট্রা ও তিল চাষের পরামর্শ দিয়েছেন।

এ দিকে এই পরিস্থিতি উত্তরনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা নতুন করে বিনা সুদে সহজ শর্তে পুঁজি বিনোয়োগসহ সার বীজ কিটনাশকের ব্যবস্থা এবং অতীতের সুদসহ ঋন মওকুপের দাবীতে স্থানীয় ছিটেবুনিয়া শশ্মানকালী বাজারে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সমাবেশে বক্তৃতা করেন ইউপি সদস্য সুব্রত মন্ডল, বিষ্ণুপদ মিস্ত্রি, শেখর সরদার, শিক্ষক রামপদ মন্ডল, রামপদ মন্ডল, বিষ্ণুপদ মন্ডল, সুনির্মল মন্ডল, সমীরন মন্ডল, বিপ্লব মন্ডল, সঞ্জিব বিশ্বাস, রশিদ গাজী, সঞ্জিব মন্ডল, তপন মন্ডল, প্রহলাদ মৃধা, দূর্গাপদ মন্ডল, সুকুমার বিশ্বাস, সন্তোষ মন্ডল, অমল মন্ডল প্রমুখ। বক্তারা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরে বাঁচার তাগিদে সুদসহ ঋন মওকুপ ও নতুন পুঁজি পেতে সরকারের নিকট জোর দাবী জানিয়েেেছ।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *