April 25, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

ঐক্যফ্রন্টে অনৈক্যের সুর !!!

* শপথ নিচ্ছেন গণফোরামের দুই এমপি!

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
বিএনপি, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জেএসডিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সমন্বয়ে গঠিক ঐক্যফ্রন্টে ক্রইে অনৈক্যের দেখা মিলছে। বিএনপি শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও নির্বাচনে গণফোরাম থেকে বিজয়ী দুজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিচ্ছেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেন। তিনি গতকাল শনিবার দলের এক বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেছেন, তারা বিষয়টি ‘ইতিবাচক’ দৃষ্টিতে দেখছেন এবং ‘ইতিবাচক’ সিদ্ধান্ত নেবেন।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে পুনর্নির্বাচনের দাবি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তোলার পর তাদের জোট থেকে বিজয়ীদের শপথ নেওয়া নিয়ে সংশয় দেখা দেয়। গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিসহ তাদের রাজনৈতিক মিত্রদের সবাই সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেও উপস্থিত ছিলেন না ঐক্যফ্রন্ট থেকে ভোটে বিজয়ী বিএনপির পাঁচ এবং গণফোরামের দুজন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখর“ল ইসলাম আলমগীর সেদিন সরাসরি বলেছিলেন, শপথ তো পার হয়ে গেছে, প্রত্যাখ্যান করলে শপথ থাকে নাকি আর?…আমরা শপথ নিচ্ছি না, পরিষ্কার করে বললাম। তার দুদিন পর শনিবার গণফোরামের এক বৈঠকের পর তোপখানা সড়কে শিশুকল্যাণ পরিষদের মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসে ভিন্ন কথা শোনালেন দলটির সভাপতি কামাল।
দীর্ঘদিন পর গণফোরাম সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেল, শোনা যাচ্ছে যদি বিএনপি শপথ নাও নেয় অন্তত গণফোরামের এ দুই সদস্য শপথ নেবেন। যদি শপথ নেয় তবে ঐক্যফ্রন্ট থাকবে কি না, এ প্রশ্ন করা হয় কামাল হোসেনকে। জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট আলোচনা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। তো আমার নিজের ধারণা যে, ইতিবাচক সিদ্ধান্তই আমরা নেব।
আজকে গণফোরামের সর্বোচ্চ ফোরামের সভা হয়েছে, সে সভায় নির্বাচিত দুজনের শপথ গ্রহণের পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু আমাদের যে দুজন নির্বাচিত হয়েছেন তারা তো বিরোধী দল থেকে হয়েছেন। এটাকে আমরা বলেছি, এটা তাদের অর্জন।
প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত হওয়ার জন্য আমরা তাদের অভিনন্দনও জানিয়েছি এবং অংশগ্রহণের ব্যপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। আমার নিজের ধারণা যে, ইতিবাচকভাবেই আমরা চিন্তা করব। আলোচনা যেটা হয়েছে সে ব্যাপারে আপনাদের এটুকু ইঙ্গিত দিলাম।
গণফোরাম থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মৌলভীবাজার-২ আসনে জয়ী হয়েছেন সাবেক ডাকসু ভিপি সুলতান মোহাম্মদ মনসুর। সিলেট-২ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী হিসেবে জয়ী গণফোরামের মুকাব্বির খান দলীয় প্রতীক উদীয়মান সূর্য নিয়ে ভোট করেন।
সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, বিএনপি যেহেতু শপথ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং তাদের প্রতীকে ভোট করে গণফোরাম সদস্য শপথ নিলে তা দুই দলের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টি করবে কি না? উত্তরে কামাল বলেন, আমার মনে হয় হয় না।
তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্টতো আমরা রাখার জন্যই করেছি। বিশ্বাস করি যে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে সেই শক্তি পাওয়া যায় যা দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা যায়। কিন্তু একেকটা বিষয়ে কৌশলগতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সংবাদ সম্মেলনে সুলতান মনসুরও ছিলেন। এছাড়া সুব্রত চৌধুরী, জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ ছিলেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় নেতারাও ছিলেন। সুলতান মনসুর ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচিত হয়েছেন, তার ক্ষেত্রে বিএনপি আপত্তি জানালে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ (ফ্লোর ক্রসিং) কার্যকর হবে কি না, সে প্রশ্ন করা হয়েছিল কামাল হোসেনকে। জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি মনে করি না যে, আলোচনা-বিবেচনা করার বিষয় এই মুহূর্তে আছে।
ঐক্যফ্রন্ট অটুট থাকার আশা প্রকাশ করে কামাল হোসেন বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছিলাম যাতে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন আমরা আদায় করতে পারি। আমরা বিশ্বাস করি যে, কার্যকরভাবে ঐক্যফ্রন্ট যদি কাজ করে নির্বাচন এবং অন্যান্য ব্যাপারে সরকারের উপরে চাপ থাকবে আইন মেনে দায়িত্ব পালন করার।
আমরা লক্ষ্য করছি অনেক ব্যাপারে সরকারের আইন অমান্য করার যে চেষ্টাগুলো হয়, বিশেষ করে নির্বাচনের ক্ষেত্রে তো আমরা দেখেছিই কীভাবে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন থেকে তারা সরে যায়। এই চাপটা রাখার জন্য আমাদের ঐক্য কাজে লেগেছে কিছুটা। কিছুটা আরও লাগবে আশা করি।
ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে শীর্ষ নেতা কামাল বলেন, আন্দোলনের জনমত গঠন করাও আন্দোলন। বিবেচনা করে আলোচনা করে প্রত্যাখ্যান করাও আন্দোলনের অংশ। তো আন্দোলন তো অব্যাহত আছেই। করেই যাচ্ছি, করে যাব। আন্দোলন আরও তীব্র হতে পারে।
জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে পরবর্তী কর্মসূচিতে যাবেন কি না, সে প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি কামাল হোসেন, যদিও ভোটের আগে তিনি বলেছিলেন নির্বাচনী জোটে জামায়াত থাকবে জানলে তিনি ঐক্যফ্রন্টে যেতেন না। এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, আমাকে জেনারেল সেক্রেটারি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বললেন যে, জামায়াত ফ্রন্টে নাই, তারা ওই বিশ দলের মধ্যে আছে।
আওয়ামী লীগের এক সময়ের নেতা কামাল এবার বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে ভোটের লড়াইয়ে এলেও শুরু থেকে বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতভিন্নতা প্রকাশ পেয়েছে। জোট গঠনের পর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সংলাপে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টিতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার কথা মির্জা ফখরুল বললেও কামাল বলেছিলেন, দলীয় স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থই এখানে গুরুত্বপূর্ণ।
পরে ৭ দফা দাবি পূরণে নির্বাচন কমিশনের আশ্বাসে কামাল আশ্বস্থ হওয়ার কথা জানালেও বিএনপির মহাসচিবের কথায় ছিল ভিন্ন সুর। তবে ভোটের পর দুজনে একসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে এসে পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলেন। বৃহস্পতিবার জোটের নেতারা একসঙ্গে ইসিতে গিয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছিলেন।
কিন্তু তার দুই দিনের মধ্যে ফখরুলসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের একাংশের নোয়াখালী সফরে থাকার মধ্যে শপথ নেওয়া নিয়ে কামালের ভিন্ন কথা শোনা গেল।
বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে বিএনপি এবারই সবচেয়ে কম আসনে জয়ী হয়েছে। ৩০০ আসনের মধ্যে তাদের আসন মাত্র ৫টি। অন্যদিকে দুই যুগ আগে আওয়ামী লীগ থেকে বেরিয়ে কামাল গণফোরাম গঠনের পর এবারই প্রথম দলটি থেকে কেউ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন।
বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিজয়ীদের শপথ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আসছেন টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করতে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতারা। নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের কেউ ৯০ দিনের মধ্যে শপথ না নিলে তার সদস্যপদ খারিজ হয়ে যাবে বলে ইসির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে ওই আসনগুলোতে উপ-নির্বাচন হবে। নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণাদি আছে কি না এবং থাকলে কোনো আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী কামালের কাছে।
জবাবে তিনি বলেন, দলিলপত্র তো অবশ্যই আছে। আমরা এই কথাগুলো (সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য) তো দলিলপত্র থেকেই নিয়েছি। চিহ্নিত গুরুতর অপরাধ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া যেতে পারে। সেটা আমরা বিবেচনা করছি এবং নরমালি রাজনৈতিক ব্যপারে ঘন ঘন মামলা করা হয় না। করা উচিতও না। কিন্তু গুরুতর রকমের অপরাধ থাকলে আমরা অবশ্যই বিবেচনা করব।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য বলা হয়, নির্বাচন কমিশন ৩০ ডিসেম্বর প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে যাদের নির্বাচিত বলে ঘোষণা করেছে তারা কেউই নির্বাচিত নয় এবং যাদের গেজেট প্রকাশ করেছে তারা কেউই জনগণের প্রতিনিধি নয়। আমরা ইতোপূর্বে এই নির্বাচনকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছি। আমরা অনতিবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণকে সাথে নিয়ে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের হারানো গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করবই।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *