April 25, 2024
জাতীয়

সরকারের যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো নামমাত্র : জরিপ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

কর্মসংস্থানের জন্য যুবসমাজকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে দেশের গ্রামাঞ্চলে স্থাপিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে কার্যকর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই বলে এক জরিপে তুলে ধরা হয়েছে।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডি ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘প্রান্তিক যুবসমাজের কর্মসংস্থানে সরকারি পরিষেবার ভূমিকা’ শীর্ষক ওই জরিপের প্রতিবেদন মঙ্গলবার রাজধানীর লেকশোর হোটেলে সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

জাতীয় যুব নীতিতে বর্ণিত ১৬টি ক্যাটেগরির প্রান্তিক গোষ্ঠীর মধ্যে চার ধরনের মানুষের উপর জরিপটি চালানো হয়। এক্ষেত্রে ঠাকুরগাঁওয়ে সমতলের আদিবাসী, শহরের বস্তিবাসী, মাদ্রাসাপড়ুয়া শিক্ষার্থী ও সিলেটে অবস্থানরত শহুরে যুবগোষ্ঠীর ৩৩৩ জনকে বেছে নেওয়া হয়।

মোয়াজ্জেম বলেন, গবেষণায় অংশ নেওয়াদের ৬০ শতাংশ মনে করেন, গ্রামীণ প্রশিক্ষণকেন্দ্রগুলো কেবল নামে মাত্র দাঁড়িয়ে আছে। সেখানে ঠিক মতো প্রশিক্ষণের ক্লাস হয় না, ভালো প্রশিক্ষক নেই।

বস্তিবাসী ও আদিবাসীদের মধ্যে শতভাগ যুবগোষ্ঠী এবং মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৮ শতাংশের কোনো বসতভিটা না থাকার তথ্য তুলে ধরে সিপিডির এই গবেষক বলেন, বাসস্থান ও জীবিকার ব্যবস্থা উভয়ই তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তারা সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে (বস্তি) অস্থায়ীভাবে বসবাস করছে।

শিক্ষায় সরকার অনেক সাফল্য অর্জন করলেও প্রান্তিক যুবকেরা এর সুফল পুরোপুরি পায়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, সমতলের আদিবাসী ও সিলেট অঞ্চলের শহুরে যুবগোষ্ঠীর প্রায় ৫০ শতাংশ মনে করেন তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয় মানের প্রতিষ্ঠানগুলো চেয়ে অর্ধেক নি¤œমানের।

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা মনে করেন, তাদের বিজ্ঞান, গাণিত বিষয়ের শিক্ষকের অভাব। এছাড়া স্কুলের বেতন ছাড়াও পড়ালেখাকেন্দ্রিক অন্যান্য খরচ বহন করতে না পারার কারণে অনেকে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন।

মোয়াজ্জেম বলেন, জাতীয় যুবনীতিতে আয়, লিঙ্গ, ভৌগলিক অবস্থান, জীবনচক্র, নাগরিক পরিচয়, শারীরিক অক্ষমতা, শিক্ষা ও দক্ষতা, স্বাস্থ্য, কর্ম, ধর্ম, স¤প্রদায়সহ মোট ১৬টি সূচক বিবেচনায় নিয়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে গবেষণায় কেবল ধর্ম ও স¤প্রদায়, দুর্যোগ, শিক্ষা ও দক্ষতা ও ভৌগলিক কারণে প্রান্তিক যুব জনগোষ্ঠীকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে।

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকার চ্যালেঞ্জ, শিক্ষাগ্রহণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ, প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং কর্মসংস্থান সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ এবং এসবের বিপরীতে সরকারি পরিষেবার অবস্থান দেখা হয়েছে গবেষণায়।

প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত গাইবান্ধার যুবক সুমন খন্দকার বলেন, “তিনি গ্রামের কয়েকজনকে একটি সরকারি প্রশিক্ষণে পাঠালেও সেখানে তিন দিনের বেশি ক্লাস হয়নি। তারা ইলেক্ট্রিশিয়ান হিসাবে কিছুই শিখতে পারেনি। ওই প্রশিক্ষণকেন্দ্রিক সরকারঘোষিত এক লাখ টাকার ঋণ নিতে গিয়ে ১০ হাজার টাকা করে ঘুষ দিতে হয়েছিল।

মাদ্রাসা শিক্ষক উছমান গনি বলেন, চাকরি ক্ষেত্রে যোগ্যতা থাকার পরেও মাদ্রাসাপড়ুয়াদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করা হয়। কড়াইল বস্তির বাসিন্দা তানজিনা আক্তার তানিয়া বলেন, যখনই নিজেকে বাস্তুহারা মনে হয় তখনই পড়ালেখাসহ সব ধরনের কর্মস্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়। তারা বসতভিটার অধিকার চান।

হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য ঝুমা বলেন, সরকার তাদেরকে স্বীকৃতি দিলেও যেই উদ্দেশ্যে স্বীকৃতি দিয়েছে সেটা পূর্ণ হয়। হিজড়াদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি।

অনুষ্ঠানে সাবেক শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমাদের গোড়ায় গলদ রয়েছে, সেকারণেই দক্ষ লোক তৈরি হচ্ছে না। শুধু অনার্স-মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করছে, তখন অফিসার ছাড়া কিছুই হতে চাচ্ছে না। অথচ অন্যান্য উৎপাদনশীল খাতে বিদেশি লোকজন চাকরি করে প্রচুর টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে।

সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, আগে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ ছিল পৃথক। এখন অনেক ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে কাজ হচ্ছে। তবে এটা ঠিক পরিস্থিতির উন্নয়নে বাজেটে বরাদ্দ বাড়াতে হবে, নৈতিক শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে।

সাংসদ রুমিন ফারহানা বলেন, বেকারত্বের হার দিন দিন বাড়ছে অথচ সরকার বলছে প্রবৃদ্ধির কথা। প্রবৃদ্ধির হিসাব দেখানো হলেও প্রকৃত প্রবৃদ্ধি যে হচ্ছে না বেকারত্ব বৃদ্ধিই তার প্রমাণ। শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় দুর্বলতা রয়েছে। সরকার ফলাফলের ওপর গুরুত্ব দিতে গিয়ে শিক্ষার মান খারাপ হয়ে যাচ্ছে।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *