April 24, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

মস্তানি করে নেতা হওয়ার দিন শেষ : ওবায়দুল কাদের

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

পেশির বলে আওয়ামী লীগের নেতা হওয়া যাবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গতকাল শনিবার দুপুরে চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

এই সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সকালে দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও চেয়ার ছোড়াছুড়ি হয়েছিল। দুপুরে ওবায়দুল কাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় বিভিন্ন নেতার নামে স্লোগান চলে, যা শুনে বিরক্তি প্রকাশ করেন কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক।

কাদের বলেন, বাড়াবাড়ির একটা সীমা আছে। এটা বাড়াবাড়ি হয়েছে। স্লোগান দিয়ে নেতা বানানো যাবে না। বিলবোর্ডে সুন্দর সুন্দর ছবি দিয়ে নেতা হওয়া যায় না। ঝকঝকে পোস্টারের ছবি কাউকে নেতা বানাবে না। মস্তানি করে নেতা হবার দিন শেষ। নেতা হবে দলের নিয়ম শৃঙ্খলা অনুযায়ী। নেতা হবেন ত্যাগীরা, যারা দলের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। সুখে-দুঃখে দলের সঙ্গে ছিল, তারাই হবে নেতা।

স্লোগানরতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের স্লোগানে কি নেতা বানাব? ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে যাদের বিলবোর্ড-ব্যানার বেশি ছিল, তারা কেউই নেতা হননি। গত কয়েকদিনে অনেকগুলো সম্মেলন করেছি। নেতা নিয়ম অনুযায়ী হয়েছে।

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ ঠেকানোর উপর জোর দিয়ে কাদের বলেন, পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, খারাপ লোককে দল ভারী করার জন্য আওয়ামী লীগে আনবেন না। আমাদের বহু লোক রয়েছে। খারাপ লোকের প্রয়োজন নেই।

বুয়েটের আবরার হত্যাকারীর মতো কর্মী আমাদের দরকার নেই। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কথায় কথায় মারামারি করে, এমন লোক আমাদের দরকার নেই। রাজশাহীতে অধ্যক্ষকে পানিতে ফেলে দেয়, এমন কর্মী আমাদের দরকার নেই।

চট্টগ্রামে দলের কোন্দলের দিকে ইঙ্গিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, চট্টগ্রামের মাটি শেখ হাসিনার ঘাঁটি। এ ঘাঁটিতে যে ফাটল ধরেছে, তা ক্লোজ করে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করতে চাই, সুবিধাবাদী চাই না। মৌসুমী ও অতিথি পাখিদের স্থান আওয়ামী লীগে নেই। দল ভারী করার জন্য যে পকেট কমিটি করবে, তাদের প্রয়োজন নেই। নেতৃত্বে সুবিধাবাদীরা আসলে সে আওয়ামী লীগ টিকে থাকতে পারবে না। দুঃসময়কালে পাঁচ হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও তাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।

এখন কর্মীর চেয়ে নেতা বেড়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশ এখন নেতা উৎপাদনের কারখানা। কর্মী উৎপাদনের কারখানা কমে গেছে। ব্যানার পোস্টার লাগাতে এখন আর কর্মী পাই না। ভাড়া করা টোকাই দিয়ে লাগাতে হয়। এখন সবাই নেতা হয়ে গেছে, কর্মী কেউ নয়।

সবাই নেতা হতে চায়। নেতা হতে গেলে আগে কর্মী হতে হবে। যারা নেতা হতে চান সৎ জীবনযাপন করবেন। কত টাকা দরকার জীবনের জন্য। চাঁদাবাজ আওয়ামী লীগের নেতা হতে পারে না। টেন্ডারবাজ, জমি দখলকারী, সন্ত্রাসীদের না বলুন।

ক্ষমতার দাপট দেখাতে মানা করে কাদের বলেন, এটি আজ আছে কাল নেই। এ জনগণের মাঝেই আমাদের থাকতে হবে। আমাদের ক্ষমতার উৎস বিএনপির মতো বন্দুকের নল নয়। জনগণের সাথেই থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে সাহসী রাজনীতিক অভিহিত করে মন্ত্রী কাদের বলেন, বিশ্বের তিনজন সৎ রাজনীতিকের একজন তিনি। বিশ্বের প্রভাবশালী রাজনীতিকের একজন তিনি। বাংলাদেশে ৭৫ পরবর্তী সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনীতিক তিনি, বাংলাদেশে সবচেয়ে ঝুঁকি নিয়ে যিনি জীবনযাপন করেন তিনিই হলেন শেখ হাসিনা। নেত্রীর সততা-সাহস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন উদ্বোধন করেন দলের কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এম এ সালামের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া। সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স›দ্বীপের মাহফুজুর রহমান মিতা, সীতাকুণ্ডের দিদারুল আলম, নারী সংসদ সদস্য খদিতাজুল আনোয়ার সনি।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *