April 26, 2024
জাতীয়

মুক্তি পাচ্ছে মোবাইল কোর্টে দণ্ডিত শতাধিক শিশু

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্টে দণ্ডিত হয়ে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে থাকা শিশুরা মুক্তি পাচ্ছেন। এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনার পর বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদার রুলসহ আদেশ দেন।

আদেশে আদালত মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ডিত ওই দুই কেন্দ্রে থাকা ১২ বছরের নিচের শিশুদের অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন। এছাড়া বাকিদের ছয় মাসের জামিন দেন। তারা সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে জামিননামা দেওয়ার পর মুক্তি পাবেন।

এছাড়া সাত কার‌্যদিবসের মধ্যে এসব শিশুদের দণ্ডের নথি তৈরি করে আদালতে দাখিল করতে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটদের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে তাদের দণ্ড ও আটকাদেশ কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ১৮ নভেম্বর দিন ঠিক করেছেন।

‘আইনে মানা, তবু ১২১ শিশুর দণ্ড’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন আদালতের নজের আনেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। তিনি প্রতিবেদনটি পড়ে শোনান। এরপর আদালত আদেশ দেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু আইনে স্পষ্টই বলা আছে, অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, অপরাধে জড়িত থাকা শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতেই হবে। অথচ ভ্রাম্যমাণ আদালত শিশুদের দণ্ড দিয়ে চলেছেন। এ মুহূর্তে টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে ১২১ জন শিশুর সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের দণ্ড দিয়েছেন র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এরা তিন মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত মেয়াদে কারাদণ্ড ভোগ করছে।

শিশু আইনের পাশাপাশি হাইকোর্টের একাধিক রায়েও বলা হয়েছে, শিশুর বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিচার শুধু শিশু আদালতেই হতে হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত দূরের কথা, অধস্তন আদালতের কোনো বিচারক শিশুদের বিচার করলেও তা হবে বেআইনি।

টঙ্গীর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ বছরের ৩ মে থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত ১২১টি শিশু সেখানে রয়েছে। এদের মধ্যে ১৭ বছর বয়সী রয়েছে ২৮ জন। ২৬ জনের বয়স ১৬, ২০ জনের বয়স ১৫, ১৬ জনের বয়স ১৪, ১১ জনের বয়স ১২। ৭ জনের বয়স ১৩। বাকি ১২ জনের বয়স ৮ থেকে ১১ বছর। একজনের বয়স উলে­খ নেই।

দণ্ডিতদের মধ্যে ৭৫ জনকে দণ্ডবিধির ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী চুরির দায়ে ছয় মাস এবং ৩৪ জনকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৪২ ধারা অনুযায়ী এক বছর করে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। শুধু একটি শিশু ছয় মাসের সাজা পেয়েছে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায়। ১৩ বছর বয়সী শিশুটির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৮৯ ধারায় সাজা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে সরকারি কর্মচারীকে ক্ষতিসাধনের হুমকির।

এছাড়া যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রেও ভ্রাম্যমাণ আদালতে দণ্ডিত একটি শিশু রয়েছে। কেশবপুরের এই শিশুটি বাল্যবিয়ের কারণে এক মাসের সাজা পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই কেন্দ্রের তত্ত¡াবধায়ক মো. আবদুল­াহ আল মাসুদ।

২০১৩ সালের শিশু আইন বলছে, ‘বিদ্যমান অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত সব ব্যক্তি শিশু হিসেবে গণ্য হবে।’ ১৬ ধারা বলছে, ‘আইনের সঙ্গে সংঘাতে আসা শিশুর সংঘটিত যেকোনো অপরাধের বিচার করবার জন্য প্রত্যেক জেলা সদরে এক বা একাধিক শিশু আদালত থাকবে। কোনো অপরাধ সংঘটনে প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশু একত্রে জড়িত থাকলেও শিশুর বিচার শুধু শিশু আদালতই করবে। শিশু আদালতেরও সাজসজ্জা ও ধরন ভিন্ন হতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হোক বা না হোক, আদালত শিশুকে জামিনে মুক্তি দিতে পারবে। এমনকী আদালতে শিশুর প্রথম হাজির করবার ২১ দিনের মধ্যে প্রবেশন কর্মকর্তা একটি সামাজিক অনুসন্ধান দাখিল করবেন। প্রবেশন কর্মকর্তা বা বৈধ অভিভাবকসহ আইনজীবীর উপস্থিতি আদালতে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে।’

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *