April 24, 2024
আঞ্চলিকলেটেস্ট

৭ দিনে খুলনায় তিনটি হত্যাকাণ্ড: নেপথ্যে কিশোর অপরাধীচক্র

জয়নাল ফরাজী

খুলনায় গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

হত্যাকাণ্ড গুলোতে সরাসরি অংশ নিয়েছে কিশোর অপরাধীরা। আর হত্যার পেছনে

রয়েছে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, পূর্ব শত্র“তার মতো বিষয়। মাত্র ৭ দিনে

তিনটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঘুরে ফিরে আলোচনায় আসছে কিশোর অপরাধী

চক্রের নাম। যা দিনে দিনে হয়ে উঠছে অদম্য।

কিশোর অপরাধ দমনে পারিবারিক সচেতনতাই মুখ্য হয়ে উঠতে পারে বলে মনে

করেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। আর আইনজীবীরা মনে করেন, কিশোর অপরাধীদের

দমনে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তেমন কোন সফলতা দেখাতে পারছে না। এদের দমনে

পুলিশ-প্রশাসনের সুর্নিদিষ্ট পরিকল্পনার প্রয়োজন বলে মন্তব্য তাদের।

সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন খাঁ বাড়ি

মোড়ে দুটি কিশোর অপরাধী চক্রের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এসময়

একপক্ষের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শ‌হিদুল ইসলাম রা‌সেল (১৮) নামের এক কিশোর

নিহত হন। সে ওই এলাকার কবী‌রের বা‌ড়ির ভাড়া‌টিয়া র‌বিউল শেখ’র ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স¤প্রতি ওই এলাকায় দুটি গ্র“পের মধ্যে আধিপত্য

বিস্তারকে কেন্দ্র করে দ্ব›েদ্বর সৃষ্টি হয়। গত এক সপ্তাহ আগেও খাঁ বাড়ি

সংলগ্ন সরদার পাড়া এলাকায় তাদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায়

দেলোয়ার নামের এক যুবক জখম হন। ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে বিরোধ

আরও ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবারও গ্র“প দুটি দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে

জড়িয়ে পড়ে। তবে লোক বেশি হওয়ায় অপর চক্রটি হামলা করে পালিয়ে যেতে সক্ষম

হয়।

এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বেলা পৌনে ৪টার দিকে নগরীর

সোনাডাঙ্গা মজিদ সরণি এলাকায় সুজুকি মোটরসাইকেল শো-রুমের

সামনে মহিদুল ইসলাম (২৭) নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে

দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় মো. সাগর (১৯) ও আশিক (১৯) নামের দুই আসামীকে

আটক করে পুলিশ। পরবর্তীতে বুধবার মহানগর হাকিম আতিকুস সামাদের

আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ওই

দুই তরুণ। তারা বলেন, গল­ামারী লিনিয়র পার্কে সুমন ও মাসুমকে চর থাপ্পর

মেরেছিলো মহিদুল। সেই মারপিটের প্রতিশোধ নিতে গিয়েই এ হত্যাকাণ্ড।

হত্যার উদ্দেশ্য না থাকলেও ছুরিকাঘাতে খুন হয় মহিদুল।

 

এ ঘটনার দু’দিন পরে ২৬ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার দুপুরে খুলনার রূপসা

বাগমারা এলাকায় গুপ্তির আঘাতে সারজিল ইসলাম সংগ্রাম (২৬) নামের এক

যুবক নিহত হন। তিনি ওই এলাকার মুজিবুর রহমানের ছেলে। কিছুদিন আগে

সংগ্রামের একটি মোবাইল ফোন হারিয়ে যাওয়াকে কেন্দ্র করে কিশোর

গ্যাংয়ের লিডার রাহাতের সাথে দ্ব›দ্ব হয়। যার জেরে এ হত্যাকান্ড ঘটতে পারে। এ

ঘটনায় গ্রেফতার সুমন মোল­া নামের এক ব্যক্তি আদালতে ১৬৪ ধারায়

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

এ বিষয়ে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ

কমিশনার (মিডিয়া) শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু বলেন, ‘অপরাধ ঘটার সাথে

সাথেই পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার করছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা

নিচ্ছে। আগের দুটি হত্যাকাণ্ডের পর আসামীদের গ্রেফতার করে আদালতে

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুটি হত্যারই রহস্য

উন্মোচন হয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, সবার আগে পারিবারিকভাবে

সন্তানদের সচেতন করে গড়ে তোলা প্রয়োজন; যাতে কিশোররা অপরাধে না

জড়াতে পারে।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট

মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘কিশোর অপরাধ নির্মূলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর

এখনই সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করা প্রয়োজন। স¤প্রতি খুলনায় যে

পরিমাণ কিশোর অপরাধ ঘটছে তা উদ্বেগজনক। কিশোর অপরাধীদের সাথে এদের

গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনতে হবে।’

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *