April 20, 2024
জাতীয়

জাহাঙ্গীরনগরের ঘটনা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়েও হচ্ছে : আরেফিন সিদ্দিক

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় শিক্ষক সমাজ ‘লজ্জিত’ হয়েছে মন্তব্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, উন্নয়নের টাকা থেকে চাঁদাবাজির এমন ঘটনা অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও ঘটছে।

জাতীয় শিক্ষা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ‘আমাদের শিক্ষা ও আজকের ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় তার এমন মন্তব্য আসে।

অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক বলেন, উন্নয়ন কাজের টাকায় ছাত্র রাজনীতিকরা ভাগ বসায়, এখান থেকে টাকা চায়, এটি অচিন্ত্যনীয়। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এসব ঘটছে। হয়তো এগুলো গণমাধ্যমে আসে না। ভাগাভাগিগুলো এমনভাবে হচ্ছে যে তা গণমাধ্যমে আসছে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি ও ভাগবাটোয়ারাতে শিক্ষকরাও জড়িত মন্তব্য করে এ ধরনের সব অভিযোগের তদন্ত দাবি করেছেন অধ্যাপক আরেফিন সিদ্দিক।

তিনি বলেন, শুধু কি শিক্ষার্থীদের দোষ? কারা তাদের ব্যবহার-অপব্যবহার করছে এটি দেখতে হবে। আমরা দেখেছি, প্রশাসনে থেকে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যোগসাজশে অপকর্ম করেছে। এগুলোও তদন্ত হওয়া উচিত।

এই অধ্যাপকের মতে, সততার শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব যাদের সেই শিক্ষকরা ব্যর্থ হচ্ছেন বলেই ‘সন্তানতুল্য’ শিক্ষার্থীরা চাঁদাবাজি করছে। অভিভাবক হিসেবে, শিক্ষক হিসেবে এই ব্যর্থতা আমাদের। আমরা নানাভাবে সমাজকে কলুষিত করে চলেছি। তার প্রভাব পড়ছে নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের কাছে। যেসব শিক্ষকরা এই সব অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত তাদের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি আরেফিন সিদ্দিক।

একজন সুশিক্ষিত মানুষ কখনও মিথ্যা বলতে পারে না, সুশিক্ষিত মানুষ দুর্নীতি করতে পারে না। কিন্তু আমরা দেখছি যিনি দুর্নীতি করছেন তিনি উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত। কীসের উচ্চ শিক্ষা? এটি তথাকথিত উচ্চ শিক্ষা, তার সনদ রয়েছে। বঙ্গবন্ধু এ কথাটিই বলে গেছেন যে, সাধারণ মানুষ দুর্নীতি করে না, দুর্নীতি করে তথাকথিত উচ্চশিক্ষিতরা।

এ প্রসঙ্গে আলোচনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ নেতাদের ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই বাণিজ্য অনুষদের একটি বিভাগের সান্ধ্যকালীন মাস্টার্সে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার সমালোচনা করেন আওয়ামী লীগপন্থি এই শিক্ষক।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া ছাত্র ভর্তি হয়েছে, তারা ডাকসুতে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছে। কেউ কেউ ডাকসুর সদস্য পদ পেয়েছে। এ ছাত্ররা কি নিজেরাই গিয়ে ভর্তি হয়েছে? তাদের পক্ষে কি ভর্তি পরীক্ষা ছাড়া তা সম্ভব ছিল? নিশ্চয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের ভর্তির সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ডাকসু নির্বাচন সামনে রেখে ছাত্রলীগের ৩৪ জন বর্তমান ও সাবেক নেতা ছাত্রত্ব টিকিয়ে রাখতে ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের মাস্টার্স অব ট্যাক্স ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামে ভর্তি বিজ্ঞাপন, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি হন।

তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের বিভিন্ন সম্পাদক ও সদস্য পদে মোট আটজন নির্বাচনে অংশ নেন, বিজয়ী হন সাতজন। এছাড়া হল সংসদের ভিপি পদে অংশ নেন দুজন। এরমধ্যে একজন নির্বাচিত হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান ও বাণিজ্য অনুষদের ডিন অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম চিরকূট পাঠিয়ে তাদের ভর্তির সুপারিশ করেছিলেন বলে গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়। তবে উপাচার্য আখতারুজ্জামান ওই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ (স্বাশিপ) আয়োজিত সভায় সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল মান্নান চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহজাহান আলম সাজু। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ সাজিদুল ইসলাম।

 

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *