April 25, 2024
আন্তর্জাতিক

‘উপন্যাসের কাহিনী চুরি করেছে’ ক্ষোভ থেকে জাপানে স্টুডিওতে আগুন

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

তার ‘উপন্যাস চুরি করে নিজেদের বলে চালিয়ে দিচ্ছে’, শুধুমাত্র এই বিশ্বাস থেকে জন্ম নেওয়া ক্ষোভের কারণে প্রতিশোধ নিতে জাপানের কিয়োটো অ্যানিমেশন স্টুডিওতে আগুন ধরিয়ে দেন শিনজি আওবা। জাপানের সংবাদমাধ্যমগুলো শুক্রবার এ ধরনের খবর প্রকাশ করে।

‘কিয়োটো অ্যানিমেশন’ স্টুডিওতে বৃহস্পতিবার সকালে লাগা আগুনে ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন আরো ৩৬ জন, যাদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জাপানে গত প্রায় দুই দশকের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা।

ওই দিনই পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে শিনজি আওবাকে গ্রেপ্তার করে। আওবা নিজেও আগুনে দগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। হাসপাতালেই তাকে পুলিশ কাস্টডিতে রাখা হয়েছে এবং জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে সরিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

অবশ্য আওবার অতীত অপরাধের ইতিহাস আছে। এর আগে ২০১২ সালে টোকিওর পূর্বাঞ্চলে একটি সুপারশপে ডাকাতির অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত হয়ে কারাগারে যেতে হয়েছিল তাকে।

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি সাবেক কয়েদীদের বসবাসের জন্য সরকারি ব্যবস্থায় তৈরি একটি হোমে থাকতেন। তাকে মনরোগের চিকিৎসাও নিতে হয়েছে বলে জানায় জাপানের জাতীয় স¤প্রচার মাধ্যম এনএইচকে।

স্টুডিওটির কাছে একটি পেট্রোল স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে পুলিশ আওবাকে সন্দেহ করে। ওই ফুটেজে আওবাকে স্টুডিওতে আগুন লাগার কিছুক্ষণ আগে পেট্রোল স্টেশন থেকে দুটি কন্টেইনারে পেট্রোল ভরতে দেখা গেছে।

পুলিশের ভাষ্য,  হামলাকারী কিয়োটো অ্যানিমেশন কোম্পানির স্টুডিও ভেঙে প্রবেশ করে চারদিকে তরল ছিটিয়ে দিয়েছিল। আগুন লাগানোর সময়েও তাকে চিৎকার করে বলতে শোনা গিয়েছিল, তোমরা মরো।’

আটক হওয়ার পর ৪১ বছরের আওবা পুলিশের কাছে দোষ স্বীকার করেছেন জানিয়ে কিয়োডো নিউজ জানায়, তার বিশ্বাস ওই স্টুডিও তার উপন্যাস চুরি করেছে। এজন্য তিনি সেখানে আগুন ধরিয়ে দেন। যদিও পুলিশ এ বিষয় কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

নিপ্পন টিভি জানায়, অগ্নিদগ্ধ আওবাকে চেতনানাশক দিয়ে রাখা হয়েছে। যে কারণে পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারছে না। হাসপাতালে এক নারী প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, তাকে কখনো অসন্তুষ্ট দেখাচ্ছে, কখনো তিনি রেগে যাচ্ছে, কখনো তিনি চিৎকার করে প্রতারণার শিকার হওয়ার কথা বলছেন।

কিয়োটো অ্যানিমেশন স্টুডিওর ওয়েবসাইট অনুযায়ী তাদের মোট ১৬০ জন কর্মী ছিল, যাদের গড় বয়স ৩৩ বছর। ১৯৮১ সালে ইয়োকো হাত্তা নামের এক নারী নিজেকে স্বাবলম্বী করতে তার স্বামী হিডেকী হাত্তাকে সঙ্গে নিয়ে কিয়োটো অ্যানিমেশন প্রতিষ্ঠা করেন। ‘কিয়োঅ্যানি’ নামেই এ স্টুডিও বেশি পরিচিত।

ভিডিও অ্যানিমেশন, সিনেমা, টিভি সিরিজের জন্য বিখ্যাত এ প্রতিষ্ঠানটির সুনাম পুরো জাপান জুড়ে। ফ্রি, রোড টু দ্যা ওয়ার্ল্ড ড্রিম নামের একটি অ্যানিমেশন মুভি চলতি মাসের গোড়ার দিকে মুক্তি পেয়েছিল। আগুন লাগার সময় স্টুডিওর তিনতলা ভবনটিতে ৭০ জন কর্মী ছিলেন বলে জানিয়েছিল দমকল বাহিনী।

অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণে বৃষ্টির মধ্যে পোড়া স্টুডিওতে অনেকে ফুল দিতে এসেছিলেন। তাদের একজন ৭১ বছরের কোজো সুজি। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, তিনি প্রতিদিন এই স্টুডিওর পাশ দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতেন। আমি চোখ বুঝলেই দেখতে পাচ্ছি মারা যাওয়া ব্যক্তিদের অনেকের বয়স কুড়ির কোটায়। ওই সব তরুণ প্রাণের জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে, যারা এতটা অসময়ে চলে গেল।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *