November 28, 2024
আঞ্চলিক

পাটকেলঘাটায় আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাঁশ ও বেত শিল্প

 

পাটকেলঘাটা (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি

আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাটকেলঘাটা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে পরিবেশবান্ধব গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বাঁশ ও বেত শিল্প। গ্রামীণ বাংলায় আবহমানকাল থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় বাঁশ ও বেত দিয়ে প্রস্তুতকৃত শিল্প সামগ্রী ঐতিহ্যের সঙ্গে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করে আসছে। কালের গর্ভে এবং আধুনিকতার ছোঁয়ায় পাল্টে গিয়েছে সর্বত্র গ্রাম বাংলার চিত্র। দিন দিন বাঁশ ও বেত শিল্পের কদর কমে যাচ্ছে, পাশাপাশি চরম দূর্দিন নেমে এসেছে শিল্পটির সাথে জড়িতদের। প্লাস্টিক সামগ্রীর জিনিস পত্র ব্যবহারই এ শিল্প ধংসের কারন কারন বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সরেজমিনে জানা গেছে, পাটকেলঘাটা থানায় এক সময় বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরি নানা প্রকার শিল্প সামগ্রীর বেশ কদর ছিল। বাঁশ ও বেত দিয়ে বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত সামগ্রীর মধ্যে; ঝুড়ি, ডালা, কুলা, চাঙ্গারী, মুড়া, ঢুষি, হাতপাখা, চালোন, টোকা, বাঁশি, গোলা, ডোলা, আউড়ি, চাঁচ, ধামা, পাতি, চেয়ার, টেবিল, বই রাখার তাক সহ বিভিন্ন প্রকার শিল্প সামগ্রী ব্যবহার করা হত। ধনী-গরীবসহ সকল পেশার মানুষ কম বেশি অনায়াসেই বাঁশ ও বেত জাত সামগ্রী ব্যবহার করত। পাশাপাশি এ শিল্পের সাথে জড়িত মানুষ তাদের জীবন-জীবিকা চালাতো অনেক সুন্দরভাবে। বর্তমানে সময়ের ব্যবধানে আধুনিক ষ্টীল, প্লাষ্টিকের তৈরি নিত্য নতুন ডিজাইনের বিভিন্ন সামগ্রী খুব সহজে অনেক কম মূল্যে হাতের নাগালে টেকসই হওয়ার কারণে এবং প্রচুর পরিমানে এ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে বাঁশ ও বেত দিয়ে প্রস্তুতকৃত শিল্প সামগ্রী সকলের কাছে গ্রহণ যোগ্যতা হারিয়ে ফেলছে বলে অনেকেই জানায়। সাথে সাথে এ শিল্পের কারিগররা সীমাহীন কষ্টের মধ্যে থেকেও পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য এখনো ধরে রেখেছে। অনেকে পেশা বদল করে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে জড়িত হয়েছে। পাটকেলঘাটার আশেপাশের বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে যারা জড়িত তাদের প্রায় সবাই ঋষি স¤প্রদায়ের। এরা শুধু সমাজে অবহেলিত বঞ্চিতই নয়, পাশাপাশি সরকারের দেওয়া প্রায় সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা থেকেও অনেকটা বঞ্চিত বলে তাদের অভিযোগ। সাথে তাদের তৈরি শিল্প সামগ্রীর চাহিদা কালেরগর্ভে হারিয়ে যাবার কারণে অনেকে করছে মানবেতর জীবন-যাপন। থানার তৈলকুপি, যুগিপুকুরিয়া, কাশিপুর, ধানদিয়া, মিঠাবাড়ি, কাশিয়াডাঙা গ্রামসহ এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট রবিন দাস, প্রশান্ত দাস, আরতি দাসী, অনিমা দাসী, ভারতী রানী দাসী, হরিপদ দাস, কালীদাসসহ একাধিক কারিগররা বলেন, বাঁশ ও বেত সংগ্রহ করে বাড়িতে পরিবারের সবাই মিলে প্রস্তুত করে বাজারে বিক্রয় করে বেশি লাভ থাকে না। বাজারে একটি ধামা ৩৫০-৮শ, পাতি ৭০-২৫০, ঝুড়ি ৮০-১০০, দোলনা ২০০-২৫০, কুলা ৫০-৮০, মুরগী ঢাকা ঝুড়ি ৮০-১০০, মাপার জন্য পাল্লা ২শ থেকে ৪শ টাকায় বিক্রয় করা হয়ে থাকে।

তৈলকুপী গ্রামের বৃদ্ধা তপন দাস বলেন, পূর্বপুরুষদের পেশা ধরে রেখে অনেক কষ্টে জীবন যাপন করছি। আমাদের এ কাজের উপর কেহ ঋন দেয় না। সেই পূর্ব পুরুষের ঐতিহ্য ধরে রেখে আজও বিভিন্ন এলাকা থেকে বাঁশ ও বেত সংগ্রহ করে ঝুড়ি, ডালা, ধামা, পাতি, চাঁচ, কুলা সহ বিভিন্ন প্রকারের সামগ্রী তৈরি করে থাকি। এলাকায় ঝোপ-ঝাড় না থাকায় বেত অনেকাংশে পাওয়া যায় না। শিল্পের সামগ্রী জোগাড় করতে অনেক সময় ও অর্থ লেগে যায়। মহিলারা গৃহস্থলির কাজের পাশাপাশি বাঁশ ও বেতের তৈরি সকল জিনিস তৈরিতে পুরুষের সমান পারদর্শী। মহিলারা পরিবারের বাড়তি আয় হিসেবে প্রতিদিন এই কাজ করে প্রায় পুরুষের কাজের পাশে বাড়তি আয় ১০০-১৫০ টাকা যোগ করে।

সর্বপরি বাঁশ ও বেত শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট কারিগর ও সর্ব মহলের ধারণা: আধুনিক সরঞ্জমের ব্যবহার কমিয়ে সরকারি, বে-সরকারিভাবে কারিগরদের বিভিন্ন সাহায্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে বাঁশ ও বেত শিল্প অর্থাৎ আমাদের দেশের হস্তশিল্প টিকিয়ে রাখা এবং সংশ্লিষ্ট কারিগরদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনে গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *