৮ বছরে হাজার তরুণীকে দুবাইয়ে পাচার, বাধ্য করা হয় দেহ ব্যবসায়
প্রথমে হোটেলে চাকরি দেয়ার কথা বলে ২০-২২ বছরের তরুণী কিশোরীদের প্রলুব্ধ করা হতো। বিশ্বস্ততা অর্জনে বেতন হিসেবে ২০-৩০ হাজার টাকা নগদ পরিশোধও করা হতো। শুধু তাই নয় দুবাইয়ে যাওয়া-আসা বাবদ সব ধরনের খরচও দিত দালাল চক্র। কিন্তু দুবাই যাওয়ার পর তাদেরকে হোটেলে জিম্মি করে জোরপূর্বক দেহ ব্যবসাসহ ডান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো।
গত আটবছরে এভাবে প্রলুব্ধ করে চাকরির নামে দেশের হাজারেরও বেশি তরুণী কিশোরীকে দুবাইয়ে পাচার এবং তাদের দেহ ব্যবসায় জড়াতে বাধ্য করেছে আন্তর্জাতিক নারী পাচার চক্র।
চক্রটির বাংলাদেশের মূলহোতা আজমসহ দুই সহযোগীকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি। গ্রেফতার অন্যরা হলেন ময়না ও মো. আলামিন হোসেন ওরফে ডায়মন্ড।
রোববার (১২ জুলাই) দুপুরে সিআইডির সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম প্রধান ডিআইজি ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, মানব পাচার একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম।
‘দুবাইতে এ চক্রের গডফাদার আজমের তারকাবহুল বিলাসবহুল হোটেলের সন্ধান পেয়েছি। সে ফরচুন পার্ল হোটেল অ্যান্ড ড্যান্স ক্লাব, হোটেল রয়েল ফরচুন, হোটেল ফরচুন গ্রান্ড ও হোটেল সিটি টাওয়ারের অন্যতম মালিক। এরমধ্যে তিনটি হচ্ছে ফোর স্টার একটি থ্রি স্টার মানের। তিনি বাংলাদেশে অর্ধশত দালালের মাধ্যমে কিশোরী অথবা ২০-২২ বছরের মেয়েদের উচ্চ বেতনে কাজ দেয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করতো।’
দালালরা মেয়েদের প্রলুব্ধ করে নির্ধারিত দুটি বিদেশি এয়ারলাইন্স এজন্সির মাধ্যমে দুবাই পাঠাত। দুবাই যাওয়ার পরে তাদের প্রথমে ছোটখাটো কাজ দেয়া হতো। এরপর জোরপূর্বক ড্যান্স ক্লাবে নাচতে বাধ্য করা হতো। আটকে রাখা হতো, খাবার দেয়া হতো না, শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হতো। বৈদ্যুতিক শক পর্যন্ত দেয়া হতো। দেহ ব্যবসায় বাধ্য করা হতো।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুবাই সরকার দূতাবাসকে জানিয়ে চক্রের গডফাদার আজমের পাসপোর্ট জব্দ করে দেশে ফেরত পাঠায়। দেশে ফেরার পর আজম আত্মগোপনে যায়। বারবার নিজের অবস্থান পরিবর্তন করে। নতুন পাসপোর্ট করে সে সীমান্ত দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশে পালানোর চেষ্টা করে। তবে তার আগেই দুই সহযোগীসহ সিআইডির চৌকস দল তাকে আটক করে। এখন পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলার তথ্য পেয়েছি। যার মধ্যে ছয়টি হত্যা মামলা।
যারা দালালি করতো তাদের কী পরিমাণ টাকা দেয়া তো জানতে চাইলে তিনি বলেন, দেশের সহযোগী দালালরা প্রতিটি মেয়ের জন্য ১০ হাজার করে টাকা পেত। আর ভিকটিমদের অগ্রিম বেতন দেয়ার কথা বলে প্রলুব্ধ করা হতো। দুবাই পর্যন্ত ভিকটিমদের যাওয়া খাওয়া থাকার সব খরচ দালাল চক্র পরিশোধ করতো। অগ্রিম বেতন হিসেবে ২০-৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পরিশোধ করতো আজম।
কিন্তু দুবাই ড্যান্সবারে হোটেলে নেওয়ার পর তাদের আর বেতন দেয়া হতো না। এসব ঘটনায় আসামিদের জড়িত থাকার অডিও ক্লিপ ইতিমধ্যে সিআইডি উদ্ধার করছে।
জিজ্ঞাসাবাদে গডফাদার আজম স্বীকার করেছে যে গত আট বছরে সে হাজারেরও বেশি তরুণীকে দুবাই পাচার করেছে। এ বিষয়ে সিআইডি বাদী হয়ে গত ২ জুলাই রাজধানীর লালবাগ থানায় একটি মামলা করেছে, যা সিআইডি তদন্ত করছে।