October 18, 2024
জাতীয়

৮৮ মৃত্যু পর্যালোচনায় ৩৬ জনের ‘ডেঙ্গু পায়নি’ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ডেঙ্গুতে মৃত্যুর তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে সরকারের রোগতত্ত¡, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআর বলছে, তারা ডেঙ্গু সন্দেহে ৮৮টি মৃত্যুর তথ্য পর্যালোচনা করে ৩৬ জনের ক্ষেত্রে এই রোগের প্রমাণ পায়নি।

গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গু বিষয়ক সর্বশেষ তথ্যে বলা হয়, আইইডিসিআরে ডেঙ্গু সন্দেহে ১৭৩টি মৃত্যুর তথ্য এসেছে। সেগুলোর মধ্যে ৮৮টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৫২টি মৃত্যু ডেঙ্গুজনিত কারণে হয়েছে বলে নিশ্চিৎ করেছে আইইডিসিআর।

এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়েছে, এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪ হাজার ৭৬৫ জন। গত জুন থেকে হাজার হাজার মানুষ প্রাণঘাতী এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর খবরও আসতে থাকে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দুইশ’র কাছাকাছি বলা হচ্ছে। তবে শুরু থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে আসা ডেঙ্গুতে মৃত্যুর খবর যাচাই করছিল আইইডিসিআর। ফলে ডেঙ্গুতে মৃত্যু সংক্রান্ত তাদের দেওয়া সংখ্যার সঙ্গে সংবাদমাধ্যমে আসা সংখ্যার বড় ব্যবধান হচ্ছিল। এতে জনমনে আতঙ্ক তৈরি হচ্ছে মন্তব্য করে ডেথ রিভিউ প্রক্রিয়া বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন আইইডিসিআর-এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক মাহমুদুর রহমান।

পর্যালোচনা পদ্ধতি সম্পর্কে কমিটি প্রধান আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেবরিনা ফ্লোরা  বলেছিলেন, ডেঙ্গুতে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তারা তিনভাবে কাজ করেন। প্রথমত, সব ক্লিনিক্যাল ডকুমেন্ট, চিকিৎসার তথ্য, হাসপাতালে থাকার সময়কার তথ্য পর্যালোচনা করতে হয়। তারপর ভার্বাল অটোপসি (মৃত্যুর কারণ বোঝার জন্য উপসর্গ ও শারীরিক অবস্থার তথ্য বিচার) এবং নমুনা সংগ্রহ করেন।

আমরা যখন ল্যাবের পরীক্ষায় পিসিআর (রক্তে ডেঙ্গুর জন্য দায়ী ভাইরাসের জিন অবশেষ) পেয়ে যাই, তখন আমরা সরাসরি বলতে পারি যে ডেঙ্গুতেই তার মৃত্যু হয়েছে। আর বাকি ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করা হয় ডেঙ্গুর ‘সম্ভাব্য সংক্রমণ’ হিসেবে। মৃতের তালিকায় আমরা সেসব নাম দিই না।

ডেঙ্গুর সর্বশেষ অবস্থার তথ্য সংক্রান্ত প্রতিবেদনে ৮৮ মৃত্যুর মধ্যে ৫২টি ডেঙ্গুজনিত কারণে বলে নিশ্চিত হওয়ার তথ্য উলে­খ করায় বাকিদের বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তারের কাছে।

জবাবে তিনি বলেন, পর্যালোচনায় বাকি ৩৬ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া যায়নি। এদিকে আগের দিনের চেয়ে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এই সময়ে ডেঙ্গু নিয়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ২৫১ জন, যে সংখ্যা আগের দিন ছিল এ হাজার ২৯৯ জন।

নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে ৫৭৭ জন এবং বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ৬৭৪ জন ভর্তি হয়েছেন। আইইডিসিআর-এর পরিচালক মীর জাদি সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, অনেক ডেঙ্গু রোগী এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে যায়। তখন রোগী হিসেবে তার নাম কিন্তু একাধিক হাসপাতালেই এন্ট্রি হয়। সে হাসপাতালগুলো থেকে যখন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তালিকা আসে, তখন জানার উপায় নেই যে রোগীরা এক না একাধিক হাসপাতালে ছিলেন। আমরা একটা ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করার কথাও ভাবছি।

বর্তমানে সারা দেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু নিয়ে চিকিৎসাধীন আছেন ৫ হাজার ৫৬২ জন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৮১ জন রয়েছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে, অন্যান্য বিভাগে রয়েছেন ২ হাজার ৪৮১ জন।

প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৮ জন, খুলনায় ১৪৯ জন, রংপুরে ২০ জন, রাজশাহীতে ৭৮ জন, বরিশালে ১১১ জন, সিলেটে ৯ জন এবং ময়মনসিংহে ১৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদিকে সোমবার পর্যন্ত সারা বাংলাদেশের হাসপাতালগুলো থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৫৯ হাজার ৩০ জন। গত রোববার এ সংখ্যাটি ছিল ৫৭ হাজার ৪০৫ জন।

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *