December 26, 2024
জাতীয়

৭ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধকারীরা নিঃশেষ হয়ে যাবে : প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা এক সময় বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ ‘নিষিদ্ধ করেছিল’ তারা ধীরে ধীরে আস্তাকুঁড়ের দিকে যাচ্ছে এবং তারা আস্তাকুঁড়েই চলে যাবে, আর নিঃশেষ হয়ে যাবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা এ বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের মানুষকে ভালোবাসবে তারাই বেঁচে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পছন্দের ছিল না বলেই ‘জিয়াউর রহমান ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ’ করে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর ৭ই মার্চের ভাষণ কেন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সেটা আপনারা বিবেচনা করে দেখেন। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রথমে মুশতাক বেঈমানি করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে দুই মাস ক্ষমতায় থাকতে পারল না। এরপর আসল জিয়াউর রহমান এবং এই ভাষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর ছবিও নিষিদ্ধ। সব কিছুই নিষিদ্ধ ছিল। প্রশ্ন হচ্ছে এটাই যে, তাহলে নিষিদ্ধ কেন ছিল? যে ভাষণ পাকিস্তানিরা পছন্দ করে না। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পছন্দের ছিল না বলেই জিয়াউর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। সেটাই একের পর এক অনুসরণ করে গেছে মিলিটারি ডিক্টেটর যারা এসেছে বা যারা ক্ষমতা ওই ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রেখেছিল।
বৈরী সময়েও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পিছু হটেননি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সারা বাংলাদেশে ৭ই মার্চ আসলে গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে সব জায়গায় কিন্তু এই ভাষণ বাঁজতে শুরু হল। এই ভাষণ বাজাতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী জীবন পর্যন্ত দিয়েছে।
আমি বারবার একটা প্রশ্ন রাখি কেউ উত্তর দিতে পারে না। দিতে পারবেও না। পৃথিবীর বহু দেশে নেতারা ভাষণ দিয়েছে। আড়াই হাজার বছরের ভাষণ নিয়ে গবেষণা হয়েছে। কিন্তু এই ভাষণটি হয়ে গিয়েছে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। পৃথিবীর কোনো ভাষণ এতবার বাজানো হয় নাই। সারা বিশ্বে এই ভাষণ এখনো আবেদন রাখে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জয় বাংলা স্লোগানও এই দেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। যেই জয় বাংলা স্লোগান নিয়ে আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা শত্র“র সঙ্গে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে অর্থাৎ তারা জীবন দিয়েছে, সেই স্লোগানটাও কিন্তু ’৭৫ এর পর নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
কিন্তু বাস্তবতা হল, সত্যকে কেউ কখনো অস্বীকার করে মুছে ফেলতে পারে না। আর সব থেকে বড় কথা বাঙালির জন্য জাতির পিতা যে কথা বলে গিয়েছিলেন ৭ই মার্চের ভাষণে- কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। ২১টা বছর দাবায় রাখার চেষ্টা করেছে এই ষড়যন্ত্রকারীরা-খুনিরা, পারে নাই। বক্তব্যের শুরুর দিকেই বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ দিতে যাওয়ার আগের মুহূর্তের স্মৃতিচারণ করেন তার মেয়ে শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, এই ভাষণ তিনি (বঙ্গবন্ধু) যখন দিতে যাবেন অনেকে অনেকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আমাদের অনেক বুদ্ধিজীবী তারা পয়েন্ট লিখে নিয়ে আসছেন, অনেক চিন্তাবিদ তারা বিভিন্ন পয়েন্ট দিচ্ছেন, বাঙালি যারা তখন সরকারি চাকরি করে সিএসপি অফিসার তারাও তালিকা করছেন, আমাদের অনেক প্রফেসররা তারাও তালিকা করছেন, আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে থেকে অনেক অনেক পয়েন্ট লিখে নিয়ে আসা হচ্ছে, আমাদের ছাত্রনেতারা এসে বলে যাচ্ছেন- এটা বলতে হবে ওটা বলতে হবে। এমন বহু কথা তখন আমাদের বাসায়। সমানে কাগজে কাগজে বস্তা বস্তা ভরে যাচ্ছে।
যখন ভাষণটা দিতে যাবেন, আমার মা তার কথা আমি সব সময় মনে করি এই কারণে যে, কোনো একটা সময় যখন একটা সিদ্ধান্তের সময় আসে, উনার (বঙ্গবন্ধুর) কাজের সময় আমার মা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন।
ওই সময়ের ঘটনা নিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, অনেক লোক আমাদের বাসায় তিনি আব্বাকে খাবার দিলেন। পরে বললেন তোমাকে অন্তত ১৫ মিনিট বিশ্রাম নিতে হবে এবং খাবার শেষ হওয়ার পর আব্বা পান খেতেন। মা নিজে মোড়াটা টেনে বসলেন। পান সাঁজালেন। পান দিলেন এবং আমার একটা অভ্যাস ছিল আব্বা শুয়ে পড়লে মাথার পাশে আমার জন্য একটু জায়গা থাকত। সেখানে বসে আব্বার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতাম, মাথা টিপে দিতাম। এটা একটা অভ্যাস ছিল আমার।
আমি ওখানে বসা। মা পানটা দিলেন আর বললেন, আজকে সেখানে-ময়দানে হাজার হাজার লোক এসেছে। সকল মানুষের ভাগ্য তোমার হাতে। অনেকে অনেক কথা বলবে তুমি সারাটা জীবন সংগ্রাম করেছে এদেশের মানুষের জন্য। তুমি জানো এ দেশের মানুষের জন্য কোনটা প্রয়োজন, কোনটা প্রয়োজন না। তোমার থেকে বেশি আর কেউ জানে না।
কাজেই তোমার কারো কথা শোনার দরকার নেই। তোমার মনে যে কথা আসবে তোমার মন থেকে তুমি সেই কথা বলবা। সেটা এদেশের মানুষের জন্য সবচেয়ে সত্য হিসেবে প্রতিভাত হবে। ৭ই মার্চের ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ নয়, সারা বিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের প্রেরণা হিসেবে যুগ যুগ ধরে টিকে থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ এবং উপপ্রচার সম্পাদক রুহুল আমিনের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে দলের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মো. নাসিম, মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *