৬০ বছরে প্রথম শূন্য প্রবৃদ্ধির মুখে এশিয়া
গত ৬০ বছরের মধ্যে চলতি বছরে প্রথমবারের মতো এশিয়া মহাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থমকে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। করোনা ভাইরাস মহামারিতে এ অঞ্চলের সেবাখাত এবং প্রধান রপ্তানি খাতগুলো অভূতপূর্ব ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
আইএমএফের এশিয়া এবং প্যাসিফিক অঞ্চলের পরিচালক চ্যাংইয়ং রি বলেন, ‘মহামারি নিয়ন্ত্রণে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা, সামাজিক দূরত্বায়ন এবং অন্য নির্দেশগুলোতে যেসব পরিবার এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তাদের সহায়তার লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে নীতি নির্ধারকদের।’
ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এ সময়টা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে অনিশ্চিত এবং সংকটময়। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলও এর বাইরে নয়। এ অঞ্চলে করোনা ভাইরাসের প্রভাব গুরুতর এবং নজিরবিহীন হতে যাচ্ছে। এটা সচরাচর ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার মতো সময় নয়। এশীয় দেশগুলোকে সব ধরনের নীতি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আইএমএফ জানায়, গত ৬০ বছরে এই প্রথম এশিয়ার অর্থনীতিতে শূন্য প্রবৃদ্ধি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
অন্য অঞ্চল যে অর্থনৈতিক সঙ্কোচনের মুখে পড়েছে, এশিয়া তার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। তবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার সময় যে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ গড় প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল, বর্তমান অবস্থা তার চেয়েও খারাপ।
মহামারি নিয়ন্ত্রণের নীতিগুলো সফল হলে আগামী বছর এশীয় অর্থনীতি ৭ দশমিক ৬ শতাংশ সম্প্রসারিত হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ কিন্তু এ অনুমানও খুব অনিশ্চিত।
মানুষকে ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়ায় এবং প্রতিষ্ঠান বন্ধ করায় এশীয় অঞ্চলের সেবাখাত ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারগুলোর চাহিদা কমতে থাকায় এশীয় অঞ্চলের রপ্তানিখাতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
চলতি বছরে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে ১ দশমিক ২ শতাংশ, যদিও আইএমএফের জানুয়ারি মাসের পূর্বাভাস ছিল ৬ শতাংশ। সামাজিক দূরত্বায়নের কারণে রপ্তানি এবং অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম কমায় প্রবৃদ্ধি নিম্নমুখী।
তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশটিতে আগামী বছর ৯ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে আইএমএফ। দেশটিতে নতুন করে ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে এ সম্ভাবনা অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।
রি জানান, ক্ষতিগ্রস্ত গৃহস্থালি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সহায়তার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে এশীয় নীতি নির্ধারকদের। সেই সঙ্গে অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত তারল্য থাকতে হবে। তবে জনগণকে সরাসরি অর্থ সহায়তা দেওয়ার বিষয়ে সতর্ক করেন রি। কেননা এশীয় দেশগুলোর জন্য এটি সর্বোত্তম নীতি নাও হতে পারে। এ অঞ্চলের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত ছোট প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করা যেন কর্মসংস্থানে ধস না নামে। প্রয়োজনে বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর কাছে অর্থ সহায়তা চাইতে হবে এ দেশগুলোর।