৫৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে লুটপাটের অভিযোগ আসামী মিল্টনের স্ত্রীর
খুলনার মশিয়ালীতে ট্রিপল হত্যাকাণ্ড
দ. প্রতিবেদক
খুলনার খানজাহান আলী থানাধীন মশিয়ালী গ্রামের ট্রিপল হত্যা মামলার আসামী মিল্টনের স্ত্রী শারমিন সুলতানা বাদী হয়ে গ্রামের ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও অর্থিক ক্ষতিসাধনের অভিযোগ করেছেন আদালতে। মুখ্য মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট-২ অভিযোগটি আমলে নিয়ে ডিবি পুলিশকে আগামী ৬ অক্টোবরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দিয়েছেন। যার সি আর নং ৭০, তাং ২০/৮/২০।
এ ঘটনায় গ্রামবাসী নতুন করে প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছেন। তারা বলছেন, হত্যাকারী সন্ত্রাসীদের রক্ষা করতেই এমন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
মিল্টনের স্ত্রী শারমিন সুলতানার অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, হত্যাকান্ড ঘটনার পূর্বে মশিয়ালী গ্রামের মৃত বারিক শেখের ছেলে মো. মুজিবর শেখকে সিএন্ডবি’র একটি বাসা হতে তিন রাউন্ড বন্দুকের গুলি ও দুই রাউন্ড পিস্তলের গুলিসহ পুলিশ গ্রেফতার করেছি। এতে গ্রামের কয়েকজন তার স্বামী মিল্টনসহ জাকারিয়া ও জাফরিনের বিরুদ্ধে মুজিবর শেখকে গুলিসহ পুলিশকে ধরিয়ে দিয়েছে এমন কথা এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে গণ্ডগোল সৃষ্টি করে। এতে দলবদ্ধ হয়ে তারা রাম দা, লোহার রড ও তাদের নিকট থাকা বিভিন্ন অস্ত্রপাতি নিয়ে অতকৃত ভাবে মিল্টনসহ তার ভাইদের উপর হামলা করে। উভয় পক্ষের মধ্যে প্রচন্ড মারামারির এক পর্যায়ে ঘটনাস্থলে একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর ঘটনার পর শহিদুল শেখ(৪৮) এর নেতৃত্বে তারা মিল্টনের বাড়ীতে প্রবেশ করে লুটপাট করে। ঘরের মধ্যে থাকা আসবাপত্রে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ২ কোটি ১৫ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৮৮ টাকার ক্ষতিসহ বিভিন্ন কাগজপত্র পুড়ে যায়। এছাড়া তারা জাকারিয়া ও জাফরিনেরসহ ১৪ থেকে ১৫ টি বাড়ীতে একই কায়দায় পুড়িয়ে দিয়েছে।
ওই অভিযোগ পত্রে যাদের নাম লেখা হয়েছে তারা হলেন, শহিদুল শেখ (৪৮), মিটুল শেখ (৪৩), খোকন শেখ (৫০), রিজ্জাক শেখ (৫৩), রজব আলী শেখ (৫৫), রেজাউল শেখ(৪৫), রফিক শেখ (৪৫), ছাইদ শেখ (৪০), আকাশ শেখ (২৫), সাগর (১৪), সুজন শেখ (২৮). আজাদ শেখ (৪৫), মান্নান শেখ (৪২), রিপন শেখ (৩৩), রেজোয়ান আকুঞ্জী (৩৬), তাহের শেখ (৪৮), ফারুক শেখ (২৯), কামরুল শেখ (৩২), তরিকুল শেখ (২৫), জাহিদ মোল্যা, রফিকুল, মো. মুজিবর শেখ (৪২), রাসেল (২৭), আবুল শেখ (৩২), হেমায়েত (২৫), অলিয়ার শেখ (৩২), রাকিব শেখ (১৯), হাসান (২৭), মাসুম বিল্লাহ (৩৭), আক্তার (৫০), সুমন শেখ (২২), রাজু শেখ (৩২), আলামিন শেখ (৪০), নাজমুল শেখ (২২), উজ্জল শেখ (৩৯), নুর ইসলাম নুর (৪১), বিপ্লব বিশ^াস (২৩), সোহেল (২৭), জুয়েল মোল্যা (৩২), শাকিল গাজী (২২), মোস্তাকিম শেখ (২৫), শোভন মোল্যা (২৪), মিলন শেখ (২৫), বাবুল শেখ (৪০), মনিরুল শেখ (৪৮), সালাউদ্দিন গাজী (৩৫), আলাউদ্দিন গাজী (৩২), রেজওয়ান গাজী (২৬), আলিম গাজী (৪৫), ইউসুফ (৪০), আলামিন (২৫), রহিম শেখ (৩৫), জিহাদুল শেখ(২৭)।
এদিকে মশিয়ালীর আলোচিত ট্রিপল হত্যার একমাস পর গ্রামের ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করায় গ্রামে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীরা নতুন করে মিছিল, মানববন্ধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। আগামী শুক্রবার (২৭ আগস্ট) বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা এবং ৪ সেপ্টেম্বর স্মরণ সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি করবেন বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৬ জুলাই রাতে খুলনা মহানগরীর ইস্টার্ণগেটের মশিয়ালী এলাকায় শেখ জাকারিয়া বাহিনীর গুলিতে নিহত হন আটরা-গিলাতলা ইউনিয়নের মশিয়ালী গ্রামের মৃত বারিক শেখের ছেলে মোঃ নজরুল ইসলাম (৬০) ও একই গ্রামের মোঃ ইউনুচ আলীর ছেলে গোলাম রসুল (৩০)। এসময়ে গুলিবিদ্ধ হন মোঃ সাইফুল ইসলাম, আফসার শেখ, শামীম, রবি, খলিলুর রহমান ও মশিয়ার রহমানসহ আরও কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ সাইফুল ইসলাম পরদিন সকালে মারা যান। অপরদিকে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীর গণপিটুনিতে জাকারিয়ার চাচাতো ভাই জিহাদ শেখকে নিহত হয়। এঘটনায় নিহত সাইফুল ইসলামের পিতা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৮ জুলাই রাতে ২২ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫-১৬ অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২৫ জুলাই রাতে মামলাটির তদন্তভার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক এনামুল হকে দেওয়া হয়।
ডিবি পরিদর্শক এনামুল বলেন, ওই মামলার এজাহারভুক্ত ২২ আসামির মধ্যে ১০ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার তিন নম্বর আসামী জাফরিনকে ২ দফায় ১৩ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড চলাকালে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, দেশি দুটি পিস্তল ও কয়েকটি গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারের হওয়া ১০ জনের মধ্যে ৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সর্বশেষ গ্রেফতার হওয়া মোঃ আলমগীর সরদার ওরফে বাবু নামের আসামী বর্তমানে রিমান্ডে আছেন। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ এম জে এফ