November 27, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

৫০ টাকার জন্য রোগীর অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেন ওয়ার্ডবয় ধলু

বগুড়ার একটি সরকারি কলেজ হাসপাতালে গুরুতর আহত এক রোগীর মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলার কারণে আহত রোগীর মৃত্যু ঘটে। দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলু মাত্র ৫০ টাকা বকশিসের জন্য রোগীর মুখের মাস্ক খুলে ফেলেন। নিহত স্কুলছাত্র বিকাশ চন্দ্র দাশ গাইবান্ধার স্থানীয় একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন।

নিহত শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে গ্রিল ওয়েল্ডিংয়ের কাজ করে নিজের পড়াশোনা ও পরিবারের খরচ চালাতো। গত ৯ নভেম্বর ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশ সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে গাইবান্ধার সাঘাটাতে মোটরসাইকেলের সঙ্গে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হলে স্থানীয় হাসপাতালের চিকিৎসকের পরামর্শে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাত ১০টার দিকে অভিভাবকরা বগুড়ার সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়।

চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত বকশিসের টাকা না পেয়ে অক্সিজেন মাস্ক খুলে দেওয়ায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় মো. আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে গ্রেফতারে র্যাব-১২ ও র্যাবের গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) ভোরে রাজধানীর আব্দুলাহপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, নিহত শিক্ষার্থী আহতাবস্থায় হাসপাতালে পৌঁছালে জরুরি বিভাগের হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিমের অভিভাবকের কাছে চিকিৎসা দালালির নামে ৫০০ টাকা দাবি করে। পরে ২০০ টাকায় রাজি হয় ধলু। ভিকটিমকে জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়ার পরে চিকিৎসক রোগীকে জরুরি সেবা দিয়ে অক্সিজেন লাগিয়ে দেন ও ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। এরপর ভিকটিমকে ধলু সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। বেড না থাকায় ভিকটিমকে ফ্লোরে বেড দেওয়া হয়। এরপর ভিকটিমের অভিভাবকের কাছে টাকা চাইলে তাদের কাছে ১৫০ টাকা থাকায় তাকে ১৫০ টাকা দেওয়া হয়। তখন তিনি আরও টাকা দাবি করলে বিকাশ চন্দ্র দাশের অভিভাবক বলে আমাদের কাছে আর কোনো টাকা নেই।

তখন ধলু উত্তেজিত হয়ে ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশের অক্সিজেন মাস্ক খুলে দিয়ে গালিগালাজ করেন। এরপরই শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভিকটিম মারা যান। তখন হাসপাতালের অন্যান্য রোগী ও পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন লোকজন জড়ো হয়। এসময় হাসপাতালের নিরাপত্তাকর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। তখন সুযোগ বুঝে আসাদুল ইসলাম মীর ধলু পালিয়ে যায়।

নিহত শিক্ষার্থী বিকাশ চন্দ্র দাশের মৃত্যুর ঘটনায় বুধবার দিবাগত রাতে বগুড়া সদর থানায় আসাদুল ইসলাম মীর ধলুকে আসামি করে একটি মামলা করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মামলা নং-২৯। নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে ও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে প্রচারিত হয়।

গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসাদুল ইসলাম মীর ধলু ভিকটিম বিকাশ চন্দ্র দাশ চিকিৎসারত অবস্থায় অক্সিজেন মাস্ক বিচ্ছিন্ন করার বিষয়টি স্বীকার করেন। ধলু বিগত ছয় বছর ধরে ওই হাসপাতালে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মী (পরিচ্ছন্নতাকর্মী) হিসেবে অস্থায়ীভাবে কাজ করে আসছে। প্রতিদিন তিনি দুপুর ২টা পর্যন্ত কাজ করার পর বিকেল থেকে হাসপাতালের জরুরি আউটডোরে রোগীদেরকে ট্রলিতে করে পৌঁছে দেওয়া বা অন্যান্য দালালিসহ বিভিন্ন কাজ করতেন। তিনি এই কাজের মাধ্যমে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে অর্থ আদায় করতেন।

এই ঘটনার পর সেখান থেকে ধলু প্রথমে নওগাঁ ও পরে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রামে আত্মগোপন করার চেষ্টা করেন। এরপরই র্যাব রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে তাকে গ্রেফতার করে।

এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এই ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *