৪ দিন পর প্রাণ ফিরেছে পাটকলে
আন্তঃমন্ত্রণালয় ও বিজেএমসি’র সাথে শ্রমিক নেতাদের বৈঠক আজ
জয়নাল ফরাজী
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান এমপির আশ্বাসে পাটকল শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন আমরণ অনশন তিনদিনের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্পা এলাকায় পৃথক তিন স্থানের শ্রমিকরা অনশনরত স্থান ত্যাগ করেন। শুক্রবার রাতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী ও খুলনা জেলা প্রশাসনের সাথে শ্রমিকদের ত্রি-পক্ষীয় বৈঠকে আমরণ অনশন কর্মসূচির ৪র্থ দিনে আন্দোলন স্থগিত করা করেছে শ্রমিক নেতারা।
গতকাল শনিবার ভোর ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিভিন্ন সময় স্ব স্ব কর্মস্থলে যোগ দিয়ে শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন শুরু করে। এদিকে জাতীয় মজুরী কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আজ রবিবার সকাল ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং বিকেল তিনটায় বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হবে।
পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ, বকেয়া মজুরী-বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরী ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ কার্যকর, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকুরীচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পুনর্বহাল, সকল মিলে সেটআপের অনুকুলে শ্রমিক-কর্মচারীদের শুন্য পদের বিপরীতে নিয়োগ ও স্থায়ীসহ ১১ দফা দাবিতে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচির ঘোষণা করে। এ কর্মসূচির অংশ হিসাবে গত ২৫ নভেম্বর রাজপথে ভূখা মিছিল, ২৭ নভেম্বর প্রতীকি অনশন, ২ ডিসেম্বর বিক্ষোভ মিছিল, ২ , ৩ ও ৮ ডিসেম্বর সভা- সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন।
কর্মসূচির শেষ দিন হিসাবে ১০ ডিসেম্বর রাজপথে আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করে খুলনা-যশোর অঞ্চলের প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিক। শ্রমিকদের অনশনের ২য় দিনে গত ১১ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় রাষ্ট্রায়ত্ত ২৬টি পাটকলের সিবিএ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের সাথে জরুরী বৈঠক বসেন চেয়ারম্যান আঃ রউফ। সেই বৈঠকে কোন সমাধান না হওয়ায় অব্যাহত থাকে শ্রমিক আন্দোলন। এই পরিস্থিতিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক নেতাদের সাথে ২ দফা বৈঠকে বসেন। পরে গতকাল সন্ধ্যায় অনশন চলাকালে আন্দোলনরত শ্রমিক নেতাদের সাথে পুনরায় খুলনা বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
এ সময় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ ইউসুপ আলী, শ্রম অধিদপ্তরের পরিচালক মোঃ মিজানুর রহমান, খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের পুলিশ সুপার মোঃ কাউসার শিকদার, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ সৈয়দ আলী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ আশরাফুল ইসলাম, খুলনার পাটকলগুলোর সিবিএ ও ননসিবিএ নেতাদের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক আঃ হামিদ সরদার, যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সোহরাব হোসেন, সাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির, শ্রমিক নেতা বেল্লাল হোসেন, আঃ মান্নান, সাইফুল ইসলাম লিঠু, মোঃ আলাউদ্দীন, মোঃ ইউসুফ আলী, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শেখ মোঃ ইব্রাহীম, মোঃ হারুন-আর- রশিদ, মোঃ আবু হানিফ ও মোঃ আনিছুর রহমান।
দীর্ঘ তিন ঘন্টার এ বৈঠকে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ান শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই পাটকল এবং শ্রমিকদের ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় খুলনার বন্ধ হওয়া পাটকলগুলো চালু হয়েছে। এ সরকারের আমলে মজুরী কমিশন ২০১৫ পাশ হয়েছে এবং এ সরকারই তা বাস্তবায়ন করবে।
প্রতিমন্ত্রী শ্রমিক নেতাদের বলেন, দাবি-দাওয়া পূরণ করতে একটি সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ প্রেক্ষাপট তৈরি করা দরকার। এজন্য শ্রমিকদের চলমান অনশন ধর্মঘট প্রত্যাহার করার জন্য তিনি শ্রমিকদের প্রতি আহŸান জানান।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, তিনি নিজেই একজন শ্রমিক নেত্রী। তাই শ্রমিকদের স্বার্থে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করবেন। এছাড়া জাতীয় মজুরী কমিশন ২০১৫ বাস্তবায়নে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় আগামী ১৫ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা এবং বিকেল তিনটায় বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশন (বিজেএমসি)’র সভাকক্ষে শ্রমিক নেতাদের সাথে সভা অনুষ্ঠিত হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রীর আশ্বাসে পাটকল শ্রমিকদের চলমান আন্দোলন আমরণ অনশন তিনদিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। শুক্রবার রাত ১০টায় খালিশপুর, আটরা ও নওয়াপাড়া শিল্পাঞ্চল এলাকায় অনশন স্থলে বক্তৃতার মাধ্যমে শ্রমিক নেতারা অনশন ৩ দিনের জন্য স্থগিতের কথা জানালে উত্তেজনে ছড়িয়ে পড়ে। দফায় দফায় বিভিন্ন শ্রমিক নেতারা অনশনরতদের অনুরোধ জানালে রাত ১১টায় খালিশপুর, দৌলতপুর, আলীম, ইর্ষ্টার্ন, জেজেআই ও কার্পেটিং জুট মিলের শ্রমিকরা অনশনরত স্থান ত্যাগ করেন। প্লাটিনাম ও ক্রিসেন্ট ও ষ্টার জুট মিলের শ্রমিকরা নেতারদের প্রস্তাব প্রত্যাখান করে অনশন চালিয়ে যায়। এ সময় সিবিএ-নন সিবিএ নেতাদের সাথে শ্রমিকদের কয়েক দফা বাক-বিতন্ডার ঘটনা ঘটে। পরে শুক্রবার রাত ১২টায় প্লাটিনাম ও রাত আড়াইটায় ক্রিসেন্ট এবং ষ্টার জুট মিলের শ্রমিকরা অনশন কর্মসূচি ৩ দিন স্থগিত সমর্থন জানিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
গতকাল শনিবার ভোর ৬টা থেকে শ্রমিকরা নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিয়ে পর্যায়ক্রমে খুুলনা-যশোর অঞ্চলের সকল পাটকলের উৎপাদন শুরু করে। তবে গতকাল ভোর থেকে ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নন সিবিএ নেতারা শ্রমিক সভার মাধ্যমে মিল চালু করা আহবান জানালে শ্রমিকদের একটি অংশ বিরোধীতা করে। এ ঘটনায় মিল অভ্যান্তর সহ বিআইডিসি রোডে উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। দুপুর আড়াটায় স্বেচ্ছায় শ্রমিকরা মিলের উৎপাদন শুরু করে।
পাটকলের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিজেমমসি’র চেয়ারম্যান আঃ রউফ বলেন, শ্রমিকদের দাবির বিষয় নিয়ে চেষ্টা করা হচ্ছে সমাধানের জন্য। আজও (শনিবার) প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আলোচনার জন্য যাচ্ছি। তবে বিশৃংখলা না করে মিলের উৎপাদন স্বাভাবিক রাখার জন্য শ্রমিক-কর্মচারীরদর প্রতি আহবানও জানান বিজেএমসি’র চেয়ারম্যান।