November 27, 2024
জাতীয়লেটেস্টশীর্ষ সংবাদ

৪৫০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয়েছে আইএমএফ: অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আহম মোস্তফা কামাল বলেছেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে আমরা ঋণ পেতে যাচ্ছি ইনশাল্লাহ। তাদের (আইএমএফ) কাছে আমরা যেভাবে চেয়েছিলাম, সেভাবেই তারা ঋণ দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এ ঋণের পরিমান ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার (৪৫০ কোটি ডলার)। সাত কিস্তিতে ২০২৬ পর্যন্ত ঋণ আসবে। প্রথম কিস্তি আসবে আগামী বছরের (২০২৩) ফেব্রুয়ারিতে। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডে ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। তিন মাসের মধ্যে সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে এবং বোর্ড চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।

বুধবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে আইএমএফ থেকে চলমান ঋণ আলোচনা নিয়ে সফররত প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী এ কথা জানান।

এসময় অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।

অর্থমন্ত্রী জানান, আইএমএফ মিশন জানিয়েছে, তাদের কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে ঋণ প্রস্তাবের সব আনুষ্ঠানিকতা ও চূড়ান্ত বোর্ড অনুমোদন সম্পন্ন হবে। ঋণটি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চার বছর মেয়াদী। মোট ঋণের পরিমাণ হবে ৩ দশমিক ৪৬৮ বিলিয়ন এসডিআর, যা বর্তমান বিনিময় হার অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ঋণ মোট সাত কিস্তিতে পাওয়া যাবে। আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ আইএমএফ প্রথম কিস্তিতে ৩৫২ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন এসডিআর অর্থ ছাড় করতে পারবে বলে আশা করছি। বাকি ঋণ প্রতি ছয় মাস অন্তর ৫১৯ মিলিয়ন এসডিআর হিসেবে ছয়টি সমান কিস্তিতে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাওয়া যাবে। সুদের হার হবে ফ্লোটিং, বর্তমান এসডিআর ইন্টারেস্ট রেট অনুযায়ী মোট ঋণের ওপর গড় সুদের হার হবে ২.২ শতাংশ।

এছাড়া এই ঋণের তিনটি অংশ, প্রথম অংশের ৮২২ দশমিক ৮২ মিলিয়ন এসডিআরের জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না, অর্থাৎ সম্পূর্ণ সুদমুক্ত। দ্বিতীয় অংশে ১৬৮২ দশমিক ৬৮ মিলিয়ন এসডিআরের ফ্লোটিংয়ের সঙ্গে আরও এক শতাংশ সুদ হার যোগ হবে এবং তৃতীয় অংশে এক বিলিয়ন এসডিআরের ফ্লোটিংয়ের সঙ্গে আরও শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ হার যোগ হবে।

তিনি বলেন, সারা বিশ্বের অর্থনীতিই এখন একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। উন্নত থেকে উন্নয়নশীল সব দেশে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ঘটেছে। প্রায় সব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমেছে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে এ উত্তাপের আঁচ আমাদের অর্থনীতিতেও কিছুটা লেগেছে। এ অস্থিরতা যাতে কোনো ধরনের সংকটে ঘনীভূত না হয় তা নিশ্চিত করতেই আমরা আগাম সতর্কতা হিসেবে আইএমএফের কাছে ঋণের জন্য অনুরোধ করেছিলাম।

মুস্তফা কামাল বলেন, আইএমএফের সঙ্গে এর আগে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। চলমান ঋণ আলোচনার পর্বটি আজ (৯ নভেম্বর) আমরা সফলভাবে শেষ করেছি। আমরা যেভাবে ঋণ চেয়েছিলাম, ঠিক সেভাবেই পেতে যাচ্ছি বলে আমি আশাবাদী।

তিনি বলেন, আইএমএফের সফররত দলটি বাংলাদেশ সরকারের সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমাদের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভাল বলে তারা আমাদেরকে জানিয়েছেন। আইএমএফ টিম, আমাদের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কারের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। সে অনুযায়ী আমরা চার বছর মেয়াদি ঋণ কর্মসূচি নিতে যাচ্ছি।

অর্থমন্ত্রী আইএমএফের এই ঋণ কর্মসূচির ক্ষেত্রে অর্থনীতির বহিঃখাতকে স্থিতিশীল করা; ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণকে সামনে রেখে অর্থনীতিকে শক্ত ভিত্তি দেওয়া; আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা এবং বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা করে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া- এই চারটি মূল লক্ষের কথা উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী আমাদের চলমান সংস্কার কার্যক্রমের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, সরকারের বাজেট ঘাটতি ধারণযোগ্য পর্যায়ে রাখা হবে। যা গত প্রায় ১৪ বছর যাবত আমরা করে আসছি। আমাদের সরকারের সবসময় প্রচেষ্টা থাকে বাজেট ঘাটতিকে জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যে সীমিত রাখা। গত বছর আমাদের বাজেট ঘাটতি ছিল ৫.১ শতাংশ যা এই অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশ ধরা আছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তার মতো সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় বাড়ানো যা আমরা প্রতি অর্থবছরে ক্রমান্বয়ে করছি। সামাজিক নিরাপত্তা খাতে চলতি অর্থবছরে আমাদের বরাদ্দ রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের প্রায় ১৭ শতাংশ। আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নতুন কয়েকটি আইন প্রণয়ন এবং পুরোনো কয়েকটি আইনের সংশোধনের চলমান কার্যক্রম ত্বরান্বিত করা; রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার জোরদার এবং কর প্রশাসনের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানো হবে। ভ্যাট আদায়ের জন্য আমরা ইএফডি মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছি। এযাবত ৬ হাজার ৭৩২টি মেশিন স্থাপন করা হয়েছে।

আগামী বছরে আরও ৬০ হাজার মেশিন স্থাপন করা হবে এবং পরবর্তী ৪ বছরে ২ লাখ ৪০ হাজার মেশিন স্থাপিত হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয়ের ব্যবস্থাটি আন্তর্জাতিক বাজারের মূল্যের সঙ্গে সময়ে সময়ে সমন্বয় করা হবে। যাতে সামনে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলে দেশের অভ্যন্তরেও তা একইভাবে কমানো যায়। টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের কাজটি ধীরে ধীরে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া, যা আমরা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং সেদিকে লক্ষ্য রেখে উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা; একটি দুর্যোগ ঝুঁকি অর্থায়নের পরিকল্পনা করা, যার মধ্যে দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার বিষয়টিও থাকবে ইত্যাদি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *