২৮ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকোচনের মুখে রাশিয়ার অর্থনীতি
ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলোর নিষেধাজ্ঞার ফলে তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় সংকোচনের মুখে রাশিয়ার অর্থনীতি। দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ পূর্বাভাস জানাচ্ছে এ তথ্য।
মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) হিসাব নিয়ে কথা বলতে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, এবছর রাশিয়ার অর্থনীতি ১২ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা আছে, যা দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রত্যাশিত আট শতাংশ সংকোচনের চেয়েও বেশি। যদিও ইউক্রেনে হামলার পর রুশ সরকার জনসাধারণের সামনে দেশটির অর্থনৈতিক পূর্বাভাস প্রকাশ করেনি।
রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় গত মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায়, পূর্বাভাসের প্রতিবেদনটি ভুল ছিল। ‘সরকারি সামষ্টিক অর্থনীতির পূর্বাভাসের প্রস্তুতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্তৃপক্ষের অধীনে পড়ে না।’ এতে আরও বলা হয়, তারা আশাবাদ ব্যক্ত করে যে সরকার ও রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত পদক্ষেপগুলো নিষেধাজ্ঞার নেতিবাচক প্রভাব ঠেকানো এবং স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা সম্ভব করবে।
রাশিয়ার ১২ শতাংশ অর্থনৈতিক সংকোচন দেশটির ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে গোলযোগের মধ্যে পড়া অবস্থার মতোই। সোভিয়েত-যুগের অর্থনীতিও যুদ্ধের সময় থেকে এতো বেশি সংকুচিত হতে দেখা যায়নি যখন তারা পুঁজিবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছিল।
মস্কোর ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস কোম্পানি বিসিএস ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ নাটালিয়া লাভরোভা বলেন, প্রধান নেতিবাচক দিকগুলো হলো জ্বালানি নিষেধাজ্ঞা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর রাশিয়ান গ্যাস নেওয়া ছেড়ে দেওয়া ও বিদেশি কোম্পানিগুলোর আরও বেশি বিমুখ হওয়া। আগামী ২০২৩ সাল পর্যন্ত আরও অনেক নেতিবাচক প্রভাবের ইঙ্গিতও দেন তিনি। এই কারণগুলো ছাড়া শুধু বর্তমান নিষেধাজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে, তিনি ২০২২ সালে ১০ দশমিক ৮ শতাংশ এবং ২০২৩ সালে প্রায় ৫ শতাংশ অর্থনীতির সংকোচনের পূর্বাভাস দিয়েছেন।
গত ২৯ এপ্রিল দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছর অর্থনৈতিক সংকোচন ৮ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশের মধ্যে হওয়ার কথা জানায়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস বলছে, সাড়ে আট শতাংশ অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে দেশটিতে। যেখানে ব্লুমবার্গের জরিপ বলছে, অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ।
পূর্বাভাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র বলছে, যদি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পূর্বাভাস সঠিক হয়, তবে এটি দেশটির প্রায় এক দশকের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ধস আনবে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় এবং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দেশটির জ্বালানিসহ রপ্তানির মূল উপাদানগুলোতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তৎপরতা হওয়ায় আরও বেশি অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয়ের গণমাধ্যম শাখা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে নারাজ।