November 24, 2024
টেকনোলজি

২০ বছরেই যেভাবে সফলতার চূড়ায় পৌঁছান জাকারবার্গ

ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের নাম শোনেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তবে জানেন কি কীভাবে ২০ বছর বয়সে ফেসবুক তৈরি করেছিলেন জাকারবার্গ? ১৯৮৪ সালের ১৪ মে নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন এলাকাতে মনোচিকিৎসক ক্যারেন ও দন্তচিকিৎসক জাকারবার্গের ঘরে জন্ম নেন মার্ক জাকারবার্গ। তার ছিল আরও তিন বোন র‍্যান্ডি, ডোনা এবং এরিএল।

আর্ডসেলি হাই স্কুলে জাকারবার্গ গ্রিক এবং ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি ফিলিপস এক্সটার একাডেমিতে স্থানান্তরিত হন। সেখানে তিনি বিজ্ঞান এবং ক্লাসিক্যাল শিক্ষায় পুরস্কৃত হন। অসিক্রীড়া তারকাও ছিলেন মার্ক এবং অসিক্রীড়া দলের অধিনায়ক ছিলেন। কলেজে পড়াকালীন তিনি মহাকাব্যিক কবিতার লাইন থেকে আবৃত্তি করার জন্য পরিচিত ছিলেন।

তবে সেখানেই থেমে থাকেননি মার্ক। ক্লাসিক সাহিত্যে বিশেষ ডিপ্লোমাও অর্জন করেছিলেন। তবে বরাবরই ঝোঁক ছিল কম্পিউটারের প্রতি। বিশ্বের অন্যতম বিদ্যাপীঠ হাভার্ডে ভর্তি হন কম্পিউটার সায়েন্সে। সেখানেও তিনি অল্প সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। তবে একজন ভালো ছাত্র হিসেবে নয়, একজন প্রোগ্রামের হিসেবে। কারো যদি কোনো সফটওয়্যার তৈরির প্রয়োজন হতো সবাই একসঙ্গে আঙুল তুলত জুকারবার্গের দিকে। বলতো এ তো জুকারবার্গের বাঁ হাতের কাজ।

প্রোগ্রামিংয়ে তার আগ্রহ ছিল স্কুল জীবন থেকেই। মার্কের বয়স যখন প্রায় ১২ বছর, তখন তিনি অ্যাটারি বেসিক ব্যবহার করে একটি মেসেজিং প্রোগ্রাম তৈরি করেছিলেন। মার্ক যার নাম দিয়েছিলেন ‘জুকনেট’। মার্কের এই জুকনেট বাবার অফিসে ব্যবহার করতেন যাতে রুমে চিৎকার না করে একটি নতুন রোগীর নোটিশ দেওয়া যায়। মার্ক এটি পরিবারের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের জন্যেও ব্যবহার করতেন। পরে বন্ধুদের সঙ্গে মজা করতে ব্যবহার করতে শুরু করেছিলেন জুকনেট। সেটি তার বন্ধু মহলেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।

মার্কের কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ দেখে তার বাবা-মা একজন ব্যক্তিগত কম্পিউটার শিক্ষক রাখেন। ডেভিড নিউমা নামের সেই শিক্ষক বাড়িতে এসে সপ্তাহে একদিন মার্ককে কম্পিউটার শেখাতেন। মার্ক তার উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে থাকতে একটি এমপি থ্রি মিডিয়া প্লেয়ারও তৈরি করেছিলেন

২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ ফেসম্যাশ ডটকম নামে একটি ওয়েবসাইট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আর ঐ সাইটের জন্য নিজের কলেজের ডাটাবেজও হ্যাক করেছিলেন তিনি। হ্যাক করা হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ থেকে ছাত্রদের ছবি নিয়ে তা ফেসম্যাশে ব্যবহার করে ভিজিটরদের ‘হট’ অথবা ‘নট’ ভোটিংয়ের ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি।

এখানের ছবিগুলো ওরিয়েন্টেশনের দিন তোলা হতো। এ ধরনের ছবিগুলো কেমন হয় তা বুঝতেই পারছেন, তাড়াহুড়ো করে কোনো রকমে তোলা, গোবেচারা ধরনের দেখতে এ ছবিগুলো যে কেউ লুকিয়ে রাখতেই পছন্দ করে। তবে সেগুলোই মার্ক তার সেই সাইটটিতে পোস্ট করতেন। পরে অবশ্য কলেজের শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে এই সাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয় জুকারবার্গ।

মূলত ঐ ফেসম্যাশ ওয়েবসাইট থেকেই ফেসবুকের চিন্তা মাথায় আসে জুকারবার্গের। এরপর ২০০৪ সালে তার রুমমেট ও কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের ছাত্র এডওয়ার্ডো সেভারিন, ডাস্টিন মস্কোভিত্স এবং ক্রিস হিউজেসের সাহায্য নিয়ে ফেসবুক নির্মাণ করেন।

২০০৪ সালের ১১ জানুয়ারি দ্য ফেসবুক ডটকম ডোমেইন কিনে ফেলেন তিনি। মার্ক জুকারবার্গ যখন ‘দ্য ফেসবুক’ নামে নতুন সাইটটি চালু করেন তার পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যেই ১২০০ জন শিক্ষার্থী এতে রেজিস্ট্রেশন করেন। প্রথমদিকে এটি শুধুমাত্র হার্ভার্ড কলেজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলেও ২ মাসের মাথায় আরও এটি বোস্টন শহরের অন্যান্য কলেজ, আইভি লীগ এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়।

জুন মাসের মধ্যে সাইটে প্রায় দেড় লাখ মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করা শুরু করে এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১ মিলিয়নে। তবে এ সময় শুধু ১৩ বছরের উপরের বয়সের ছেলে ও মেয়েরাই এটি ব্যবহার করতে পারতেন। এসময় ফেসবুকে কোনো ছবি আপলোড করা, ওয়াল, নিউজ ফিড, ইভেন্ট, পেজ ইত্যাদি ফিচার ছিল না।

অবশেষে ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে জুকারবার্গ শ্রুতিমধুর নামের কারণে ‘দ্য ফেসবুক’ কে সংক্ষিপ্ত করে ‘ফেসবুক’ রাখেন এবং এই নামে একটি ডোমেইন কেনেন। তবে এজন্য খরচ হয়েছিল দুই লাখ মার্কিন ডলার। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।

বর্তমানে তিনি মেটার মালিক। মেটা হচ্ছে ফেসবুকের নতুন নাম। তবে এখনো ফেসবুক পুরোনো নামেই পরিচিত হচ্ছে। মেটাকে করা হয়েছে ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপসহ আরও বেশ কিছু প্ল্যাটফর্মের অভিভাবক প্রতিষ্ঠান।

যখন ফেসম্যাশ ডটকম প্রতিষ্ঠার পর বেশ গেড়াকলে ফেঁসে গিয়েছিলেন জাকারবার্গ। সেসময় একটি পার্টিতে মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে পরিচয় হয় তার বর্তমান স্ত্রী প্রিসিলা চ্যানের। প্রিসিলাও তখন হার্ভার্ডের ছাত্রী।

তাদের দেখা হওয়ার জায়গাটা কিছুটা উদ্ভট ছিল। ওয়াশরুমের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় প্রিসিলার সঙ্গে কথা হয় মার্কের। কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর মার্ক প্রিসিলাকে বলেন, ‘শোনো আমাকে হয়তো তিনদিন পর হার্ভার্ড থেকে বের করে দেওয়া হবে, তাই ডেটে যাওয়ার জন্যে আমাদের দেরি করা উচিত হবে না। প্রিসিলা আর না করতে পারেননি তাকে।’

তবে সেবার জাকারবার্গকে হার্ভার্ড থেকে বের করে দেওয়া হয়নি। একজন কাউন্সেলরের তত্ত্বাবধানে কিছুদিন থাকার নির্দেশ দিয়ে রেহাই দেওয়া হয়। ক্ষিপ্ত ক্লাবগুলোর কাছেও ক্ষমা চেয়ে নিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, তিনি এটি স্রেফ একটি কোডিং প্রজেক্ট হিসেবেই করেছিলেন, এটা যে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে তা ভাবতে পারেননি তিনি। পরে অ্যাসোসিয়েশন অব হার্ভার্ড ব্ল্যাক ওমেনের ওয়েবসাইট তৈরিতেও সাহায্য করেছিলেন তিনি।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *