২০২৬ সালে দেড় ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ
বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের পালে জোর হাওয়া লেগেছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের প্রবৃদ্ধি আশাব্যঞ্জক, তার নেতৃত্বেই রপ্তানি খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এর সঙ্গে দেশীয় চাহিদাও বেড়েছে। শ্রম আয় ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির কারণে এটি ঘটেছে। এসব কারণেই মূলত ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে (পিপিপি) দেশের অর্থনীতির আকার প্রথমবারের মতো চলতি মাসে হাজার বিলিয়ন ডলার বা এক ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পেরিয়েছে বলে প্রক্ষেপণ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এর ঠিক চার বছর পর অর্থাৎ ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি দেড় ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে বলে আশা করছে আইএমএফ।
এক ট্রিলিয়ন অনেক বড় একটা অঙ্ক। ১০০ কোটি সমান এক বিলিয়ন আর এক হাজার বিলিয়নে এক ট্রিলিয়ন।
দেশের উন্নয়নে সরকার মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পগুলোর মধ্যে রয়েছে- পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প, দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু হয়ে ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প।
চলতি বছরে জুনে পদ্মা সেতু, ডিসেম্বরে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী টানেল খুলে দেওয়া হবে। এসব মেগা প্রকল্পের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। ফলে ২০২৬ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি দেড় ট্রিলিয়ন ছাড়াবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে আইএমএফ।
দেশের অর্থনীতির আকার পরিমাপে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) দুটি পদ্ধতি রয়েছে। চলতি মূল্যের ভিত্তিতে সম্প্রতি দেশের অর্থনীতির আকার ছাড়িয়েছে ৪১১ বিলিয়ন ডলার। আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার ৫০০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। এ সময়ে বাড়বে প্রবৃদ্ধিও, যা বিশ্বের মধ্যে হবে সর্বোচ্চ। দেশের অর্থনীতির আকার বৃদ্ধিতে পোশাক খাত বর্তমানে বেশি অবদান রাখছে। মেগা প্রকল্পগুলো খুলে দেওয়ার পরে এটা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে মত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সরকারি হিসাবে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বিশ্বব্যাংকও বলছে বৈশ্বিক মন্দায় দেশের প্রবৃদ্ধির হার ভালো হবে। অর্থনীতির আকার বাড়ছে মূলত তৈরি পোশাক খাতের চাহিদার কারণে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ছে। রপ্তানির শুভ লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। তৈরি পোশাকের প্রচুর অর্ডার এসেছে। এসব অর্ডার সঠিকভাবে সরবরাহ করা গেলে দেশের অর্থনীতির আকার আরও বাড়বে।
তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পে সরকার বিশাল বিনিয়োগ করেছে। এখন টার্গেটের মধ্যে এগুলো শেষ হলে অর্থনীতি আরও উপকৃত হবে।
ড. জাহিদ হোসেন আরও বলেন, এখন নতুন করে ওমিক্রনের প্রভাব পড়েছে। আশা করা যাচ্ছে ওমিক্রন বাংলাদেশের জন্য এতটা ক্ষতিকর হবে না। তবে চ্যালেঞ্জ আছে কন্টেইনার হ্যান্ডেলিংয়ের ক্ষেত্রে। কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে। চাহিদা অনুযায়ী নৌপথে বিদেশি পণ্য রপ্তানি ব্যাহত হলে অর্ডার বাতিল হতে পারে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা গেলে দেশের অর্থনীতির আকার আরও বড় হবে।
আইএমএফের তথ্য বলছে, পিপিপির ভিত্তিতে ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশের অর্থনীতির আকার ছিল মাত্র ২৬৭ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার। এর নয় বছর পর অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে অর্থনীতির আকার ছিল ৫২০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার বা হাফ ট্রিলিয়ন।
আইএমএফের তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, পিপিপির ভিত্তিতে ২০২১ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিল ৯৬৬ দশমিক ৪৮৫ বিলয়ন ডলার, যা ২০২২ সালে এক হাজার ৬১ দশমিক ৫৭১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। দেশে নানা উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে অর্থনীতির আকার এক হাজার ১৬৪ দশমিক ৮২৫ বিলিয়ন ডলার হবে ২০২৩ সালে। পিপিপির ভিত্তিতে ২০২৪ সালে এক হাজার ২৭৬ দশমিক শূন্য ২২ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৫ সালে এক হাজার ৩৯৫ দশমিক ৪০৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। অন্যদিকে ২০২৬ সালে মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ। এই সময় পিপিপির ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতির আকার দাঁড়াবে এক হাজার ৫২২ দশমিক ৪৭৮ বিলিয়ন বা দেড় ট্রিলিয়ন ডলার।