২০২১ সালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে কোটি কোটি ডলারের ক্ষয়ক্ষতি
এবছর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষের জীবনে দুর্দশা নেমে এসেছে বলে জানানো হয়েছে নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে।
বিবিসি জানায়, দাতব্য সংস্থা ক্রিশ্চিয়ান এইড এর এই গবেষণায় চরম ১০টি প্রাকৃতিক দুর্যোগ চিহ্নিত করা হয়েছে, যেগুলোর প্রতিটিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ১৫০ কোটি ডলারের বেশি।
এর মধ্যে গত অগাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আইডা এবং জুলাইয়ে ইউরোপে দেখা দেওয়া বন্যার প্রভাব অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি পড়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের কারণে অনেক দরিদ্র এলাকায় বহু মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে এবং বাড়িঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
ফ্রেডরিকে অটো নামের এক শীর্ষ গবেষক চলতি বছরের শুরুতে এক টুইটে বলেন, মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে এখন জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে বিশ্বের তাপমাত্রা আরও বেড়ে যাচ্ছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঝড় এবং ঘুর্ণিঝড় বেড়ে যাওয়ার মধ্যে যে সম্পর্ক আছে তার আরও বেশি বেশি প্রমাণও পাওয়া যাচ্ছে।
ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) গত অগাস্টে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তাদের ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদনের প্রথম অংশ প্রকাশ করেছিল।
এতে হারিকেন এবং গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঝড়ের ক্ষেত্রে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রভাবের যে জোরাল প্রমাণ আছে- সে ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত বলে জানিয়েছিলেন প্রতিবেদনের লেখক।
আইপিসিসি’র ওই মূল্যায়ন প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ পরই যুক্তরাষ্ট্র শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আইডার কবলে পড়ে। ক্রিশ্চিয়ান এইডের তথ্যানুযায়ী, আইডার কারণেই চলতি বছর অর্থনীতিতে চরম ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে।
এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজ্য ও শহরে তুমুল বৃষ্টি হয়। নিউ ইয়র্কে প্রথমবারের মতো আকস্মিক-বন্যার জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। আইডায় প্রাণ হারায় প্রায় ৯৫ জন এবং আনুমানিক ৬,৫০০ কোটি মার্কিন ডলারের ক্ষয়ক্ষতি হয়।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেছে গত জুলাইয়ে জার্মানি, ফ্রান্স এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোতে হওয়া বন্যায়। ভয়াবহ ওই বন্যায় ২৪০ জন মারা যায় এবং ক্ষয়ক্ষতি হয় ৪,৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের।
ক্রিশ্চিয়ান এইডের গবেষণা মোতাবেক, এবছর তালিকাভুক্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে। এই ধনী দেশগুলোতে সাধারণত বীমা দাবি থেকে আর্থিক ক্ষতি অনুমান করা সহজ।ওইসব দেশের মানুষ নিজেদের বাড়ি এবং ব্যবসার বীমা করে থাকে, যে সুযোগ অনেক গরিব দেশে নেই।
গবেষণা প্রতিবেদনে আরও অনেক ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে যেগুলোর আর্থিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা কঠিন, তবে মানুষের ওপর দুর্যোগের দুর্বিষহ প্রভাব দেখা গেছে।
দক্ষিণ সুদানে চলতি বছর বন্যায় ৮ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুহারা হয়েছে এবং মে মাসে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপে ঘূর্ণিঝড় তকত থেকে বাঁচতে ২ লাখ মানুষকে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে।
গবেষণা প্রতিবেদনের লেখক ক্রিশ্চিয়ান এইড এর ক্যাট ক্র্যামার বলেন, “এটি মানুষের ওপর একটি বড় ধরনের প্রভাব। বাড়িঘর, জীবিকা সবকিছু হারানো এবং তা নতুন করে গড়ে তোলার মতো সংস্থান না থাকা খুবই কঠিন। মানুষের বীমা থাকলে এ বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর অন্তত একটা ব্যবস্থা থাকে।”