২শ’ টাকা ফেরত না দেওয়ায় গালি, রাগে-ক্ষোভে শ্বাসরোধে হত্যা
লবণচরায় শামীম খুনে আসামী আরাফাতের স্বীকারোক্তি
দ. প্রতিবেদক
খুলনা মহানগরীর লবণচরা এলাকায় ইজিবাইক চার্জি গ্যারেজের ম্যানেজার কাম কেয়ারটেকার মোঃ শামীম (২০) হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মোঃ আরাফাত হোসেন (১৯) কে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। এ ঘটনায় আসামী শুক্রবার সকালে স্বেচ্ছায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনার বিবরণ দিয়ে দায় স্বীকার করেছেন। গ্রেফতার আরাফাত নগরীর খুলনা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট সংলগ্ন জনৈক মোঃ শাহীন এর বাড়ীর কেয়ারটেকার মোঃ আল আমিন সানার ছেলে। কেএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মোঃ শাহ্ জাহান শেখ পিপিএম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, মেসার্স সোহেল এন্ড রিফাত এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার মোঃ শামীম নামে এক যুবককে শ্বাসরোধে হত্যার ঘটনায় ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোঃ আনোয়ার হোসেন এর দিক-নির্দেশনায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সোনালী সেনের সরাসরি তত্ত্বাবধায়নে লবণচরা থানার অফিসার ইনচার্জ সমীর কুমার সরকারের সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টিম অভিযান পরিচালনা করে আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ও বিশ্বস্ত সূত্রের মাধ্যমে তথ্য পেয়ে লবণচরা থানাধীন মোহাম্মদনগর এলাকা থেকে আসামী আরাফাতকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত আসামীকে জিজ্ঞাসাবাদে ও তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক মামলার আলামত একটি সিসি ক্যামেরার ডিভিআর, ২টি মোবাইল ফোন, নগদ ২১ হাজার ৩৭১ টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ তালিকা মূলে জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আসামী আরাফাত হোসেন ঘটনায় নিজেকে জড়িয়ে ঘটনার পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা দিয়ে পুলিশের নিকট স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে এবং তাকে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করলে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক বিচারিক জবানবন্দি প্রদান করে।
গ্রেফতারকৃত আসামী আরাফাতের বরাত দিয়ে তিনি জানান, শামীম ও আরাফাত মেসার্স সোহেল এন্ড রিফাত এন্টারপ্রাইজ নামক প্রতিষ্ঠানে একই সাথে কাজ করত। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানের মালিক সোহেল রানা আসামী আরাফাতকে চাকুরী থেকে বাদ দিয়ে দেয় এবং উভয় ব্যবসায় দেখাশোনার জন্য শামীমকে দায়িত্ব দেয়। এতে আসামী আরাফাত নিহত শামীম এর উপর কিছুটা ক্ষিপ্ত ছিল। গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ৯.৩০ মিনিটে শামীম আসামী আরাফাতকে গাঁজা কিনে আনার জন্য ২শ’ টাকা দেয়। কিন্তু আরাফাত উক্ত টাকা নিয়ে হোটেলে খাবার কিনে খেয়ে খরচ করে ফেলে। শামীম যখন ২শ’ টাকা অথবা গাঁজার জন্য চাপ দেয় তখন আরাফাত বলে সে টাকা খরচ করে ফেলেছে, পরবর্তীতে সে টাকা ফেরত দেবে। পরে রাত সাড়ে ১০টায় শামীম মোহাম্মদনগরের এম আর এন্টারপ্রাইজ নামক অটো চার্জিং পয়েন্টে যাওয়ার জন্য বললে আরাফাত সেখানে যায়। সেখানে দু’জনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে শামীম আরাফাতকে মা-বোন তুলে গালিগালাজ করে এবং মারধর করে ও ধাক্কা দেয়। এতে আসামী আরাফাত ক্ষিপ্ত হয়ে বলে তুমি যে ব্যবহার করলে এর ফল ভোগ করতে হবে। এই বলে সে ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় এবং শামীমকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।
পুলিশ কর্মকর্তা মোঃ শাহ্ জাহান শেখ আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী আসামী আরাফাত রাত সাড়ে ১২টায় ঘটনাস্থলে শামীমকে ঘুম থেকে উঠিয়ে বলে যে, সে বাড়িতে যেতে পারছে না, আজ রাতে তার সাথে ঘুমাবে। তখন শামীম গেট খুলে তাকে ভিতরে ঢুকিয়ে নেয় এবং দুইজন একসঙ্গে একই বিছানায় শুয়ে পড়ে। শামীম ঘুমিয়ে পড়লেও আরাফাত ঘুমায় না। যখন শামীম গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে তখন আসামী আরাফাত পরিকল্পনা মাফিক বিছানার পাশে থাকা শামীম এর ব্যবহৃত গামছা দ্বারা শামীম এর গলায় প্যাচ দিয়া শ্বাসরোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। ধস্তাধস্তির সময় শামীম তার বিছানা থেকে নিচে মেঝেতে পড়ে যায় এবং তার নিথর দেহ পড়ে থাকে। শামীমের মৃত্যু নিশ্চিত জেনে বিছানা থেকে ২টি মোবাইল সেট এবং চাবি নিয়ে সাটারের তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে স্টীলের আলমীরা খুলে ড্রয়ার থেকে নগদ ২১ হাজার ৩৭১ টাকা ও টেবিলের পাশে থাকা তাক থেকে সিসি ক্যামেরার ডিভিআরটি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। বাসায় যাওয়ার পথে সাচিবুনিয়া বিশ্বরোড হতে রূপসা ব্রীজগামী মহাসড়কের ময়ূর নদীর উপর হাতিয়া ব্রীজ থেকে উত্তর পাশের নদীতে ডিভিআরটি ফেলে দেয় এবং মোবাইল ও টাকা নিয়ে বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে থাকে।
তিনি জানান, জিজ্ঞাসাবাদকালে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক আসামী আরাফাত এর ওয়াজেদনগরস্থ বাসায় অভিযান পরিচালনা করে দু’টি মোবাইল সেট ও ২১ হাজার ৩৭১ টাকা উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়। পরবর্তীতে খুলনা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিমের সহায়তায় হাতিয়া ব্রীজের নিচে ময়ূর নদীতে তল্লাশী করিয়া মাঝ নদীর গভীর তলদেশ থেকে ডিভিআরটি উদ্ধারপূর্বক জব্দ করা হয়।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়