November 24, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

১৮ মাস পরেও গভীর অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গা শিশুরা

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরের প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শিশু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে থাকায় তারা হতাশা ও নৈরাশ্যের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে মনে করছেন ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা এইচ ফোর।
রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে বুধবার ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের কক্সবাজারে অবস্থানরত পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা শিশু রাষ্ট্রহীন শরণার্থী অবস্থায় রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে জনবহুল শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত এই রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য টেকসই কোনো সমাধান দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না।
যেসব শিশু ও তরুণ ‘রাষ্ট্রহীন’ তাদের সুন্দর জীবন গঠনে শিক্ষা ও দক্ষতা অর্জন জরুরি বলে মনে করেন হেনরিয়েটা। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিশুরা ‘রাষ্ট্রহীন ও সংখ্যালঘু‘ অবস্থায় থাকায় তারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষার পাঠ্যসূচির বাইরে থাকছে। এতে তাদের জীবিকা অর্জনের মতো দক্ষতা তৈরি হচ্ছে না।
২০১৭ সালের অগাস্টে রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয় সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা, যাদের বড় অংশই শিশু। গত সোম ও মঙ্গলবার জাতিসংঘ মহাসচিবের মানবিক সহায়তা বিষয়ক দূত আহমেদ আল মেরাইখির সঙ্গে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির ঘুরে আসেন হেনরিয়েটা এইচ ফোর।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিশু ও তরুণ জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজেদের জীবন গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও দক্ষতাবিহীন রাখা যায় না। তারা যদি নিজেরা বেঁচে থাকার যোগ্য হয়ে উঠতে পারে তাহলে তাদের কমিউনিটিগুলোও নিজে থেকে টিকে থাকতে ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারবে। সঠিক বিনিয়োগের মাধ্যমে এই রোহিঙ্গারা তাদের কমিউনিটি ও বিশ্বের কাছে সম্পদ হতে পারে।
গত ডিসেম্বরে কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে একটি জরিপ চালায় ইউনিসেফ। ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর ওপর করা এ জরিপে দেখা যায়, ৯০ শতাংশেরও বেশি শিশু প্রাক-প্রাথমিক থেকে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করার যোগ্য। তাদের ৪ শতাংশ তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি এবং ৩ শতাংশ ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যায়ে লেখাপড়ার যোগ্য।
২০১৮ সালের শেষ নাগাদ ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীদের মাত্র ৩ শতাংশ কোনো ধরনের শিক্ষা বা কারিগরি দক্ষতা অর্জন করেছে বলে ইউনিসেফের ভাষ্য। রোহিঙ্গা শিশুদের বিকাশের লক্ষ্যে ইউনিসেফ শিক্ষামূলক প্রকল্প নিয়ে ৪-১৪ বছর বয়সী ১ লাখ ৫৫ হাজার শিশুর কাছে পৌঁছেছে। প্রকল্পটিতে ক্রমশ মানোন্নয়ন, কাঠামোগত শিক্ষা ও দক্ষতা যুক্ত করা হচ্ছে সংস্থাটির ভাষ্য।
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের দমন-পীড়নের সময় ধর্ষণের পর জন্ম নেওয়া শিশু ও গর্ভবতী নারীদের বিষয়ে ইউনিসেফ বিশেষ নজর রাখছে বলে জানান হেনরিয়েটা। তিনি বলেন, প্রতিটা শিশুর অধিকার তার জন্ম পরিচয় জানা। বিশ্বজুড়ে আমরা শিশুদের এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কাজ করতে গিয়ে মনে হল, কাজটা আসলে বেশ কঠিন।
সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত মেরাইখি বলেন, বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ সঙ্কট মোকাবেলায় এটাই একমাত্র সমাধান নয়। রোহিঙ্গারা তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে চায়। কিন্তু তারা মনে করছে, এখন তারা সেখানে নিরাপদ নয়। বাংলাদেশও মানবিক বিবেচনায় তাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু একদিন তো তাদের ফিরিয়ে দিতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়া নিশ্চিৎ করার আগে আমাদের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিতও করতে হবে।
এ বছর ৬ লাখ ৮৫ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং তাদের আশ্রয়দাতা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে জরুরি সহায়তা দিতে ১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার তহবিল চেয়েছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ। ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত ওই অর্থের ২৯ শতাংশ পেয়েছে তারা।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *