১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকায় দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দরে সরকারের সায়
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প সরকারের সায় পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয় বলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান জানিয়েছেন।
সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পের ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি কোটি ১৬ লাখ টাকার প্রাক্কলিত ব্যয়ের মধ্যে ঋণ সহযোগিতা হিসেবে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা দিচ্ছে জাপান। বাকিটার মধ্যে সরকার ২ হাজার ৬৭১ কোটি ১৫ লাখ টাকা ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২ হাজার ২১৩ কোটি ২৪ লাখ টাকা যোগান দেবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নেওয়া প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে ২০২৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করবে। এর ডিজাইন ও লে-আউটসহ সব নকশা জাপানি বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে করা হচ্ছে।
এই প্রকল্পের অধীনে সংযোগ সড়কসহ গভীর সমুদ্র বন্দরে ৩০০ ও ৪৬০ মিটার দীর্ঘ দুটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এর ফলে বিশাল জাহাজ থেকে সরাসরি পণ্য ওঠানামা সহজ হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, দেশে যে কয়টি সমুদ্র বন্দর রয়েছে, তার কোনোটিই গভীর সমুদ্র বন্দর নয়। ফলে ডিপ ড্রাফটের ভেসেল- এসব বন্দরের জেটিতে ভিড়তে পারে না। ডিপ ড্রাফট ভেসেলের জেটি সুবিধা নিশ্চিত করতেই মাতারবাড়ি সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করা হচ্ছে।
মাতারবাড়ি বন্দর নির্মাণ শীর্ষক এই প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়, পানির গভীরতা বেশি না হওয়ায় চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে মাদার ভেসেলগুলো (বিশাল জাহাজ) ভিড়তে না। সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ দুই হাজার টিইইউএস কনটেইনার নিয়ে বন্দরে ভিড়তে পারে।
এখন পণ্যবাহী মাদার ভেসেলগুলোর মাঝ সমুদ্রে নোঙর করে। সেখান থেকে ফিডার জাহাজে করে কনটেইনার বন্দরে আনা হয়। এভাবে প্রতিদিন তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টিইইউএস কনটেইনার আমদানি পণ্য খালাস হয়ে থাকে। এর ফলে অনেক সময় ও অর্থের অপচয় হয়।
মাতারবাড়িতে সাগর ১৬ মিটার গভীর হওয়ায় সেখানে ৮ হাজার টিইইউএস কনটেইনারবাহী ১৬ মিটার ড্রাফটের মাদার ভেসেল ভেড়ার সুযোগ তৈরি হবে।
তখন চট্টগ্রাম বন্দরের উপর থেকে চাপ কমবে, দেশের কার্গো হ্যান্ডলিং সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। মঙ্গলবারের এককেনক সভায় মাতারবাড়ি গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণসহ ২৪ হাজার ১১৩ কোটি টাকায় মোট নয়টি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে।
অন্য প্রকল্পগুলো হচ্ছে- প্রায় ৪২০ কোটি টাকা ব্যয়ে লেবুখালী-রামপুর-মির্জাগঞ্জ সংযোগ সড়ক নির্মাণ, একহাজার ৪৫২ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে কচুয়া-বেতাগী-পটুয়াখালী-লোহালিয়া-কালাইয়া সড়কে পায়রা নদীর উপর সেতু নির্মাণ, ৫১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়ন, ১২৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে মৎসসম্পদ উন্নয়ন, ১৬১ কোটি টাকা ব্যয়ে বছরব্যাপী ফল উৎপাদনের মাধ্যমে পুষ্টি উন্নয়ন, ৫৮৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে জামালপুরের মাদারগঞ্জের পাকেরদহ ও বালিজুরি এবং বগুড়ার সারিয়াকান্দির জামথল এলাকায় যমুনা নদীর ভাঙন রক্ষা বাঁধ, ১০২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা থেকে ব্যয় বাড়িয়ে ৩৫২ কোটি টাকায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা কার্যালয়ের ২০ তলা ভিতবিশিষ্ট দুটি বেইজমেন্টসহ ১০ তলা (সংশোধিত ২০ তলা) প্রধান কার্যালয় নির্মাণ (২য় সংশোধিত), ৩ হাজার ৮৫৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকার পয়ঃনিষ্কাশন উন্নয়ন।