November 28, 2024
জাতীয়লেটেস্ট

১৪ দলের ঐক্যের সুতোয় ফাটল!

 

 

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়ছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন জোটের ঘোষিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন না হওয়া, বৈঠকে শরিক দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিত না থাকা এবং বিভিন্ন ইস্যুতে স¤প্রতি কিছু বক্তব্য জোটের ঐক্যে ফাটলের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে ১৪ দলীয় জোটের নেতারা বলছেন, তারা ঐক্যবদ্ধ আছেন। অন্তত আদর্শিক প্রশ্নে তথা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসা¤প্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রশ্নে জোট অটুট আছে।

কিন্তু সরকারের বিভিন্ন ইস্যু এবং রাজনৈতিক গতিপ্রকিৃতিতে প্রতিটা দলের নিজস্ব স্বকীয় অবস্থান আছে। শরিক দলগুলো আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করতেই পারে। রাজনৈতিক ও সামাজিক ইস্যুতেও স্বতন্ত্র অবস্থান ব্যক্ত করতে পারে, যদি তা আওয়ামী লীগের অবস্থানের বিরুদ্ধেও যায়।

১৪ দলের নেতারা বলছেন বর্তমান সরকার গঠনের পর থেকেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটের শরিক দলগুলোর দূরত্ব বাড়তে থাকে। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের পর থেকে শরিক দল জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্যান্য দলের নেতারা বলে আসছিলেন, ১৪ দল অটুট আছে, থাকবে। রাজনীতি, নির্বাচন ও সরকারে একসঙ্গে কাজ করবে।

কিন্তু নতুন সরকারে জোটের কেউ স্থান না পাওয়ায় তাদের অবস্থান বদলাতে শুরু করে। সরকার গঠনের পর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জোট শরিকদের সংসদে শক্তিশালী বিরোধী ভূমিকা পালনের আহŸান জানানো হয়। তখন শরিক নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এবং জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু অভিন্ন সুরে বলেন, একসঙ্গে জোট করেছি, একসঙ্গে নির্বাচন করেছি, বিরোধী দলে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। এমনকি সরকার গঠন নিয়ে বা জোট শরিকদের ভূমিকা কী হবে তা নিয়েও তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা হয়নি বলেও দাবি করেন তারা।

ইনু বলেছিলেন, আওয়ামী লীগ এককভাবে বিজয় উৎসব পালনের ফলে বিভিন্ন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেন এমন ঘটলো তার উত্তর আওয়ামী লীগের নেতারাই দিতে পারবেন। তিনি বলেন, জাসদ সরকারকে সমর্থন দেবে নাকি বিরোধী দলে থাকবে তা সম্পূর্ণ দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। এটা আওয়ামী লীগ বা অন্য কেউ ঠিক করে দিতে পারে না।

এর পাশাপাশি অনেক দিন ধরেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন, জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আওয়ামী লীগের একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমালোচনা করে আসছিলেন জোট শরিকরা। এসব নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া বলেন, জোটের কার্যক্রম তৃণমূলে বিস্তৃত করার কথা ছিল, তা করা হয়নি। আর প্রায় সব ইস্যুতেই আওয়ামী লীগ একক সিদ্ধান্ত নিয়ে জানিয়ে দেয়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, জঙ্গিবাদ, গণতন্ত্রসহ শুধু আদর্শিক প্রশ্নেই ১৪ দলীয় জোটের অস্তিত্ব আছে।

টানাপড়েনের বিষয়টি টের পিয়েই কিনা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘন ঘন বৈঠক ডাকা শুরু হয়। এপ্রিলে অভিভাবক সমাবেশ, সেমিনার এবং মুজিবনগর দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। দুটি অভিভাবক সমাবেশ এবং একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হলেও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশটি করতে পারেনি ১৪ দল। এর পরিবর্তে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে একটি আলোচনা সভা করে জোটটি।

সন্ত্রাস-দুর্নীতি-জঙ্গিবাদ-মাদক রোধে জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম বার বার কর্মসূচি ঘোষণার কথা বললেও জোটের পক্ষ থেকে কর্মসূচি দেওয়া হয়নি। আবার ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কর্মসূচি ঘোষণা করেও তা স্থগিত করা হয়েছে।

গত এপ্রিল ও মে মাসে অনুষ্ঠিত জোটের বেশ কয়েকটি বৈঠকে শরিক দলগুলোর শীর্ষ নেতা রাশেদ খান মেনন, শরীফ নুরুল আম্বিয়া, হাসানুল হক ইনুকে দেখা যায়নি। জাতীয় নির্বাচন নিয়েও সমালোচনা করতে দেখা গেছে বাংলাদেশ জাসদকে। সর্বশেষ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য নয় বলে সরকারের সঙ্গে সরাসরি বিপরীতমুখী অবস্থানে বক্তব্য দেন রাশেদ খান মেনন। বাংলাদেশ জাসদের কার্যকরী সভাপতি মইন উদ্দিন খান বাদলও মঙ্গলবার সংসদে কড়া ভাষায় সমালোচনা করেন সরকারের।

এসব বক্তব্য জোটের অনৈক্যের আলামত কিনা জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম তা সরাসরি নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, ১৪ দল অটুট আছে, অটুট থাকবে। ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি মোকাবিলা করবে। জোট শরিকদের কিছু মান-অভিমান আছে স্বীকার করে নিয়ে তিনি বলেন, একসঙ্গে বসে আলোচনা করলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

তার সঙ্গে একমত জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুও। তিনি বলেন, জোট আছে। অসা¤প্রদায়িক রাজনীতি, গণতন্ত্র, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদক প্রশ্নে এক আদর্শিক অবস্থানে থেকে জোট ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে। কিন্তু শরিক দলগুলোর প্রতিটি ইস্যুতে স্বতন্ত্র অবস্থান আছে, নিজস্ব রাজনীতি আছে। সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে গঠনমূলক সমালোচনা করা যেতেই পারে।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে ২৩ দফার ভিত্তিতে ১৪-দলীয় জোট গঠন করা হয়। সে সময় থেকেই তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করে আসছে জোটের শরিকরা। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ঐক্যবদ্ধ নির্বাচন করে তারা। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর ১৪ দলকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়। এর পরের সরকারেও ছিলেন তারা। তবে এবার শরিক দলের কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া হয়নি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটের অন্যতম শরিক ওয়ার্কার্স পার্টিকে আওয়ামী লীগ পাঁচটি আসন ছেড়ে দেয়। জাসদ পায় দুটি এবং বাংলাদেশ জাসদ পায় একটি আসন।

 

 

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *