১২ দিন ধরে এনআইডি সেবা বন্ধ ফিরে গেছেন ৬০ হাজার মানুষ
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
কোনো নোটিশ ছাড়াই ১২ দিন ধরে জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা বন্ধ রেখেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১০ জানুয়ারি থেকে এনআইডি সার্ভার বন্ধ থাকায় এই ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার মানুষ এই সেবা নিতে পারেনি।
আগারগাঁওয়ের নির্বাচনী প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে (ইটিআই) এনআইডি শাখায় গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন এলাকা থেকে এনআইডি সেবা নিতে আসা নাগরিকেরা সেবা না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কবে সার্ভার চালু হবে তা তাদের জানানো হচ্ছে না।
সেবা নিতে আসা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, দুই সপ্তাহ ধরে চারবার এসেও সেবা পাইনি। কবে কার্ড নিতে পারবো সে তথ্যও কেউ দিতে পারছেন না। আবার ইসির কল সেন্টার থেকেও কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
ফিরে যাওয়াদের মধ্যে অনেকেই ঢাকার বাইরে থেকেও এসেছেন জরুরি ভিত্তিতে এনআইডি সংগ্রহ করতে। তাদের তারাই বিপত্তির মধ্যে বেশি পড়েছেন। অনেকে আবার পেনশন, মৃত্যুসনদ সংগ্রহের মতো জরুরি কাজও করতে পারছেন না।
জামালপুর ও ময়মনসিংহ থেকে আসা এমন ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, একটা নোটিশ দেওয়া হলেও আমরা জানতে পারতাম। এভাবে হঠাৎ বন্ধ রেখে আমাদের ভোগান্তিতে ফেলা ঠিক হয়নি।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, এটার বিষয়ে আমি আপডেট না। তাই এটা নিয়ে কোনো কথা বলতে পারবো না। সার্ভার একটা টেকনিক্যাল বিষয়। ইচ্ছা করলে কেউ ডাউনও করতে পারে, ইচ্ছা করলে কেউ আপও করতে পারে। ইচ্ছা করলে এগুলো করা যায়। এগুলো টেকনিক্যাল বিষয়।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) মো. আবদুল বাতেন এ বিষয়ে বলেন, সার্ভারে প্রায় ১০ কোটি ৪২ লাখ ভোটারের ডেটা আছে। পার্লামেন্ট ইলেকশন গেলো, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা, নতুন যারা ভোটার হচ্ছেন তাদের কাজ করা, তারপর মাইগ্রেশন হচ্ছে সেগুলোর কাজ করা। সবগুলোই কিন্তু এই সার্ভারের মাধ্যমে হচ্ছে।
তিনি বলেন, সার্ভারে আমাদের কয়েকটি সার্ভিস প্রয়োজন হয়। একটা হলো ওরাকল সার্ভিস। যেটি আমেরিকা থেকে আমাদের সার্ভিস দিয়ে থাকে। তারপর বিপিএন, এএফআইএস আছে। ওরাকল থেকে যে সার্ভিসটি আমরা নিচ্ছি এ সার্ভিসটিতে কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। আমাদের একটি রিকভারি সার্ভারও আছে। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে ওই সার্ভারেও কিছুটা সমস্যা দেখা দেয়। ওরাকলে সমস্যা দেখা দিলে নির্বাচন কমিশনের যে টেকনিক্যাল টিম আছে তারা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর প্রায় ১০৩টি কোম্পানি এরমধ্যে ডেলকো কোম্পানি আছে, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও আছে, এসব সেবা চালু রাখতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
শুধু নতুন ভোটার হওয়া, বায়োমেট্রিক এটি এখনও আমরা আপ করতে পারিনি। আর আমাদের মাঠ পর্যায়ে উপজেলা বা থানা যে সার্ভিসটি আছে এটি আমরা আপ করতে পারিনি। আমাদের টেকনিক্যাল টিম যেটি জানিয়েছে মধ্যে এটি আপ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। আর এটি হলে আগের মতোই সব সার্ভিস পাওয়া যাবে।
এনআইডি সেবা যে বন্ধ রয়েছে নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো প্রয়োজন ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কিন্তু ঘোষণা দিয়েছি। উপজেলা বা ইলেকশন কমিশনের ইটিআই ভবনে এ বিষয়ে নোটিশ করা আছে। যারা সার্ভিসটা নিতে আসবেন তাদের জানানোর জন্যই এটি অফিসগুলোতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
সমস্যার কারণ সম্পর্কে বাতেন বলেন, সার্ভারের মেয়াদের একটা বিষয় ছিল। প্রতিনিয়ত আমাদের ভোটার হচ্ছে, কারেকশন হচ্ছে। বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক কারণে হতে এতো বেশি মাইগ্রেশন হচ্ছে। এজন্য ডেটা সার্ভারের স্পেসেও প্রভাব পড়ছে। এজন্য আমরা আরেকটি প্রজেক্ট নেওয়ার কথা ভাবছি। যেটাতে ডেটার জন্য স্পেস বাড়ানো হবে এবং আমাদের যে সার্ভিসগুলো আছে সেগুলো আপডেট করা হবে। ওখানে সার্ভার কেনার এবং আপডেটের বিষয়ও আছে। এটি সম্পন্ন হলে আমরা আরো অনেক বেশি নিরবিচ্ছিন্ন সার্ভিস দিতে পারবো বলে আশা করি। এক মাসের মধ্যে প্রজেক্ট প্রোপোজাল যাবে। বাকিটা সরকারের উপর নির্ভর করবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রকল্প নিয়েই মূলত জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহের কার্যক্রম শুরু করে নির্বাচন কমিশন। যার ভিত্তিতেই বর্তমানে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডও সরবরাহ করছে নির্বাচন কমিশন।