১০ টাকার চাল: রেশনগ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে এক কোটি হচ্ছে
লকডাউনের মধ্যে দুর্দশায় পড়া শ্রমজীবী মানুষকে বিশেষ ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরের চাল দিতে রেশন কার্ডের সংখ্যা ৫০ লাখ থেকে বাড়িয়ে এক কোটি করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ঢাকা বিভাগের, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সরকারপ্রধানের এ ঘোষণা আসে।
তিনি বলেন, “আমি জানি যে যেহেতু সব কিছু এখন বন্ধ, অনেক মানুষের কষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে যারা দিনমজুর, যারা কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষ, যারা খেটে খাওয়া মানুষ, ছোটখাট ব্যবসায়ী, এমনকি নিম্নবিত্ত, তাদেরও কষ্ট হচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রকোপ ঠেকাতে চলছে ‘লকডাউন’। কঠিন এমন পরিস্থিতিতে কর্মহীন হয়ে পড়া দরিদ্রদের জন্য ১০ টাকা কেজিতে চাল বিক্রি করছে খাদ্য অধিদপ্তর। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি
“সেটা মাথায় রেখে আপনারা জানেন যে আমরা ইতোম্যে একটা প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছি, যেখান থেকে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, সবাইকে আমরা সহযোগিতা করব। এবং সেটা আমরা করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে আমরা শুরু করেছি।”যারা ‘হাত পেতে খেতে পারবে না’ তাদের জন্যও ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির ব্যবস্থা করার বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা এখন সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমাদের ৫০ লক্ষ মানুষের জন্য রেশন কার্ড করা আছে, তারা দশ টাকায় চাল পান, আমরা আরও ৫০ লক্ষ মানুষের রেশন কার্ড করে দেব।”
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে দেশের সব অফিস-আদালত এবং যানবাহন চলাচল বন্ধ। সরকারের ভাষায় এই ‘সাধারণ ছুটিতে’ মানুষের ঘরবন্দি দশা চলবে অন্তত ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত।
এই সময় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সবাইকে ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। ফলে বেশিরভাগ শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
এই প্রেক্ষাপটে গত ২৫ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওএমএস খাতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩০ টাকা কেজি দরের চালের দাম ১০ টাকা নির্ধারণের ঘোষণা দেন। পরে খাদ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ ওএমএসের মাধ্যমে ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কার্যক্রম শুরু করেছিল।
সপ্তাহে প্রতি রবি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই চাল বিক্রি চলছিল। একজন ভোক্তা সপ্তাহে একবার পাঁচ কেজি চাল কিনতে পারতেন।
কিন্তু চাল বিক্রির সময় ভিড় হলে ভাইরাসের বিস্তার বাড়ার ঝুঁকি থাকার কথা বলে ১৩ এপ্রিল ওই বিশেষ ওএমএস কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
এরপর বুধবার জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়, যাদের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড নেই- এমন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তদের তালিকা তৈরি করে কার্ডের মাধ্যমে তাদের বিশেষ ওএমএসের ১০ টাকা কেজি দরের চাল দেওয়া হবে।
বিশেষ ওএমএস সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার কারণ ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এমনি দিতে গেলে অনেক সময় সমস্যা হয়ে যায়। সে ধরনের কিছু ঘটনা ঘটার পরে আমরা এটা আপাতত স্থগিত করে তালিকা করবার জন্য নির্দেশ দিয়েছি।”করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলায় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, সশস্ত্র বাহিনী, স্বাস্থ্যসেবাকর্মী- যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “করোনাভাইরাস সারাবিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আশঙ্কা করছে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে বিশ্ব মন্দা বা দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।”
এই পরিস্থিতিতেও দেশের মানুষকে অভয় দিয়ে তিনি বলেন মন্দা হলে দেশকে কীভাবে আমরা রক্ষা করব? সেজন্য সরকার আগাম কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। ৯২ হাজার কোটি টাকা, আসলে বলতে গেলে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার একটি প্রণোদনা প্যাকেজ আমরা করেছি। আগামী তিন বছর কীভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করব, সেই পরিকল্পনাও আমরা নিচ্ছি। সরকার সামর্থ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে দেশবাসীকে রক্ষা করতে প্রস্তুত।”