১০০ টাকায় মিলছে ৩০০ টাকার তরমুজ
হঠাৎ করেই রাজধানীর বাজারগুলোতে তরমুজের দাম কমে গেছে। ঈদের আগে যে তরমুজ কিনতে ক্রেতাদের ৩০০ টাকার ওপরে ব্যয় করতে হয়েছে, এখন সেই আকারের তরমুজ ১০০ টাকাতেই পাওয়া যাচ্ছে।
তরমুজের এমন দাম কমার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বৃষ্টিতে তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা বেশি পরিমাণে তরমুজ তুলে বাজারে সরবরাহ করছেন। এটি তরমুজের দাম কমার প্রধান কারণ।
এছাড়া এখন বাজারে লিচু ও আম পাওয়া যাচ্ছে। যা তরমুজের চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার রোজার কারণেও কিছুদিন আগে তরমুজের বাড়তি চাহিদা ছিল, সেটা এখন নেই। সব মিলিয়ে রোজার সময়ের তুলনায় এখন তরমুজের চাহিদা অর্ধেকে নেমে গেছে। ফলে চাহিদা কমায় দামও কমে গেছে।
ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, এখন বাজারে যে তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগ খুলনা ও সাতক্ষীরার তরমুজ। এই তরমুজের স্বাদ অনেক ভালো, তবে আকারে তুলনামূলক ছোট। অপরদিকে বরিশালের কিছু তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে, যা আকারে বড়। আকারে বড় হলেও এই তরমুজের স্বাদ কম। এ কারণে খুলনার তরমুজের চাহিদা এখন বেশি।
এদিকে রোজায় খুচরা বাজারে তরমুজ কেজি হিসেবে বিক্রি হলেও এখন পিস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। ৫-৬ কেজি ওজনের খুলনার একটি তরমুজ এখন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়। ঈদের আগে এই তরমুজের পিস বিক্রি হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকার ওপরে।
এছাড়া এখন বড় তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকার মধ্যে। ঈদের আগে এসব তরমুজের পিস বিক্রি হয় ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। আর ছোট তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকায়। যা ঈদের আগে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বিক্রি হয়।
তরমুজের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. সালাউদ্দিন বলেন, ঈদের আগে থেকেই বাজারে খুলনার তরমুজ আসতে শুরু করেছে। এখন বাজারে যে তরমুজ পাওয়া যাচ্ছে তার বেশিরভাগ খুলনার তরমুজ। আকারে ছোট হলেও এই তরমুজের চাহিদা বেশি। আর বরিশালের তরমুজ আকারে বড় ও দেখতে সুন্দর হলেও চাহিদা কম। ফলে বরিশালের তরমুজ তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, খুলনা ও বরিশালে সব ধরনের তরমুজের দাম এখন অনেক কমে গেছে। রোজার মধ্যে বরিশালের যে তরমুজ ৫০০ টাকা বিক্রি হয়েছে, এখন তা ২০০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে না। খুলনার কিছু তরমুজ ঈদের আগে ৪০০ টাকার ওপরে বিক্রি হয়েছে। সেই তরমুজ এখন ১৫০ থেকে ১৮০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
তরমুজের এই দাম কমার কারণ হিসেবে এই ব্যবসায়ী বলেন, ঈদের দিন থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। এই বৃষ্টিতে তরমুজের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চাষিরা লোকসানের হাত থেকে বাঁচতে ছোট-বড় সব ধরনের তরমুজ তুলে বিক্রি করে দিচ্ছেন। আবার রোজার কারণে অনেকে বেশি বেশি তরমুজ কেনেন, এখন তাদের অনেকেই আর কিনেছন না। এসব কিছু মিলিয়েই তরমুজের দাম কমে গেছে।
রামপুরার ব্যবসায়ী দিদার বলেন, তরমুজের দাম কম দেখে আমরাও অবাক। আগে যে তরমুজ ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি করেছি, এখন সেই তরমুজ ১০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আগের তুলনায় এখনকার তরমুজ লাল ও মিষ্টি বেশি। মান ভালো ও দামে কম হলেও এখন বিক্রি সেভাবে হচ্ছে না।
সেগুনবাগিচায় তরমুজ কিনতে আসা ফরহাদ হোসেন বলেন, ২০০ টাকা দিয়ে তরমুজ কিনেছি। ঈদের আগে এই তরমুজ ৪০০ টাকা দিয়ে কিনতেও অনেক দর কষাকষি করতে হয়েছে। এখন তরমুজের দাম বেশ কম। কয়েকদিন আগে একটা তরমুজ কিনেছিলাম, ওটা বেশ মিষ্টি ছিল।
রোববার (১৫ মে) বেলা ১১টার দিকে যাত্রাবাড়ী থেকে ৮০ টাকা দিয়ে তরমুজ কেনা মো. জয়নাল বলেন, দুদিন আগে ৮০ টাকা দিয়ে একটা তরমুজ কিনেছিলাম, ওজন প্রায় পাঁচ কেজি। তরমুজটা অনেক ভালো ছিল। আজও তরমুজ ওই দামে বিক্রি হচ্ছে। তরমুজের এমন দাম থাকলে আমরা কিনে খেয়ে শান্তি পাই।
তরমুজের দামের বিষয়ে বাদামতলীর ব্যবসায়ী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, এখনকার বেশিরভাগ তরমুজ দেখতে সুন্দর না। কোনটার মুখ চিকন, আবার কোনোটার মাজা বাঁকা। এসব তরমুজের আকৃতি ভালো না হলেও স্বাদ ভালো। এখনকার অধিকাংশ তরমুজ লাল ও অনেক মিষ্টি। তবে দাম অনেক কম। ঈদের আগের তুলনায় এখন তরমুজ অর্ধেকের কম দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশ ফ্রেস ফ্রুট ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সাথী ফ্রেস ফ্রুটস লিমিটেডের মালিক সিরাজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, রোজায় তরমুজের যে চাহিদা ছিল তা এখন নেই। আবার বৃষ্টির কারণে চাষিরা বেশি বেশি তরমুজ তুলছেন। এসব কারণেই তরমুজের দাম কমে গেছে।
তিনি বলেন, তরমুজ নিয়ে চাষি, ব্যাপারী সবাই এখন বিপাকে আছেন। এমন তরমুজ বেঁচে পরিবহন খরচও উঠছে না। দেখা যাচ্ছে জাহাজ ভাড়া ৯০ হাজার টাকা, আর তরমুজ বিক্রি হচ্ছে ৭০ হাজার টাকা। কয়দিন আগে এক ব্যাপারী ঘাটে জাহাজ রেখে পালিয়ে গেছেন।
জাহাজে তরমুজ রেখে ব্যাপারী পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সিরাজুল ইসলাম বলেন, জাহাজ থেকে তরমুজ নামানো হচ্ছে না- এমন খবর পেয়ে আমি সেখানে যাই। যাওয়ার পর শুনলাম জাহাজে ১৩ হাজার তরমুজ আনা হয়েছে, ভাড়া ৯০ হাজার। অথচ তরমুজের দাম উঠেছে ৭০ হাজার। ব্যাপারী পালিয়ে যাওয়ায় আমি জাহাজ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করি তরমুজ বেঁচে যে টাকা পাওয়া যায়, তা নেওয়ার।