September 8, 2024
জাতীয়

হাসপাতালে ডাক্তার ও কর্মী উপস্থিতি ৮০ শতাংশ

দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক

হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি বাড়াতে মনিটরিং সেল গঠন করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক মনিটরিং দেখভাল করছেন। জোরদার মনিটরিংয়ের ফলে দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের গড় উপস্থিতি ৮০ থেকে বেড়ে ৮১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা নিয়মিত কর্মস্থলে উপস্থিত হতো না। তারা কর্মস্থলে না এসে চেম্বারে বসে রোগি দেখতো। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই স্বাস্থ্য সেক্টরে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১৩ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক স্বয়ং দেশের প্রায় ৬ হাজার চিকিৎসককে কর্মস্থলে না পাওয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সদস্য করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি গঠনের পর কয়েকটি অভিযানও চালানো হয়। কিন্তু ধীরে ধীরে কমিটির অভিযানে নেমে আসে স্থবিরতা। এরপর তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমও এ বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। এমনকি চাকরিচ্যুত করার মতো কঠিন শাস্তি দেয়ার ঘোষণা দেন। এতে করে কর্মস্থলে উপস্থিতি কিছুটা বৃদ্ধি পায়।

এরপর সর্বশেষ গত ফেব্র“য়ারিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক মন্ত্রণালয়ে একটি মনিটরিং সেল গঠন করেন এবং এর প্রতিদিনের আপডেট তিনি নিজেই দেখছেন। এদিকে গত বছরের শেষের দিকে কর্মস্থলে চিকিৎসকদের ইলেকট্রনিক হাজিরা মনিটরিং করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বায়োমেট্রিক মেশিন স্থাপন করা হয়।

দেশের আট বিভাগে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী মোট ৪৮৪টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রায় ৯৫ ভাগ প্রতিষ্ঠান বায়োমেট্রিক পদ্ধতির হাজিরা তথ্য প্রেরণ করে থাকে। হাজিরা পদ্ধতি বায়োমেট্রিক হওয়ার কারণে যারা কর্মস্থলে আসেন তাদের খুব সহজে চিহ্নিত করা এবং যারা অনুপুস্থিত থাকছেন তাদেরকে সনাক্ত করা যাচ্ছে।

মনিটরিং সেলের তথ্য অনুযায়ী, গত ফেব্র“য়ারিতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গড় উপস্থিতি ছিল ৪১ ভাগ। এরপর মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসে উপস্থিতি ৭৫ থেকে ৭৯ ভাগ। গত তিন মাসে (জুন, জুলাই, আগস্ট) প্রতিষ্ঠানগুলোতে চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতির গড় হার ছিল ৮০ দশমিক ৬৬।

এর মধ্যে বরিশালে ৭৯ দশমিক ২৫ ভাগ, চট্টগ্রামে ৭৯ দশমিক ২১ ভাগ, ঢাকায় ৮০ দশমিক ০৫ ভাগ, খুলনায় ৭৯ দশমিক ৯৬ ভাগ, ময়মনসিংহে ৭৯ দশমিক ৮৫ ভাগ, রাজশাহীতে ৭৯ দশমিক ৩০ ভাগ, রংপুরে ৭৯ দশমিক ১৭ ভাগ এবং সিলেটে বিভাগে ৭৯ দশমিক ৭৬ ভাগ।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মনিটরিং কার্যক্রম গত ফ্রেব্র“য়ারিতে শুরু হয়। তখন উপস্থিতি ছিল শতকরা ৪১ জন। এখন উপস্থিতি বেড়ে হয়েছে ৮০ থেকে ৮১ ভাগ। হাসপাতালে কয়েক শিফটে ডিউটি হয়। বিকেল ও রাতে বায়োমেট্রিক হাজিরা বন্ধ থাকায় তারা হাজিরা দিতে পারে না। তাই আমাদের টার্গেট ৯০ ভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত করা যা দু-এক মাসের মধ্যেই সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘হাসপাতালে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের উপস্থিতি মনিটরিং কার্যক্রমটি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী নিজেই পর্যবেক্ষণ করেন। কোন হাসপাতালে বায়োমেট্রিক হাজিরার উপস্থিতি কম হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধানকে জানানো হয় এবং তিনি অনুপুস্থিত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেন।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের জোরদার মনিটরিংয়ের কারণে দেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসকদের উপস্থিতি বেড়ে ৮০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের যৌথ মনিটরিং কঠোরভাবে অব্যাহত রেখে এই হার শতভাগে উন্নীত করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের যন্ত্রপাতির সুষ্ঠু রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যেও মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। হাসপাতালে সেবার মান বাড়ানোর জন্য সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তাসহ সব প্রতিষ্ঠান প্রধানকে আরও দায়িত্বের পরিচয় দিতে হবে। যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তাদের জবাবদিহিতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে নিয়মিতভাবে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন অব্যাহত রেখে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবার মান বাড়ানোর দিকে নজর দেয়া হবে।’

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *