হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সেবন করছেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এখন প্রতিদিনই ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সেবন করছেন।
সোমবার রেস্তোরাঁ নির্বাহীদের সঙ্গে এক বৈঠকে ট্রাম্প একথা জানান বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে সিএনএন।
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এবং অনেক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নতুন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি এর ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক করলেও ট্রাম্প সেসব উপেক্ষা করেই কোভিড-১৯ প্রতিরোধে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন উপকারি বলে দাবি করে আসছিলেন।
রেস্তোরাঁ নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে তিনি জানান, হোয়াইট হাউসের চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করেই তিনি ম্যালেরিয়া রোগের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়া শুরু করেছেন।
তবে হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক শন কনলিই তাকে এ ওষুধ সেবনে পরামর্শ দিয়েছেন কিনা, ট্রাম্প তা খোলাসা করেননি।
“কয়েক সপ্তাহ আগে থেকে আমি এটা নেয়া শুরু করেছি,” বলেছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরে জানান, গত দেড় সপ্তাহ ধরেই তিনি প্রতিদিন হাউড্রক্সিক্লোরোকুইন সেবন করছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই ট্রাম্প কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় এই অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ওষুধটির ‘সম্ভাব্য কার্যকারিতা’ নিয়ে উচ্ছ্বাস জানিয়ে আসছিলেন।
সম্প্রতি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নতুন করোনাভাইরাস মোকাবেলায় কার্যকর নয় জানানোর পাশাপাশি এটি ব্যবহারে হৃদরোগজনিত সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
এর আগে নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনেও ওষুধটি প্রাণঘাতী ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের উপযুক্ত নয় বলে মত দেওয়া হয়েছিল।
এসব প্রতিবেদনের আগেই কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় হরেদরে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার নিয়ে এফডিএ এবং ন্যাশনাল ইনস্টিাটউট অব হেলথ সাবধান করেছিল।
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত নন এবং সম্মুখসারির যোদ্ধাদের কাছ থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের উপকারিতার কথা শোনার পরই তিনি এ ওষুধটি সেবন শুরু করেছেন।
তাকে লেখা একাধিক চিঠিতে ওই সম্মুখসারির যোদ্ধারা নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া ঠেকাতে পূর্বসতর্কতার অংশ হিসেবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন, বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
“এগুলোই আমার প্রমাণ, আমি এটি সম্পর্কে ইতিবাচক অনেক কিছু শুনেছি,” বলেছেন তিনি।
হোয়াইট হাউসের চিকিৎসক তাকে এ ওষুধটি ব্যবহারে পরামর্শ দিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প কৌশলের আশ্রয় নেন।
“আমি তার কাছে তার ভাবনা জানতে চেয়েছি, তিনি বলেছেন, আপনার মনে হলে আপনি সেবন করতে পারেন,” বলেন রিপাবলিকান এ প্রেসিডেন্ট।
সোমবার রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের চিকিৎসক নৌ কমান্ডার শন কনলির নামে প্রকাশিত এক নথি থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায়, সপ্তাহ দুয়েক আগে ব্যক্তিগত পরিচারকের দেহে নতুন করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়া শুরু করেন।
কনলি সরাসরি এমন কিছু না বললেও তার দেওয়া ভাষ্য অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট যে সময় থেকে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়া শুরু করেছেন, তার সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত পরিচারকের কোভিড-১৯ শনাক্তের সময় মিলে যায় বলে জানিয়েছে সিএনএন।
“হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে তার (ট্রাম্প) সঙ্গে আমার কয়েকদফা আলোচনার পর আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে, এর ঝুঁকির তুলনায় উপকারিতাই বেশি,” নথিটিতে কনলি এমনটাই লিখেছেন।
একই নথিতে করোনাভাইরাস শনাক্তে ট্রাম্পের কয়েক দফা পরীক্ষা হয়েছে বলেও জানান হোয়াইট হাউসের এ চিকিৎসক।
কোনো পরীক্ষাতেই ট্রাম্পের দেহে ভাইরাসটির উপস্থিতি ধরা পড়েনি এবং তার কোনো উপসর্গও নেই, বলেছেন তনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট অবশ্য কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন কাজ করে কিনা তা জানেন না বলে স্বীকার করে নিয়েছেন।
এরপরও বলেছেন, “যদি কাজ নাও করে, এটি ব্যবহারে আপনি অসুস্থ হবেন না, মারাও যাবেন না।”
যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) এর আগে কেবল হাসপাতাল ও ক্লিনিকেই নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ও ক্লোরোকুইন জাতীয় ওষুধের পরীক্ষামূলক ব্যবহার করা যাবে জানিয়ে এর গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে সতর্ক করেছিল। এটির ভুল ব্যবহার মৃত্যু ডেকে আনতে পরে বলেও হুঁশিয়ার করেছিল তারা।