সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের ইঙ্গিত
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের দাবির মুখে কার্যকরের আগেই সড়ক পরিবহন আইনটি সংশোধন হতে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত এ সংক্রান্ত উপকমিটির বুধবারের এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের কথায় এ ইঙ্গিত মেলে।
বাসচাপায় দুই ছাত্র-ছাত্রীর মৃত্যুর পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে আগের আইন কঠোর করে এই আইনটি করা হয়েছিল; যদিও তা এখনও কার্যকর হয়নি।
তবে আইনটি প্রণয়নের পর থেকে তার প্রবল বিরোধিতা করে আসছে পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ঘটনার মামলায় নতুন আইনে শাস্তির মাত্রা ‘অযৌক্তিক’ বেশি।
আসামিদের জন্য এই আইনের সব ধারা জামিনযোগ্য করা, সড়ক দুর্ঘটনায় চালকের অর্থদণ্ড পাঁচ লাখ টাকার বিধান বাতিল এবং পঞ্চম শ্রেণি পাস হলেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণের দাবিতে তারা আন্দোলনে নামলে এ বছরের ১৭ ফেব্র“য়ারি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের বৈঠকে আইনটি পর্যালোচনায় এই উপকমিটি করা হয়।
এই কমিটিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইনমন্ত্রীর পাশাপাশি রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনও সদস্য। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি, সাবেকমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁও বৈঠকে ছিলেন।
সভা শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের প্রশ্নে বলেন, আমরা একটা প্রতিবেদন তৈরি করব। সেই প্রতিবেদনটি আমরা মূল কমিটির (জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল) কাছে হ্যান্ডওভার করব। মূল কমিটি পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে।
যেসব অসুবিধাগুলো ছিল, যেগুলো নিয়ে এতদিন আমরা মিটিং করেছি, সেই মিটিংগুলোতে একটা সিদ্ধান্তে এসে আজকে সংক্ষিপ্ত আকারে একটা প্রতিবেদন পাঠাতে পারব। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলেই হবে। পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা এই আইনে শাস্তির মাত্রা কমানোর দাবি জানিয়েছিল, তাদের দাবি পূরণ হচ্ছে কি না- জানতে চাওয়া হয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে।
তিনি বলেন, শুধু সাজা কমানো না, অনেক দাবি ছিল। সবগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সবগুলো আমরা বিশ্লেষণ করে আমরা যে সিদ্ধান্তে যাচ্ছি, আজকে সেটা চূড়ান্ত করেছি। আমাদেশ পার্শ্ববর্তী দেশে এবং অন্যান্য দেশে এই আইনগুলোতে (সড়ক পরিবহন) কী আছে, সেখানে কী ধরনের শাস্তির বিধান রয়েছে। এগুলো আমরা দেখেছি, সেগুলো এনে পর্যালোচনা করেছি। সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্তটা আজকে নিতে যাচ্ছি।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, আমরা আইনটি যখন তৈরি করেছি, তখন তাদের (পরিবহন মালিক-শ্রমিক) কিছু দাবি-দাওয়া ছিল। সেই দাবি-দাওয়াগুলো সম্পূর্ণভাবে আইনে আসেনি, এটা তাদের ডিমান্ড ছিল। সেজন্য পাস হওয়া আইন প্রয়োগের কোথায় সমস্যা হচ্ছে, কেন হচ্ছে, সেটা আমরা দেখার জন্য বসেছি।
তার মানে আইনটি আবার সংশোধন হতে পারে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, হ্যাঁ, এটা হতে পারে। যদি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল মনে করে এই আইনটি সংশোধন হতে পারে, তাহলে তারা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সংসদে নিয়ে যাবে।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীরা সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে দায়ী চালকের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান যোগ করাসহ আইন আরও কঠোর কথার দাবি জানিয়েছিল; যা তখন যৌক্তিক বলেছিলেন সরকারের মন্ত্রীরাও।
এখন আইন নমনীয় করা হলে শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন ওই আন্দোলনকে ‘অবজ্ঞা’ করা হয় কি না- এ প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি, আমি বলেছি পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এই আইন কীভাবে প্রয়োগ করছে, বিধান কী কী রয়েছে, তা আমরা দেখেছি।
আমরা সেগুলো বিশ্লেষণ করে, স্টেকহোল্ডাররা কী চাচ্ছে এগুলো আমরা বিস্তারিতভাবে দেখেছি। সামঞ্জস্যপূর্ণ একটা অবস্থানে যাওয়ার জন্য হয়ত আমরা একটা সুপারিশ করতে পারি। এখানে জামিন পাবে কি পাবে না, কারও শাস্তি আরও বৃদ্ধি হবে কি হবে না, এটা সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের ব্যাপার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, জামিনযোগ্য হচ্ছে, এই কথাটা বলা ঠিক হবে না। দেখুন একটা আইন করার পর সংসদে পাস হওয়ার পরও যখন প্রয়োগ করা হয়, কিছু সুবিধা-অসুবিধার কথা উঠে আসে।
আমরা চাই এটার (সড়ক পরিবহন আইন) সর্বজনীন প্রয়োগে যাতে কোনো অসুবিধা না হয়। আমরা এই আইনের মাধ্যমে যে সমস্যাগুলো দূর করার চেষ্টা করছিলাম, সেটা যাতে আরও ভালোভাবে হয়।
আনিসুল হক বলেন, আমরা অনেকগুলো সভা করেছি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এই সাব কমিটির আহŸায়ক। তিনি যেটা বলেছেন, আমরা সব দিক বিবেচনা করে একটা সুপারিশ করেছি।
যদি জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল গ্রহণ করে, তাহলে এই আইনের যে পরিবর্তনগুলো করতে হবে, অবশ্যই সেটা একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গিয়ে সর্বশেষ জাতীয় সংসদে গিয়ে পাস হবে।
গত বছরের ৮ অক্টোবর ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮’ এর গেজেট প্রকাশ হলেও তা কার্যকর না হওয়ায় আদালতে রিট আবেদনও হয়। আইনটি কার্যকর করতে আইনটির ১(২) ধারা অনুযায়ী গেজেট প্রকাশে সরকারের ব্যর্থতা, নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও হয় হাই কোর্টের।
এদিকে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলের এক সভায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে গত ২৭ ফেব্র“য়ারি পরিবহন মালিক, শ্রমিক, পুলিশ, গবেষক ও বিআরটিএসহ বিভিন্ন পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়, যার প্রধান করা হয় শাজাহান খানকে।