স্বাস্থ্যখাতকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে: রিজভী
করোনা ভাইরাস মহামারির মধ্যেও স্বাস্থ্যখাতকে লুটপাটের আখড়ায় পরিণত করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যখাতে চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। ক্ষমতাসীন দলের হোমরা-চোমরারা দুর্নীতিতে ভাগ বসাতে ব্যস্ত।’
রোববার (৭ জুন) দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে রিজভী বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (৪ জুন) একটি জাতীয় দৈনিকে দুর্নীতির ভয়ঙ্কর চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, হাসপাতাগুলোতে ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট, স্বাস্থ্য সরঞ্জাম, পিপিই সংকটে করোনায় আক্রান্তদের সেবা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। এমন বাস্তবতায় বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া ‘করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় জরুরি সহায়তা’ প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ সেফটি গগলস কেনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রতিটি সেফটি গগলসের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা। মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫০ কোটি টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে প্রতিটি সেফটি গগলস বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, ‘ওই প্রকল্পের আওতায় মোট এক লাখ সাত হাজার ৬০০ পিপিই কেনা হবে। যার প্রতিটির জন্য খরচ ধরা হয়েছে চার হাজার ৭০০ টাকা। পিপিই কেনায় মোট খরচ হবে ৫০ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজারে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সব শর্ত মেনে ওষুধ অধিদপ্তরের সব শর্ত অনুসরণ করে বিভিন্ন কোম্পানির তৈরি ভালো মানের পিপিই বিক্রি হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকায়। এ প্রকল্পের আওতায় ৭৬ হাজার ৬০০ জোড়া বুট জুতা কেনা হবে। প্রতিটি জুতার খরচ দেখানো হয়েছে এক হাজার ৫০০ টাকা। এ খাতে খরচ ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অথচ বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতিটি বুট জুতা কেনা যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়।’
রিজভী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে করোনা মোকাবিলার প্রকল্পে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম কেনার চেয়ে সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট, সেমিনার, কনফারেন্স ও পরামর্শক খাতে তুলনামূলক বেশি খরচ হচ্ছে। গবেষণার জন্য খরচ দেখানো হয়েছে ২৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ইনোভেশন নামে আলাদা একটি খাত তৈরি করে সেখানে ৩৬ কোটি টাকা খরচ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা সংকটের মধ্যে সবকিছু স্থবির, সেখানে এ প্রকল্পে ভ্রমণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। মাত্র ৩০টি অডিও-ভিডিও ফিল্ম তৈরির খরচ দেখানো হয়েছে ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ৮০টি সেমিনার ও কনফারেন্স করে খরচ করা হবে দুই কোটি ৫০ লাখ টাকা। অস্বাভাবিক খরচ দেখানো হয়েছে ওয়েবসাইট উন্নয়ন খাতে। মাত্র চারটি ওয়েবসাইট উন্নয়ন করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের খরচ হবে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি ডাটাবেস তৈরিতে খরচ দেখানো হয়েছে ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। পাঁচটি কম্পিউটার সফটওয়্যার কেনায় খরচ ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা।’
বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘তীব্র সংকট মোকাবিলায় ভেন্টিলেটর আমদানির পরিকল্পনা নেওয়া হলেও আজও ক্রয়াদেশ দেওয়া হয়নি। ভেন্টিলেটর আমদানির আগেই সেখানে দুর্নীতির কালো থাবা বিস্তার করেছে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন ২৬ হাজার ৫৬ জন। গত এক মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ লাখ ১৪ হাজার ৩২ জন। এ মাসের শেষে এ সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৯ লাখ ১১ হাজার ৬০ জনে। যার সঙ্গে সরকারি পরিসংখ্যানের কোনো মিল খুঁজে পাওয়া যাবে না।’
রিজভী বলেন, ‘গত ২ জুন প্রকাশিত এমআরসি সেন্টার ফর গ্লোবাল ইনফেকশিয়াস ডিজিজ এনালাইসিস শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে বাংলাদেশ সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো পদক্ষেপ প্রহণ করা না হয় তাহলে ৩০ জুনের মধ্যে ১৯ হাজার ৮৪৮টি আইসিইউ বেড লাগতে পারে। অথচ সরকারি হাসপাতালে এপ্রিল মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আইসিইউ বেড আছে মাত্র ৫০৮টি। যা আমাদের মোট চাহিদার ২.৫৫ ভাগ।’
তিনি বলেন, ‘ব্রিটেনের প্রভাবশালী সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট গত শুক্রবার (৫ জুন) এক প্রতিবেদনে বলেছে, শুধুমাত্র রাজধানীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ ছাড়িয়েছে। ইকোনমিস্টের রিপোর্ট যদি সত্যি হয় তাহলে দেশের অবস্থা কতটা ভয়ঙ্কর তা সহজে অনুমেয়।’
রিজভী বলেন, ‘পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমই’র সভাপতি জুন মাস থেকে শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রণোদনার পাঁচ হাজার কোটি টাকা নেওয়ার পর তাদের এ ঘোষণা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’