স্বাধীনভাবে চলতে দেয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে
বিশ্ববিদ্যালয় একটি গোটা শহরের বিকাশকে তরান্বিত করেছে অতীতে, আমরা দেখেছি। যেমন, উদাহরণস্বরুপ, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। সমগ্র বিশ্বে ক্যামব্রিজকে চেনা হয় ‘ইউনিভার্সিটি সিটি’ হিসেবে। ‘ইউনিভার্সিটি সিটি’ হলো সেই শহর, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানুষজনের রয়েছে সংখ্যাধিক্য। আমরা যদি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বিবেচনা করি, তাহলে খুলনার যে ব্যাপ্তি শহরের দক্ষিণপশ্চিমে আজ দেখি, সেটা খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবের ফল। ত্রিশ বছর আগে, এই নিরালা আবাসিক এলাকা বিরান ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় পত্তনের পর, চোখের সামনে এই এলাকাটি হাস্যজ্জ্বল হয়ে উঠলো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, আমরা মাঝে মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবগাম্ভির্য বুঝতে ব্যর্থ হই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সমাজের আর দশটা প্রতিষ্ঠানের মত ট্রিট করি; এভাবে প্রকারান্তরে, আমরা নিজেদের বিকাশকেই রুদ্ধ করে রাখি, সীমিত করে ফেলি।
শুধু উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে নয়, যেকোনো বিচারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয় নতুন নতুন জ্ঞান সৃজনের মাধ্যমে মানুষকে টিকে থাকার কৌশল শেখানোর পাশাপাশি, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে মননশীলতা চর্চার মাধ্যমে এটি জাতীর রুচি তৈরির নেতৃত্ব দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় মানুষকে স্বাধীনভাবে চিন্তা করতে শেখায়। এই কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্ত্বশাসনের কথা জোরে শোরে বলা হয়। অতএব, সমাজ ও রাষ্ট্রের ক্ষমতাধর, নেতৃস্থানীয়দের উচিত বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া; বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্ঞানের রাজ্যে, বাইরে থেকে খবরদারি করা থেকে বিরত থাকা। নিজেদের স্বার্থেই এটা দরকার।
যে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে গড়ে তোলা হলেও, এটি দেশের একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। আবার বিশ্ববিদ্যালয়কে শুধু জাতীয় প্রতিষ্ঠান হলেও চলে না। তাঁকে বৈশ্বিকও হয়ে উঠতে হয়। তাঁকে বিশ্বমানের হতে হয়। বর্তমান যুগ প্রতিযোগীতার যুগ, ক্রমাগত পরিবর্তন ও উন্নতির যুগ। অনেক দ্রুত পাল্টে যাচ্ছে সবকিছু। আজ যাকে ঠিক বলে মনে হচেছ, কালই সেটা সেকেলে হিসেবে গণ্য হচ্ছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়কেও টিকে থাকার সংগ্রামে অন্য যেকোনো প্রতিষ্ঠানের চেয়ে বেশী কাটখড় পোড়াতে হচ্ছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এরকম সময়ে শুধু সরকারী সাহায্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিযোগীতা-সক্ষমতা অর্জনে তাই সমাজের সক্ষমদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। সক্ষম মানুষেরা যে এগিয়ে আসেন না, তা নয়। কিন্তু আমাদের বক্তব্য হলো, তাঁদেরকে আরও জোরালো ভুমিকা রাখতে হবে। সবচেয়ে ভাল সাহায্য হতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উন্নয়নে পরিকল্পিত, আর্থিক প্রণোদনা দেয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগবৃদ্ধি করা। তাদেরকে কাজে লাগানো, তারা কি পারে সেটা দেখা, সেই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলিও শোনা। সেগুলি বুঝতে চেষ্টা করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সমাজের যোগাযোগ যত নিবিড় হবে, সামাজিক মানুষ হিসেবে আমাদের মুখ তত উজ্জ্বল হবে, আমাদের বিকাশ তত দ্রুত হবে। আমাদের সন্তানদের জন্য আমরা তত ভাল কিছু রেখে যেতে পারবো।