স্কুল-কলেজে ছুটি, শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ মন্ত্রিসভার
করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে আপাতত দুই সপ্তাহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সময়ে শিক্ষার্থীদের বাড়িতেই থাকার নির্দেশনা এসেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সোমবার (১৬ মার্চ) মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তিন জন এবং ১৪ মার্চ আরও দু’জন রোগী পাওয়া যায়। প্রথম তিন জনের মধ্যে দু’জন বিদেশ থেকে আসায় তৃতীয় আরেক জনের শরীরে করোনা ছড়ায়। আর পরের দুজনের একজন ইতালি ও অপরজন জার্মানি থেকে দেশে ফিরেছিলেন। সোমবার (১৬ মার্চ) নতুন করে আরও তিনজনের শরীরে করোনার সংক্রমণ দেখা দেওয়ার কথা জানায় আইইডিসিআর, যাদের মধ্যে দু’জনই শিশু এবং একজন নারী।
দেশে আট জনের শরীরে সংক্রমণের এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্তের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেওয়া শুরু করেছে।
সচিবালয়ে ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
‘সেই সঙ্গে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, অভিভাবকেরা নিশ্চিত করবে যে তাদের ছেলেমেয়েরা একা বাইরে ঘুরে না বেড়ায়। তাদেরকে ছুটি দেওয়াই হচ্ছে সেফটির জন্য। বাইরে ঘোরাফেরা করলে তদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একা একা যেন বাইরে না যায়, অভিভাবকদের সঙ্গে যেতে পারে।’
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যদিও সংক্রমণের ঘটনা অত্যন্ত কম, তবুও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের সব পর্যায়ে, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বন্ধ থাকবে, মন্ত্রিসভায় এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সব কোচিং সেন্টারও এই সময় বন্ধ রাখা হবে বলে জানান তিনি।
দীপু মনি বলেন, অভিভাবকরা উদ্বেগ জানিয়েছিলেন, শিক্ষার্থী এবং শিক্ষকদের কেউ কেউ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের বাড়িতে থাকার নির্দেশনার বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাবো, (স্কুল ছুটির সময়) শিক্ষার্থীদের অবশ্যই বাড়িতে থাকা নিশ্চিত করতে হবে।
‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তার মানে এই নয় সর্বত্র তারা ঘুরে বেড়াবে, বেড়াতে যাবে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা হয়েছে যাতে সংক্রমণ না হয়। কাজেই সেটি মাথায় রেখে অভিভাবকরা যেন নিশ্চিত করেন শিক্ষার্থীরা যার যারা বাড়িতে থাকবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার যে নির্দেশ রয়েছে তা প্রতিপালন করি।’
সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি দীর্ঘায়িত হতে পারে আভাস দিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আগামী মাসের মাঝামাঝি থেকে গ্রীষ্মের ছুটি ও রোজার ছুটি শুরু হবে। আমরা দেখবো অবস্থা কী করম হয়। যদি প্রয়োজন হয় সেই ছুটির সঙ্গে আমরা (এই ছুটিটা) অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করবো।
আগামী ১ এপ্রিল থেকে এইচএসসি পরীক্ষার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে- প্রশ্নে দীপু মনি বলেন, সেই তারিখের আরও কাছাকাছি গেলে তখন সিদ্ধান্ত দিতে পারবো। সতর্কতামূলক, প্রতিরোধমূলক যা কিছু আমাদের প্রয়োজন হবে আমরা সেই সিদ্ধান্ত নেবো, কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা পিছপা হবো না। কিন্তু আগ বাড়িয়ে যেটির প্রয়োজন নেই সে রকম কোনো সিদ্ধান্তও নিতে চাই না। বৈশ্বিক এবং দেশের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
১০০ গাছ লাগাবেন শিক্ষকরাই
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গণ বা আশাপাশের উপযুক্ত স্থানে মঙ্গলবার ১০০টি করে গাছ লাগানোর সিদ্ধান্তের কথা তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কোনো রকম জমায়েত ছাড়া এই গাছগুলো রোপণের বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের নিশ্চিত করতে হবে, এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্য কোনো অনুষ্ঠান হবে না।
প্রাথমিকের চিঠি পাঠের কর্মসূচি স্থগিত
পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন সংবাদ সম্মেলনে জানান, সারা পৃথিবীতে করোনা ভাইরাস, যদিও আমরা খুব বেশি সংক্রমিত হইনি। তারপরেও আমাদের সাবধানতা অবলম্বনের জন্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, দেড়শ’ মানুষের বেশি একত্রে থাকা ঠিক নয়।
‘নানা বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা করে প্রাথমিক থেকে শুরু করে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩১ মার্চ পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ৩১ মার্চের পরে আমরা পরিবেশ যদি দেখি স্বাভাবিক হয়ে গেছে আমরা খুলে দেবো।’
তিনি বলেন, কাল (মঙ্গলবার) থেকেই ছুটি ঘোষণা হবে, আমরা সারা বাংলাদেশে আজকেই প্রধান শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর চিঠি পৌঁছে দেবো। কালকে যে প্রোগ্রাম সেটা হবে না, এই মাত্র বন্ধ করে দিলাম।
দুই শিশু আক্রান্তের খবর জানালেও প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো শিশু আক্রান্ত হয়েছে বলে আমরা খবর পাইনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিকের এক কোটি ৩৬ লাখ শিশু শিক্ষার্থীর কাছে চিঠি লিখেছেন। আমরা সব প্রধান শিক্ষককে নির্দেশনা দিয়েছি আজকে যেন তারা তাদের স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের চিঠিটা হস্তান্তর করে।
‘আমাদের মূল কাজটা ছিল প্রধানমন্ত্রীর চিঠিটা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দেওয়া। করোনা ভাইরাসের কারণে আমরা আমাদের প্রোগ্রামটা বাতিল করেছি।’