সৌম্য- মাহমুদুল্লাহ সেঞ্চুরিতেও এড়ানো গেলো না ইনিংস হার
ক্রীড়া ডেস্ক
রেকর্ড ছোঁয়া অসাধারণ সেঞ্চুরিতে সকালটা রাঙালেন সৌম্য সরকার। দ্বিতীয় সেশন আলোকিত করল মাহমুদউলাহর দুর্দান্ত সেঞ্চুরি। তবে অন্যরা থাকল সেই ব্যর্থতার চক্রেই। বিকেলে তাই মেনে নিতে হলো অনুমিত পরিণতিই। বাংলাদেশ হারল ইনিংস ব্যবধানে। হ্যামিল্টন টেস্টে বাংলাদেশকে ইনিংস ও ৫২ রানে হারিয়েছে নিউ জিল্যান্ড। তিন ম্যাচ সিরিজে এগিয়ে গেছে ১-০ ব্যবধানে।
নিজেদের টেস্ট ইতিহাসের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে প্রথম ইনিংসে ৪৮১ রানের লিড নিয়েছিল নিউ জিল্যান্ড। শনিবার টেস্টের চতুর্থ দিন শেষ সেশনে বাংলাদেশ অলআউট হয়েছে ৪২৯ রানে। সৌম্য ও মাহমুদউলাহর জুটিতে এক সময় বাংলাদেশ আশা জাগিয়েছিল ইনিংস পরাজয় এড়ানোর। চতুর্থ উইকেটে দুজনের জুটির রান ২৩৫; পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের তৃতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু এই দুজন ছাড়া দাঁড়াতে পারেননি আর কেউ।
ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিতে সৌম্য ছুঁয়েছেন বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। লাঞ্চের পর ফিরেছেন ১৪৯ রান করে। হ্যামিল্টনে দ্বিতীয় আর ক্যারিয়ারের চতুর্থ টেস্ট সেঞ্চুরিতে মাহমুদউলাহ করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ১৪৬। আগের দিন ১২৬ রানে দল চতুর্থ উইকেট হারানোর পর জুটি বেঁধেছিলেন দুজন। লড়াই করে কাটিয়ে দিয়েছিলেন শেষ সেশন। চাপ ছিল এ দিন সকালেও। গ্রোতের মতো এসেছে শর্ট বল। স্কিলের পরীক্ষা হয়েছে প্রতি মূহুর্তে। সৌম্য ও মাহমুদউলাহ জবাব দিয়েছেন দুর্দান্ত স্কিল, পরিকল্পনা ও সাহসিকতায়।
সকাল থেকেই দুজন ছিলেন সাবলীল। দিনের শুরুতেই দারুণ এক পুল শটে মাহমুদউলাহ জানিয়ে দেন আত্মবিশ্বাসের বার্তা। ট্রেন্ট বোল্টকে বাউন্ডারির পর ওই ওভারেই দারুণ হুক শটে ছক্কায় সৌম্য ফিফটি স্পর্শ করেন ৬০ বলে।
নিউ জিল্যান্ড অনুমিতভাবেই শর্ট বল করেছে একের পর এক। নিল ওয়েগনার স্টাম্পের দুপাশ থেকেই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে তাক করেছেন শরীর। এমনকি বোল্টের মতো সুইং বোলারও বেছে নিয়েছেন টানা শর্ট বোলিংয়ের পথ। সৌম্য ও মাহমুদউলাহ জবাব দিয়েছেন দারুণ। কখনও ব্যাট ঢাল করেছেন, কখনও আড়াল করেছেন শরীর। পুল শট খেলেছেন নিয়ন্ত্রিত, হুক শটে করেছেন পাল্টা আক্রমণ।
ওয়েগনারের শর্ট বলে দুই ইনিংসেই শাফল করে খেলে সফল হয়েছিলেন তামিম ইকবাল। সৌম্যও শাফল করে খেলে পেয়েছেন সাফল্য। তার শাফল করে খেলা শট থামাতে এক পর্যায়ে শর্ট ফাইন লেগ রাখা হলো ফিল্ডার। সৌম্য সেটিও সামাল দিয়েছেন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যাটিংয়ে।
দিনের প্রথম ঘণ্টায় ১৪ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ৭৮ রান, যাতে ছিল ১১ চার ও ৩ ছক্কা! প্রথম ইনিংসে শর্ট বলে ৫ উইকেট নেওয়া ওয়েগনারের ৭ ওভারের স্পেলে আসে ৪৭ রান। বোল্টের ৬ ওভারে ৩১। বাধ্য হয়ে লেগ স্পিনার টড অ্যাস্টলকে আক্রমণে আনেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। মাহমুদউলাহ স্বাগত জানান প্রথম ওভারেই দৃষ্টিনন্দন দুটি বাউন্ডারিতে।
বাংলাদেশের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়ার সুযোগ ছিল সৌম্যর। শেষ পর্যন্ত নতুন রেকর্ড গড়তে না পারলেও ছুঁয়েছেন ঠিকই। ৯৪ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। ২০১০ সালে লর্ডসে ৯৪ বলে সেঞ্চুরি করে রেকর্ডটি এতদিন একার ছিল তামিমের। সকালের সেশনে ২৯ ওভারেই ১৩৬ রান তোলেন দুজন। লাঞ্চের পর তাদের জুটি পেরিয়ে যায় দুইশ। নিউ জিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণ কোনো প্রভাবই ফেলতে পারছিল না। চিত্র বদলে যায় দ্বিতীয় নতুন বলে। প্রথম বল থেকেই সুইং পেতে থাকেন বোল্ট। সাউদিকে যদিও ওভারে তিন বাউন্ডারি মারেন সৌম্য, তবে বোল্ড হয়ে যান বোল্টের সুইংয়ে ব্যাট-প্যাডের মাঝে ফাঁক রেখে। ১৭১ বলে ১৪৯ রানের ইনিংস তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারেও সর্বোচ্চ। ২১টি চারের সঙ্গে ইনিংসে ছক্কা মেরেছেন ৫টি।
মাহমুদউলাহকে থামাতে পারেনি নতুন বলও। সাউদিকে টানা দুটি বাউন্ডারিতে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৮৩ বলে। ২০১০ সালে এই হ্যামিল্টনেই করেছিলেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। এবার সেঞ্চুরি করলেন অধিনায়ক হিসেবে। সেঞ্চুরির পরও দাপুটে সব শট খেলেছেন মাহমুদউলাহ। ওয়েগনারকে টানা দুটি হুক শটে ফেলেছেন গ্যালারিতে, নান্দনিক শটে টানা দুই চার বোল্টকে। পেরিয়ে যান নিজের আগের সেরা ১৩৬।
কিন্তু আরেক পাশে লিটন দাস, মেহেদী হাসান মিরাজরা রণে ভঙ্গ দিয়েছেন বাজে শট খেলে। সঙ্গী না পেয়ে দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় কাটা পড়েন মাহমুদউলাহ। অসাধারণ ইনিংসটি থামে ২১ চার ও ৩ ছক্কায় ২২৯ বলে ১৪৬ রানে। শেষ উইকেটের ক্যাচটি নিয়ে কিপার বিজে ওয়াটলিং পা রাখেন চূড়ায়। অ্যাডাম প্যারোরের ২০১ ডিসিমিসাল ছাড়িয়ে হয়ে যান নিউ জিল্যান্ড ইতিহাসের সেরা কিপার।
কিউইদের প্রথম ইনিংসের নায়ক ওয়েগনার ২৪ ওভার বল করে রান দিয়েছেন প্রায় সাড়ে চার করে। ৫ উইকেট নিতে প্রথমবার একশর বেশি রান খরচ করতে হয়েছে বোল্টকে। এই সবই বলছে প্রমাণ দিচ্ছে বাংলাদেশের ব্যাটিং প্রতাপের। কিন্তু সর্বনাশ হয়ে গেছে প্রথম ইনিংসে বাজে ব্যাটিংয়েই।