সৌদিতে নারী শ্রমিকদের হত্যা-নির্যাতন বন্ধের দাবি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
সৌদি আরবে নারী শ্রমিক নির্যাতন-হত্যা বন্ধ এবং প্রবাসী নারী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম। গতকাল শুক্রবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ বিক্ষোভ ও সমাবেশ করা হয়।
সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরামের কেন্দ্রীয় সভাপতি রওশন আরা রুশোর সভাপতিত্ব করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শম্পা মসুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন মহিলা ফোরামের ঢাকা মহানগর শাখার সদস্য রুকসানা আফরোজ আশা, নারী নেত্রী প্রীতিলতা, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি মুক্তা বাড়ৈ, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জুলফিকার আলী।
বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, সৌদি আরবে অমানুষিক নির্যাতনে নাজমা বেগম নামে মানিকগঞ্জের এক নারী শ্রমিক মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর এক মাস ২৪ দিন পরে গত অক্টোবর দেশে আসে নাজমার মরদেহ। সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে ১০ মাস আগে সিদ্দিক নামের এক দালালের মাধ্যমে এক লাখ ৮০ হাজার টাকার খরচ করে সৌদি আরবে যান নাজমা। হাসপাতালে পরিছন্নতাকর্মীর কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু নাজমা যে বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন সেখানে তিনি নির্যাতনের সম্মুখীন হন। বাড়ি মালিকের ছেলে তাকে নির্যাতন করতেন। পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও পাশবিক অত্যাচার চালাতেন। মৃত্যুর দু’দিন আগেও ফোন করে নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য স্বজনদের কাছে আকুতি জানিয়েছিলেন নাজমা। কিন্তু অর্থের অভাবে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি।
বক্তারা আরও বলেন, গত জুলাই মাস পর্যন্ত তিন লাখ নারী কর্মী সৌদি আরবে গেছেন। দুই বছরের চুক্তিতে যাওয়া নারী গৃহকর্মীরা মাসে বাংলাদেশি টাকায় ১৭ হাজার টাকা বেতন পান। চুক্তি অনুযায়ী গৃহকর্মীর বিনা খরচে সৌদি আরব যাওয়ার কথা থাকলেও কিন্তু দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ১০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা লেগে যায় সৌদি আরবে যেতে। বাংলাদেশের দরিদ্র, প্রান্তিক, সরল এবং শিক্ষাবঞ্চিত নারীরা ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর আশায় সৌদিতে কাজ করতে যান। কিন্তু বিদেশে পদে পদে তাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতন। নির্যাতনের শিকার হয়ে এ বছরে জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে গত আগস্ট মাসে একদিনেই ফিরেছেন ১০৯ জন। তাদের অনেকেই সেখানে শারীরিক মানসিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন।
গত বছর দেশে ফিরেছেন এক হাজার ৩৫৩ জন নারী শ্রমিক উলেখ করে বক্তারা বলেন, ফেরত আসা নারী শ্রমিকদের তথ্যমতে প্রবাসী নারী শ্রমিকদের ৬১ শতাংশ শারীরিক নির্যাতন ১৪ শতাংশ যৌন নিপীড়ন এবং ৫২ শতাংশ দীর্ঘ শ্রম, নির্যাতন জনিত অসুস্থতা ৬৩ শতাংশ, ৮৬ শতাংশ নারী শ্রমিক বেতন পান না অথবা নিম্ন বেতন পান। এসব কারণে তারা দেশে ফিরে আসেন। প্রবাসী শ্রমিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, তারা বিদেশে কাজ করতে নির্যাতন সইতে না পেরে সব হারিয়ে লাশ হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। সরকার প্রবাসী শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হলেও রেমিটেন্সের গল্প শোনান।
বক্তারা নাজমা হত্যার বিচার দাবি করেন সেই সঙ্গে এ হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিচারের আওতায় আনতে সরকারকে অবিলম্বে কূটনীতিক ও আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান। সমাবেশ শেষে সমাজতান্ত্রিক জাতীয় মহিলা ফোরামের একটি বিক্ষোভ মিছিল প্রেসক্লাব থেকে পল্টন অভিমুখে যাত্রা করে।