সোহরাওয়ার্দী থেকে শিশুপার্ক না সরায় হাই কোর্টের উষ্মা
এক দশকের বেশি সময় ধরে ‘স্বাধীনতার পক্ষের সরকার’ ক্ষমতায় থাকার পরও কেন বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জমি থেকে শিশুপার্ক না সরায় উষ্মা প্রকাশ করেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ।
বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে তা শোনানোরও তাগিদ এসেছে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কেএম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে।
৭ মার্চকে ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ ঘোষণার প্রশ্নে তিন ছর আগে জারি করা রুলের শুনানিতে বুধবার আদালত এই অভিমত দেয়।
বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক এফআরএম নাজমুল আহাসান বলেন, “সব জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণটি বাজানো উচিৎ, পাঠ্যপুস্তকে নিয়ে আসা উচিৎ। এখনকার প্রজন্ম তো জানে না, তাই নতুন প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটি বাজিয়ে শোনানো উচিৎ।”
এরপর কনিষ্ঠ বিচারক কেএম কামরুল কাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে শিশুপার্কটি এখনও না সরানোয় উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, “স্বাধীনতার পক্ষের সরকার এত বছর ধরে ক্ষমতায়, শিশুপার্কটি এখনও কি করে এখানে থাকে! শিশুপার্কটি করাই হয়েছিল বঙ্গবঙ্গবন্ধুর স্মৃতি ধ্বংস করার জন্য।”
সাবেক সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সময়ে ১৯৭৯ সালে রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা শিশুপার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। জিয়ার মৃত্যুর পর ১৯৮৩ সাল থেকে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ নামে পার্কটি বিনোদনকেন্দ্র হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ২০১৮ সালে পার্কটির নামফলক থেকে জিয়ার নাম সরানো হয়। ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় শাহবাগ শিশুপার্কের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের জন্য ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে শিশুপার্কটি বন্ধ রাখা হয়েছে।
এদিন রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী বশির আহমেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সাইফুল ইসলাম।
পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ যেহেতু আমাদের সংবিধানের অমূল্য অংশ, তাই এর পবিত্রতা, মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এই ভাষণটা শোনানো উচিৎ এবং ভাষণটি পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ।
“আদালত বলেছে, ৭ মার্চের ভাষণটিই আমাদের স্বাধীনতার প্রারম্ভিক ঘোষণা। এই ভাষণের মাধ্যমেই তিনি জাতিকে জানিয়ে দিয়েছিলেন আমাদের স্বাধীনতার প্রয়োজন। স্বাধীনতার জন্য আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।”
সে কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের স্থান চিহ্নিত করে সেখানে মঞ্চ স্থাপন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন, পাক হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের জায়গাটি চিহ্নিত করাসহ সরকার কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানাতে বলেছে আদালত।
আগামী মঙ্গলবার আবেদনকারীকেও একটি সম্পূরক আবেদন করতে বলা হয়েছে আদেশে।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বশির আহমেদের দায়ের করা এক রিট আবেদনে ২০১৭ সালের ২০ নভেম্বর রুল দিয়েছিল হাই কোর্ট।
একাত্তরে যে ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন, সেই ভাষণের দিন ৭ মার্চকে কেন ‘জাতীয় ঐতিহাসিক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয় রুলে।