সেপ্টেম্বরে ভয়ঙ্কর রূপ নিতে পারে ডেঙ্গু
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
মহামারি করোনাভাইরাসের মধ্যেই দেশে ভয়াবহ ভাবে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। বিগত দুই মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ব্যাপক হারে বেড়েছে। বিশেষ করে চলতি আগস্ট মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর ডেঙ্গু প্রজননের আদর্শ পরিবেশ থাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এটি সেপ্টেম্বর মাসেও অব্যাহত থাকতে পারে। এমনকি কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে আরও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণের আশঙ্কা রয়েছে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের প্রথম সাত মাসে যত ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, শুধু আগস্ট মাসেই তার প্রায় তিন গুণ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, জানুয়ারি মাসে ৩২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৯ জন, মার্চে ১৩ জন, এপ্রিলে ৩ জন, মে মাসে ৪৩ জন, জুনে ২৭২ জন, জুলাইয়ে দুই হাজার ২৮৬ জন এবং আগস্ট মাসে ৭ হাজার ৪৩২ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত ছয় মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৭২, যা জুলাই মাসে ছয় গুণ বেড়ে রোগীর সংখ্যা হয় দুই হাজার ২৮৬ জন। আর জানুয়ারি থেকে জুলাই ৭ মাসে মোট রোগীর সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় দুই হাজার ৬৫৮ জন। অন্যদিকে আগস্টের ৩০ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে সাত হাজার ৪৩২ জন। এ হিসেবে প্রথম সাত মাসের প্রায় তিন গুণ রোগী আগস্ট মাসে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
ডেঙ্গুর রোগীর সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, সোমবার নতুন ২৩৩ জন রোগীসহ চলতি বছরের মোট ১০ হাজার ৯০ জন ডেঙ্গু রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরমধ্যে ৮ হাজার ৮৯৫ জন রোগী চিকিৎসা শেষে ছাড়প্রাপ্ত হয়েছেন। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি হাসপাতালে সর্বমোট ভর্তি রোগী আছেন ১১৫০ জন। এরমধ্যে রাজধানী ঢাকার ৪১টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে একহাজার চারজন। আর ঢাকার বাইরে রোগী ভর্তি আছেন ১৪৬ জন। এছাড়া ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৪২ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। এরমধ্যে জুলাই মাসে ১২ জন এবং আগস্ট মাসে ৩০ জন মারা যান।
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে রোগী কিছুটা কমে ২৩৩ জনে নেমেছে। আগেরদিন রবিবার ২৫২ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য এসেছিল। সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গুতে নতুন আক্রান্ত হওয়া ২৩৩ জনের ২১৩ জনই ঢাকার বাসিন্দা।
রবিবার সেই তথ্য প্রকাশ করে সংস্থাটি জানায়, ঢাকায় ডেঙ্গু ভাইরাসের ‘ডেনভি-৩’ ধরনে মানুষ বেশি আক্রান্ত হচ্ছে এবং দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে মৃত্যুও বেশি হচ্ছে। বিসিএসআইআরের গবেষণাগারে ২০ জন ডেঙ্গু রোগীর নমুনা থেকে ভাইরাসের জিনবিন্যাস বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, তারা সবাই ডেঙ্গু ভাইরাসের ডেনভি-৩ ধরনে আক্রান্ত ছিলেন।
বিসিএসআইআর এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক আফতাব আলী বলেন, ডেঙ্গুর মিউটেশন সংক্রান্ত তেমন গবেষণা না থাকায় এসব মিউটেশনে ডেঙ্গু ভাইরাসের সংক্রমণের প্রভাব শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এ গবেষণার জন্য রাজধানীর শুধুমাত্র একটি হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে ডেঙ্গুর বিস্তৃতি জানার জন্য আরও অধিক সংখ্যক জিনোম সিকোয়েন্সিং করা প্রয়োজন।
ডেঙ্গু ভাইরাসের জীবন রহস্য উন্মোচনের ফলে সহজে এর চিকিৎসা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। মহামারীর মধ্যে এবার এ মৌসুমে জুলাই থেকে উদ্বেগ বাড়াতে থাকে ডেঙ্গু। গত মাসে ২ হাজার ২৮৬ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন, মৃত্যু হয় ১২ জনের।
প্রসঙ্গত, দেশে ২০১৯ সালে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল সবচেয়ে বেশি। সে বছর ৬৪ জেলায় ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যায়। আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়ানোর পাশাপাশি ১৪৮ জন মারা গিয়েছিলেন। ২০২০ সালে একহাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত এবং সাতজন মারা যান।
দক্ষিণাঞ্চল প্রতিদিন/ জে এফ জয়