সেতু নির্মাণে বেঁচে যাওয়া অর্থ ফেরত দিল জাপানি কোম্পানি
দক্ষিণাঞ্চল ডেস্ক
গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা ‘কালো ছায়া’ ফেলে জাপানি বিনিয়োগ এ দেশে বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলোতে। ওই হামলায় জাপানিরা আক্রান্ত হওয়ায় তার প্রভাব পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নির্মাণাধীন মেঘনা-গোমতী দ্বিতীয় সেতু প্রকল্পেও। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে নির্মাণ কাজ করে রীতিমতো ভেলকি দেখিয়েছে জাপানের তিন নির্মাণ কোম্পানি।
সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হলি আর্টিজানের ঘটনায় প্রায় ছয় মাস কাজ বন্ধ রাখে জাপানের তিন নির্মাতা কোম্পানি। এজন্য প্রকল্প মেয়াদ ৬ মাস বাড়ানোরও আবেদন করে তারা। কিন্তু সেই ৬ মাস তো দূরে থাক, আগের সময় এক মাস হাতে থাকতেই নির্মাণ শেষ করেছে তারা। কেবল তাই নয়, ‘ভেলকি’ দেখিয়েছে তিন সেতুর মোট নির্মাণ ব্যয় থেকে বেঁচে যাওয়া ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিয়েও।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশি প্রতিষ্ঠানগুলো যখন নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না করে উল্টো দফায় দফায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ানোর ‘ধান্দা’য় থাকে, সেক্ষেত্রে জাপানিরা তাদের ভেলকি দেখিয়েছে নির্ধারিত সময়ের আগে কাজ শেষ করে। অন্যদিকে প্রায় হাজার কোটি টাকা ফেরত দেওয়াও একটি জাপানি শিক্ষা।
সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, নির্ধারিত সময়ের প্রায় ৭ মাস আগেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহসড়কে কুমিলার দাউদকান্দির দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই সেতুর উদ্বোধন করবেন। এছাড়া একই সময়ে দ্বিতীয় মেঘনা সেতুও উদ্বোধন করা হবে। নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো মোট ৭৩৮ কোটি টাকা সরকারকে ফেরত দিয়েছে বলেও জানান তিনি।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত দ্বিতীয় কাঁচপুর সেতু গত মার্চ মাসে উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সেতু বিভাগ বলছে, চার লেনের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে যানবাহন এসে আগে পুরাতন মেঘনা-গোমতী সেতুতে একলেনে উঠতো। পুরাতন সেতুটি বেশি ঢাল এবং যানবাহনের ধীরগতির কারণে যানজটের আটকা পড়ে ভোগান্তিতে পড়তেন যাত্রী ও চালকেরা।
এক হাজার ৪১০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৭ দশমিক ৭৫ মিটার প্রস্থের দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতুর রয়েছে ১৬টি পিলার। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২ হাজার কোটি টাকা। আর পুরাতন মেঘনা-গোমতী সেতু পুনঃনির্মাণের জন্য ব্যয় হবে ৪০০ কোটি টাকা।
দ্বিতীয় মেঘনা-গোমতী সেতু উদ্বোধনের পর যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হলে শুরু হবে পুরাতন সেতুর পুনঃনির্মাণ কাজ। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প অনুযায়ী, ২০২০ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু তার বেশ কয়েকমাস আগেই নতুন সেতু নির্মাণ ও পুরাতন বিদ্যমান সেতুর সংস্কার কাজ শেষ হচ্ছে।
জাপানের আধুনিক প্রযুক্তি ও স্টিল ন্যারো বক্সগার্ডারের ওপর নির্মিত হয়েছে এই সেতু। এ ধরনের প্রযুক্তিতে এটাই বাংলাদেশ প্রথম সেতু। এর আগে ভিয়েতনাম ও জাপানে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।