সেই পদ্মা সেতুর মত দশা: জাবি ভিসির সঙ্গে বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি টেন্ডারের ভাগ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার যে অভিযোগ উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে উঠেছে, তা ‘পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ মতই অসার বলে মনে করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
বৃহস্পতিবার বিকলে সচিবালয়ে উপাচার্যের সঙ্গে এক আকস্মিক বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নিজের এই মনোভাবের কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলনের মধ্যেই বৃহস্পতিবার হঠাৎ ঢাকায় সচিবালয়ে উপস্থিত হন অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। বৈঠক শেষে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের উত্তর তিনি দেননি।
উপাচার্যের আসার কারণ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল সাংবাদিকদের বলেন, “উনি যেদিন জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে জয়েন করেছেন সেদিন থেকেই আমার সঙ্গে ফোনে কথা হয়, প্রায়ই উনি এখানে আসেন। নানা বিষয় নিয়ে আলাপ করি। এমনি কোনো স্পেশাল বিষয় ছিল না। এমনি আলাপ আলোচনা…।”
উপাচার্যের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়ে নানা গুঞ্জনের কথা জানিয়ে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “এই সম্পর্কে আমি কিছু জানি না। আমারা কিছু শুনিও নাই এ বিষয়ে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে কি না প্রশ্ন করলে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “এ বিষয়ে আলাপ হবে কেন? এটা একটা… অর্থ এখনও ডেসপাস হয় নাই, এখনও কন্ট্রাক্ট শুরু হয় নাই, এখনও তো কিছু হয়নি।
“অর্থ নিয়ে যে সমস্ত কাহিনী আমরা শুনতেছি- এগুলোতো এখনও সেই পদ্মা সেতুর মত দশা… আমার কাছে মনে হচ্ছে।”
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গতমাসে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।
এর মধ্যেই ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি রেজাওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে উপাচার্য ফারজানা ইসলামের কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এই প্রেক্ষিতে ওই দুজনকে সরতে হলেও তারা অভিযোগ অস্বীকার করে উল্টো অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। তারা বরেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি টেন্ডারের ভাগ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে জানতে পেরে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ওই চাঁদাবাজির সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা ছিল না।
অপসারিত হওয়ার আগে নিজেদের নির্দোষ দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লেখা এক চিঠিতে রাব্বানী বলেন, “জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ আপনার (প্রধানমন্ত্রী) কাছে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। উপাচার্য ম্যামের স্বামী ও ছেলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে ব্যবহার করে কাজের ডিলিংস করে মোটা অংকের কমিশন বাণিজ্য করেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঈদুল আজহার পূর্বে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেওয়া হয়।
“এ খবর জানাজানি হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি শুরু হয় এবং এরই পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য ম্যাম আমাদের স্মরণ করেন। আমরা দেখা করে আমাদের অজ্ঞাতসারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন তোলায় তিনি বিব্রতবোধ করেন। নেত্রী, ওই পরিস্থিতিতে আমরা কিছু কথা বলি, যা সমীচীন হয়নি। এজন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”
অন্যদিকে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সে সময় সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু শতাংশ (টাকা) নিবে। তারা এ বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিতও দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠিতে এ বিষয়ে যা লিখেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।”
এ বিষয়ে সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেছিলেন, অনিয়মের প্রমাণ পেলে উপাচার্যের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।