সুবর্ণচরে ধর্ষণের আসামি রুহুল আমিনের জামিনের আদেশ প্রত্যাহার
সুবর্ণচরে ভোটের রাতে ধর্ষণের আসামি রুহুল আমিনকে জামিন দিয়ে দেওয়া আদেশ প্রত্যাহার করে নিয়েছে হাই কোর্ট, ফলে বহিষ্কৃত এই আওয়ামী লীগ নেতার মুক্তি মিলছে না।
আসামি পক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে শনিবার ছুটির দিনে হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের বিচারকরা খাস কামরায় বসে আগের আদেশ প্রত্যাহারের (রিকল) সিদ্ধান্ত জানান।
এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায় ও অমিত তালুকদার উপস্থিত ছিলেন।
আসামি রুহুল আমিনের আইনজীবী মো. আশেক-ই-রসুলের মোবাইল ফোনে সংশ্লিষ্ট আদালতের কর্মকর্তা ফোন দিয়েও পাননি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ রায়।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেছেন, আসামি পক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করবেন তারা। সেই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে আগামী ২৫ মার্চ আদালত অবমাননার আবেদনও করা হবে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের পর নোয়াখালীর সুবর্ণচরে গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলার আসামি রুহুল আমিনকে গত সোমবার জামিন দিয়েছিল বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চ।
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ বলেছিলেন, “আসামির আইনজীবী রাষ্ট্রপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছেন। জামিন আবেদনে উল্লেখ আছে এনএক্স-১৭ নম্বর কোর্টের কথা। অর্থাৎ বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য ফাইল হয়েছে। ফলে আবেদনটির অনুলিপি গেছে ওই কোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তরে। যেদিন জামিন হয় সেদিন আসলে আমরা বুঝতেই পারিনি, কার জামিন হয়েছে।”
বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ আদালতের নজরে আনার পর আদালত তৎপর হয়।
জামিন আদেশ প্রত্যাহারের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার কার্যালয়ে বসে এ বিষয়ে বিস্তারিত সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, “আমাদের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে মাননীয বিচারপতিদ্বয়কে বিষয়টি অবগত করা হলে আজ মাননীয় দুজন বিচারপতি তাদের চেম্বারে বসে যে জামিন আদেশটি দেওয়া হয়েছিল, সে আদেশটি তারা প্রত্যাহার করেছেন। এটাকে রিকল করেছেন।
“এই আসামির জন্য যে জামিন হাসিল করা হয়েছিল আদালতকে ভুল বুঝিয়ে, সেটা বাতিল হয়ে গেল। অন্তর্বর্তীকালিন জামিন আর কার্যকর হল না। আমরা সমস্ত জায়গায় জানিয়ে দেব, যেন আগের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে আসামি জেল থেকে বেরুতে না পারে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল আসামি পক্ষের আইনজীবীর বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ তুলে বলেন, “এই মামলায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি যেগুলো আছে, ভিকটিমের যে বর্ণনা আছে, সেগুলো আবেদনে সন্নিবেশ না করে আদালতকে ভুল বুঝিয়ে এই আইনজীবী জামিন নিয়েছিলেন।”
এভাবে জামিন নেওয়া ‘আদালতের সাথে প্রতারণার শামিল’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “বিষয়টা আমরা প্রধান বিচারপতির নজরে আনব।
“সংশ্লিষ্ট আদালতের কাছে সাবমিশন করব ওই্ আইনজীবী বিরুদ্ধে যেন আদালত অবমাননার রুল জারি করা হয়। যেদিন উনারা নিয়মিতভাবে বসবেন সেদিন আদালতের কাছে গিয়ে আমি এ প্রার্থনা জানাব। আগামী ২৫ মার্চই গিয়ে আদালতের কাছে এই দরখাস্ত করবো। দরকার হলে এ আইনজীবীর বিরুদ্ধে বার কাউন্সিলে দরখাস্ত করা হবে।
“এছাড়া অন্যান্য মাননীয় বিচারপতিদের প্রতি আমাদের আকুল আবেদন থাকবে, যখন উনারা কোনো আবেদন দেখবেন, তখন যেন উনারাও বিষয়টি লক্ষ্য রাখেন। এক আদালতে মেনশন করে অন্য আদালতে মুভ করা আদালতের প্রতি প্রতারণার সামিল।”
রুহুল আমিন রুহুল আমিন রুহুল আমিন সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ছিলেন। ধর্ষণের আসামি হওয়ার পর তাকে বহিষ্কার করা হয় দল থেকে। তিনি চর জুবিলী ইউনিয়ন পরিষদের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সদস্য।
গত ৩০ ডিসেম্বর সুবর্ণচরের মধ্যবাগ্যা গ্রামে রুহুল আমিনের ‘সাঙ্গোপাঙ্গরা’ স্বামী-সন্তানকে বেঁধে রেখে চল্লিশোর্ধ ওই নারীকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ এসেছে। ভোটের পর রাতে এই ধর্ষণকাণ্ডে ব্যাপক আলোচনা ওঠে দেশজুড়ে।
আলোচিত এই মামলায় রুহুল আমিনসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ওই গৃহবধূর স্বামীর করা এই মামলার এজাহারে মোট নয়জনকে আসামি করা হয়েছিল। রুহুল আমিনকে আসামি করতে না পারায় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে হতাশা প্রকাশ করেছিলেন ওই নারী। পরে রুহুল আমিনকেও আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়।