December 24, 2024
ফিচার

সুন্দরবন বিশ্লেষণ

আলি আবরার

চোখ বন্ধ করে সুন্দরবন কথাটি মনে করলে প্রথমে যে দৃশ্যটি চোখে প্রথমে আসবে সেটি হলো একটি বিশাল সবুজ বন। কল্পনার সাথে অধিক পার্থক্য না থাকলেও বাস্তবে সুন্দরবনটি এমনি, এর থেকেও সুন্দর বলা চলে। সবুজ সুন্দরী গাছ দ্বারা ঘেরা বিভিন্ন জীববৈচিত্র সমৃদ্ধ এ বনটি বাংলাদেশ ও ইন্ডিয়ার মাঝে দেশ দুটির দক্ষিণ দিকে অবস্থিত। গঙ্গা, মেঘনা ও ব্রম্মপুত্রের প্রবাহ থেকে সৃষ্ট এ বদ্বীপটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ।  সুন্দরবনের প্রধান গাছ সুন্দরী হলেও এখানে আরো বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও উদ্ভিদ আছে। প্রতি বছর দেশী ও বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে এ অঞ্চলটি, বিশেষ করে শীতের সময়টিতে। তবে চলুন জেনে নেই সুন্দর বন সম্পর্কে খুঁটিনাটি ঃ  

  

এক নজরে সুন্দরবন 

  • মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। পশ্চিমবঙ্গে ৪২০০  বর্গ কিলোমিটার ও বাংলাদেশের খুলনা বিভাগের ভেতর বাকি ৬০০০ বর্গ কিলোমিটার। 
  • সুন্দরবনের প্রধান গাছ সুন্দরী বৃক্ষ। 
  • সুন্দরবনে ৪৫৩ ধরনের প্রাণীর বসবাস। এর মধ্যে আছে ২৯০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী। 
  • এটি ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে। 
  • সুন্দরবনের নাম সুন্দরী থেকে উৎপত্তি যেটি এসেছে সুন্দরী গাছের থেকে। 
  • সুন্দর বনের ভেতর মোট ৫৪ টি দ্বীপ আছে। 
  • এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ। 
  • এখানে সুন্দরী গাছ ছাড়াও গেওয়া। গরান ও কেওড়া গাছের উল্লেখযোগ্য অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। 
  • সুন্দরবনের মূল আকর্ষণ হল রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং অনন্য সুন্দর চিত্রা হরিণ। 

 

ইতিহাস 

ইতিহাস থেকে প্রথমে সুন্দরবনের অবস্থান জানা যায় ২০০-৩০০ শতাব্দীতে। মুঘল আমলে মুঘল সরকার সুন্দরবনের  বিভিন্ন অংশ নিকটবর্তী অধিবাসীদের কাছে ইজারা দিত। সম্রাট আকবরের সেনাদের থেকে রক্ষার জন্য অনেক দুস্কৃতিকারীরা এই বনে আশ্রয় নিয়েছিল। তাদের অনেককে বাঘের আক্রমণের সম্মুখীন হতে হয়েছে। তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অংশে ছোট ছোট ভবন তৈরি করেছিল যা পরবর্তীতে পর্তুগিজ দস্যু এবং ডাকাতদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে। ১৭ শতাব্দীতে। এছাড়াও ১৭ থেকে ১৯  শতাব্দীর ভেতরে সুন্দরবন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হয়েছে এবং এটি সংরক্ষণে তৎকালীন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথম ফরেস্ট ম্যানেজমেন্ট ডিভিশন চালু করেছিল। 

প্রাণী  ও বন্য বৈচিত্র্য 

২০১৫সালের সমীক্ষা থেকে জানা যায় সুন্দরবনে বর্তমানে মোট ১৮০ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার এবং এবং ৩০ হাজারের মতো  চিত্রা হরিণ আছে। এখানে মোট ৪৫৩ ধরণীর প্রাণী বৈশিষ্ট্যের বসবাস, যার মধ্যে ২৯০ প্রজাতির পাখি, ১২০ প্রজাতির মাছ, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী আছে। স্তন্যপায়ী প্রাণী গুলোর মধ্যে আছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, ছোট বন বিড়াল, বানর, চিতাবাঘ, ছোট মাছ ধরা বিড়াল, বন্য শুকর, বেজি, শেয়াল, উড়ন্ত শেয়াল, ও আরও কিছু প্রজাতির প্রাণী আছে।  এছাড়াও আছে নদীতে শুশুক। এ সকল প্রাণী বৈচিত্র্যের মধ্যে দুই ধরনের উভচর, ১৪ ধরনের সরীসৃপ এবং ৫ ধরনের স্তন্যপায়ী কে বিপন্ন ধরা হয়েছে। 

প্রত্যেক বছরই বিভিন্ন প্রজাতির নতুন নতুন প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে এই বন থেকে। 

পর্যটন 

প্রত্যেক শীতে এই অঞ্চলে নানান প্রজাতির রং-বেরংয়ের অতিথি পাখির দেখা পাওয়া যায় যেটা সুন্দরবনের জীববৈশিষ্ট্যেকে আরও সুন্দর করে তোলে। সুন্দরবনে শিকারিদের অত্যাচারে জীব ও প্রাণী বৈচিত্র যদিও হুমকির মুখে, বাংলাদেশ সরকার জীব ও প্রাণীর রক্ষার্থে এবং বন বৈচিত্র্য রক্ষার্থে নানান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তা ছাড়াও প্রত্যেক বৎসর বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের আগমন ঘটায় এখান থেকে বহুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে সরকার। শীতের সময় ও অতিথি পাখির আগমনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ার ও রিসোর্ট  এ লেগে থাকে ব্যবসার ধুম এবং প্রত্যেক বছরই সুন্দরবনকে আরো উন্নত ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য নানান কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। সুন্দরবনের পশু প্রাণী, গাছপালা ও বনজ বৈচিত্র এবং ছোটখাটো, নদ খাল-বিল ও জলপথ সুন্দরবন যাত্রা করে তোলে যেমন বৈচিত্র্যময় তেমনই নান্দনিক। সুন্দরবনের বিখ্যাত জায়গার মধ্যে আছে জামতলা সৈকত, হিরণ পয়েন্ট, করমজল, পুটনি দ্বীপ, দুবলার চর, তিনকোনা দ্বীপ, পক্ষীর চর ও আরও বিভিন্ন স্পট। এই জায়গাগুলোতে ভ্রমণের সময় জলপথে বোটে ভ্রমণ, ওয়াচ টাওয়ারে জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন ন্যাচারাল রিজার্ভএ রাখা রিজার্ভের হরিণ সহ নানান বন্যপ্রাণী খুব কাছ থেকে দেখা যায় তাছাড়াও বর্তমানে সুন্দরবনে বিভিন্নে পিকনিক স্পট আছে যেখানে পর্যটকরা অনেক আনন্দের সাথে ভ্রমণ করতে সক্ষম। 

অবদান 

সুন্দরবন বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্যের পাশাপাশি আরও নানান সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।প্রত্যেক বছর বর্ষার সময় নানান ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করে চলেছে এই সুন্দরবন। 

২০০৭ সালে সিডর ঝড়ের ফলে সুন্দরবনের প্রায় ৪০% ক্ষতির সম্মুখীন হয়। সুন্দরবন নানান বনজ উপাদান সরবরাহ করা থাকে এর মধ্যে আছে মধু, কাঠ, খনিজ  তেল, নন উড প্রডাক্টস, মোম, মাছ সহ আরও নানান জিনিস পত্র। সুন্দরবনের ভেতরে ও নিকটবর্তী বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করে প্রায় ৪০ লক্ষ মানুষ। ১৯৯৩ সালে সুন্দরবন সংরক্ষণের প্রথম খুলনায় ফরেস্ট সার্কেল গঠিত হয়। 

সুন্দরবনের বিখ্যাত জায়গার মধ্যে আছে জামতলা সৈকত, হিরণ পয়েন্ট, করমজল, পুটনি দ্বীপ, দুবলার চর, তিনকোনা দ্বীপ, পক্ষীর চর ও আরও বিভিন্ন স্পট। এই জায়গাগুলোতে ভ্রমণের সময় জলপথে বোটে ভ্রমণ, ওয়াচ টাওয়ারে জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ, বিভিন্ন ন্যাচারাল রিজার্ভএ রাখা রিজার্ভের হরিণ সহ নানান বন্যপ্রাণী খুব কাছ থেকে দেখা যায় তাছাড়াও বর্তমানে সুন্দরবনে বিভিন্নে পিকনিক স্পট আছে যেখানে পর্যটকরা অনেক আনন্দের সাথে ভ্রমণ করতে সক্ষম।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *