November 24, 2024
জাতীয়

সুনামগঞ্জের হাওরে শ্রমিক সংকট, বিপাকে কৃষক

সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান পাকা শুরু করলেও ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু জমিতে পুরো ধান পেকে গেছে। কিন্তু মহামারি নভেল করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধান কাটার শ্রমিক না আসায় এ সংকট দেখা দিয়েছে।

জেলা কৃষি বিভাগের উপ পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, ধান কাটার শ্রমিক আনতে ৬-৭টি জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা। ইতোমধ্যে শ্রমিক আসতে শুরু করেছে সুনামগঞ্জে।

ধান কাটার শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় নানা উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন। বালু শ্রমিক, পাথর শ্রমিকসহ যারা লক ডাউনের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের ধান কাটার আহবান জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যারা ক্ষেতে ধান কাটতে যাবেন তাদের সরকারি ত্রাণ দেওয়া হবে। রাতে
থাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ব্যবস্থা করা হবে।

সদর উপজেলার দেখার হাওরের কৃষক আলাউর রহমান বলেন, আমার ২০ (প্রায় ৭ একর) কিয়ার ক্ষেত আছে, সব ক্ষেত তো আমি একলা কাটতে পারতাম না, ধান কাটতে অইলে কামলা (শ্রমিক) লাগবো। কামলা তো পাওয়া যায় না। অন্যবার ৫০০ টেকা
কামলা পাওয়া গেলেও ইবরা (এবার) ৮০০-৯০০ টেকা দিও কামলা পাওয়া যায় না। বড় সমস্যাত আছি।

একই হাওরের কৃষক আতিক হাসান বলেন, হাওরের ধান পাকা শুরু অইছে, কিন্তু করোনা ভাইরাসের লাগি কামলা পাওয়া যায় না, ধানও কাটতাম পাররাম না। কেউ ডরাইয়া ক্ষেতও যাইতে চায় না। ইবার বাইরের ডিস্ট্রিক তাকি কামলা না আওয়ায় বড় বিপাকে পড়ছি।

ধরমপাশা উপজেলার সোনা মরল হাওরের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, ফলন তো ভালো হইছিল, এখন ধান কাটতে গিয়া বিপদে আছি, বেপারি (শ্রমিক) পাইতেছি না।

সিরাজগঞ্জে বেপারির সঙ্গে যোগাযোগ করছিলাম, কিন্তু করোনার ভয় আর গাড়ি না পাওয়ায় তারাও আসতেছে না। গত দুই দিন ধইরা মেঘও দিতাছে, ভয়ে আছি যদি বেশি মেঘ দেয় তাইলে হাওরের বাঁদ ভাইঙগা যাইবো।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. সফর উদ্দিন জানান, প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন জেলা প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক সুনামগঞ্জে ধান কাটতে আসতো। এবার করোনা ভাইরাসের কারণে শ্রমিক আসা কমে গেছে। তবে বোরো ধান কাটার জন্য আমরা পাবনা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ভোলা, ময়মনসিংহ, সিলেট,
নেত্রকোনাসহ কয়েকটি জেলার কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগযোগ করেছি শ্রমিক আনার জন্য। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ৩৪৪৩ জন ধান কাটার শ্রমিক আসছে। আরো ১২ হাজার ২৯৪ জন শ্রমিক কয়েকদিনের মধ্যে চলে আসবে। স্থানীয়ভাবে অন্য পেশার
লোকজনও ধান কাটা শুরু করেছে। আশা করছি শ্রমিক সংকট কিছুটা হলেও কমে যাবে কয়েকদিনের মধ্যে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের কৃষি বিভাগের ৯২টি কম্বাইন হার্ভেস্টার, ১৯টি রিপার সচল আছে। নতুন করে সরকার থেকে ৪০টি হার্ভেস্টার ও ২৭টি রিপার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এগুলো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজে লাগানো হবে।

জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল আহাদ বলেন, কৃষকদের উৎসাহ দিতে আমি নিজে হাওরে গিয়ে ধান কাটছি, অন্য পেশার শ্রমিকদের ধান কাটায় আনার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। শ্রমিক প্রণোদনা হিসেবে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১০ হাজার পিস সাবান, ১০ হাজার পিস বিস্কুট বিতরণ করা হবে। কৃষকদের সুবিধার্তে কামারের দোকান ও ওয়ার্কশপ খোলা রাখতে বলা হয়েছে, যেন প্রয়োজনে কৃষিযন্ত্র মেরামত করা যায়।

বৃষ্টি শুরু হওয়ায় দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের বলা হচ্ছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে অন্য জেলার শ্রমিককে আনার জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ করা হয়েছে।

জেলা সির্ভিল সার্জন ডা. মো. শাসম উদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। যেহেতু সুনামগঞ্জ অঞ্চল একটি বোরো আবাদের এলাকা, দেশের খাদ্য চাহিদার একটি অংশ এখান থেকে আসে, তাই কৃষকদের তো ধান কাটতেই হবে। তবে অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব মেনে। তাদের স্বাস্থ্যগত দিকটাও মনে রাখতে হবে।

এবার সুনামগঞ্জের ১১টি উপজেলার ছোট-বড় ১৫৪টি হাওরে দুই লাখ ১৯ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ মেট্রিক টন ধান।

শেয়ার করুন:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *