‘সুখী নেপাল, সমৃদ্ধ নেপাল’ কর্মসূচিতে সহযোগিতার আশ্বাস রাষ্ট্রপতির
সুখী নেপাল, সমৃদ্ধ নেপাল’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে সবরকমের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
বুধবার কাঠমান্ডুতে নেপালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টির কো-চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দহল (প্রচণ্ড) আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলে এ বিষয়ে আলোচনা হয়।
পরে রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব মো. জয়নাল আবেদীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাক্ষাতের সময় রাষ্ট্রপতি দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ককে চমৎকার উল্লেখ করে গণতন্ত্রের পথে দেশটির অভিযাত্রার জন্য অভিনন্দন জানান।”
‘সুখী নেপাল, সমৃদ্ধ নেপাল’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশও ভিশন ২০২১ এবং ২০৪১ গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে দু’দেশই পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্য দিয়ে লাভবান হতে পারে।
সাবেক মাওবাদী নেতা প্রচণ্ড দু’বার দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন।
কাঠমান্ডুর ফেয়ারফিল্ড ম্যারিয়ট হোটেলে প্রচণ্ড সাক্ষাৎ করতে আসলে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশ ও নেপাল বিভিন্ন সবসময় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ে একই মনোভাব পোষণ করে এবং একে অপরকে সমর্থন করে। তিনি আশা করেন, ভবিষ্যতে এ সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।
প্রেস সচিব জানান, সাক্ষাতের সময় প্রচণ্ড বলেন, বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক চমৎকার। এই দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বহুপাক্ষিক পর্যায়ে উন্নীত করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, বিশেষ করে বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্প্রসারণের মাধ্যমে এই সম্পর্ক কয়েকগুণ বাড়ানো যেতে পারে।
এসময় প্রচণ্ড সড়ক, রেল, আকাশপথে দু’দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন বলে জানান প্রেস সচিব জয়নাল।
কাঠমান্ডুর ফেয়ারফিল্ড ম্যারিয়ট হোটেলে বুধবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন নেপাল পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চেয়ারপার্সন গনেশ প্রসাদ তিমিলসিনা। ছবি: প্রেস উইং,বঙ্গভবন
এর আগে নেপাল পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চেয়ারপার্সন গনেশ প্রসাদ তিমিলসিনা আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রেস সচিব জানান, সাক্ষাৎকালে রাষ্ট্রপতি বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নেপালের জনগণ বিশেষ করে বুদ্ধিজীবীদের সমর্থন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এজন্য রাষ্ট্রপতি নেপালের সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ এবং নেপালের দূরত্ব খুবই কম। দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো উচিত। সেজন্য দু’দেশের আইনপ্রণেতাদের মধ্যে সফর বিনিময় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে গত বছর ৩৭ হাজার পর্যটক নেপাল ভ্রমণ করেছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশেও চমৎকার পর্যটন এলাকা রয়েছে। এসব স্থান নেপালের মানুষ পরিদর্শন করতে পারে।
গনেশ তিমিলসিনা বালাদেশ ও নেপালের মধ্যে বাণিজ্য বৈষম্যের কথা উল্লেখ করলে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাংলাদেশ ১৭০ মিলিয়ন মানুষের একটি বড় বাজার। বাণিজ্য ভারসাম্যে আনতে চাইলে বাংলাদেশ নেপালকে সহযোগিতা করতে আগ্রহী। শুল্কমুক্ত সুবিধা নিয়ে আলোচনা করলে দু’দেশের বাণিজ্য বাড়ার অনেক সম্ভাবনা রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন রাষ্ট্রপতি।
তিমিলসিনা বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে নেপালের সম্পর্ক পুরনো ও আন্তরিক। দু’দেশের সংস্কৃতির মধ্যে মধ্যে মিল রয়েছে। বাংলাদেশে যেমন সব ধর্মের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে নেপালেও তেমনি সবাই একত্রে বসবাস করে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও নেপাল উভয় দেশই জলবায়ু পবির্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা করছে অথচ দুটি দেশের কেউই এর জন্য দায়ী নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দু’দেশ একত্রে কাজ করতে পারে এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে জোরালো ভূমিকা রাখতে পারে।
ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির চেয়ারপার্সন গনেশ বাংলাদেশে প্রায় ৫-৬ হাজার নেপালি শিক্ষার্থী অধ্যায়ন করছে উল্লেখ করে এই সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, দু’দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে সংসদীয় সফর এবং অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে আরও সমৃদ্ধ করা যায়।
সাক্ষাতের সময় সংসদের হুইপ আতিউর রহমান আতিক, সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস, রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব সম্পদ বড়ুয়া, সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম শামীম উজ জামান উপস্থিত ছিলেন।